সুনামগঞ্জ থেকে : রিয়াজ, জুয়েল, ফারজানা, রুবিয়া, জাহিমা, সুহেল, সামছুদ্দিনদের বয়স তিন থেকে এগোরোর মধ্যে। এক টুকরো মাংসের জন্য প্রায় শত মাইল পাড়ি দিয়েছেন তারা।
সাত শিশুকে নিয়ে তাদের মা পারভীন আক্তার সুনামগঞ্জ পৌর এলাকায় এসেছেন এক টুকরো কোরবানির মাংসের আশায়।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের উমেদশ্রী গ্রাম থেকে সুনামগঞ্জ কোরবানির মাংস সংগ্রহের জন্য ১০০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে শহরের নুতনপাড়া এলাকায় এসেছেন পারভীন।
সোমবার (১২ আগস্ট) কোরবানির দিন শহরে এসে নুতনপাড়া জনস্বাস্থ্য অফিসের সামনে তারা বসে আছেন কোরবানির মাংসের জন্য। কিন্তু তখন কেবল মাংস কাটাকাটির কাজ চলছে ভেতর বাড়িতে।
তাই খোলা হচ্ছে না ধনীদের বাড়ির ফটক। ছোট গেটের সামনে একজন দাঁড়িয়ে আছেন যাতে বাইরের কেউ ভেতরে যেতে না পারে। কাটাকাটি শেষ হলেই গেট খুলে বাইরে অপেক্ষমানদের এক টুকরো করে মাংস দেওয়া হবে।
পারভীন জানান, তাদের গ্রামে কোরবানি দেন খুব কম মানুষ। তাই গ্রাম থেকে যেটুকু মাংস পাওয়া যায় সেটুকু দিয়ে একবেলাও ঠিক করে রান্না হয় না। তাই সকাল সাতটা থেকে মুখ চেয়ে আছেন ধনীদের।
একই জায়গায় ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াকুব উল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিমা (১১)। সে জানায়, আগে থেকে গেটের সামনে দাঁড়ালে মাংস পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।
রঙ্গারচর ইউনিয়নের সফেরগাঁও গ্রামের দিনমজুর সেলিম মিয়া বলেন, ভোর থেকে পরিবারের লোকজন দিয়ে ৭০ টাকা দিয়ে ইজিবাইক চড়ে স্বপরিবারের শহরে এসেছেন। ঘরে চাল ডাল নুন তেল সব আছে কিন্তু মাংস নেই।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মাংস সংগ্রহ করে রাতে সবাই মিলে খাবেন। গ্রাম থেকে শহরে কোরবানির মাংস নিতে আসা এসব মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারের ধানের দাম কম।
সে তুলনায় গরুর দাম বেশি। তাই গতবারের তুলনায় এবার গ্রামে কোরবানি কম হয়েছে। সন্তানদের মুখে এক টুকরো মাংস তুলে দেওয়ার জন্যই তারা শহরে এসেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সরকার ঈদের বিশেষ ভিজিএফ চাল দিয়েছে। কিন্তু বাড়িবাড়ি ঘুরে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করা ছাড়া দরিদ্র মানুষের বিকল্প উপায় নেই। বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় ধনীরা এগিয়ে এলে ধনী-গরিব সবাই কোরবানির মাংস খেতে পারতেন।