ঠাকুরগাঁও থেকে : ঠাকুরগাঁও শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায় বাবু ইসলামের মরদেহ হিন্দু ধর্মানুযায়ী সৎকার হবে নাকি ইসলাম ধর্ম মতে দাফন হবে এ নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। লাশ নিয়ে দুই ধর্মের দুই স্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যের মধ্যে শুরু হয় টানা-হেঁচড়া।
অবশেষে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে দিনভর দফায় দফায় বৈঠক শেষে লাশ পেয়েছেন মুসলিম শরিয়তে বিবাহিত স্ত্রী আসমা খাতুন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এফিডেভিটের মাধ্যমে স্ত্রী আসমা খাতুনের পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু। মৃত বাবু ইসলাম পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর গ্রামের মৃত নুর ইসলামের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ১০ বছর আগে দিনাজপুর থেকে ঠাকুরগাঁও এসে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে জগদীশ চন্দ্র রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বাবু ইসলাম নাম ধারণ করেন। এরপর তিনি ঠাকুরগাঁও শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিক আলীর মেয়ে আসমা খাতুনকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে বাবু ইসলাম মারা যান। এ খবর পেয়ে তার প্রথম স্ত্রী মিনা রাণী (৩৭) দিনাজপুর থেকে ঠাকুরগাঁও শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায় চলে আসেন। এসে তিনি জানতে পারেন তার স্বামী জগদীশ চন্দ্র রায় নাম পরিবর্তন করে বাবু ইসলাম হয়ে মুসলিম ধর্মের মেয়ে আসমা খাতুনকে বিয়ে করেছেন।
এরপর প্রথম স্ত্রী মিনা রাণী হিন্দু ধর্মানুযায়ী তার স্বামীর লাশ সৎকারের দাবি করেন। কিন্তু এতে আপত্তি জানান দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা খাতুন ও তার পরিবারের সদস্যরা।
পরে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু, মহিলা কাউন্সিলর দ্রৌপদী দেবী আগরওয়ালা, ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেনসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা উভয় পরিবারের সঙ্গে আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে মরদেহ ইসলাম ধর্ম মোতাবেক দাফনের সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর এফিডেভিটের মাধ্যমে প্রথম স্ত্রী মিনা রাণী তার স্বামীর মরদেহ দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে মাগরিবের নামাজ শেষে শহরের মুন্সিপাড়া জামে মসজিদে জানাজা পড়ে মুন্সিপাড়া পারিবারিক গোরস্থানে বাবু ইসলামের মরদেহ দাফন করা হয়।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে ও দুই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় এবং ইসলাম শরিয়ত মোতাবেক দাফন সম্পন্ন করা হয়।