মোঃ মিনহাজ আলম: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন কহর পাড়া গ্রামের মমিনুল ইসলামের ছেলে লামিম। খেলতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল নতুন আলোর আসায়। আলো এসেছে কিন্তু লামিম ফিরেছে এক চোখে অন্ধকার নিয়ে।
গত ৪ আগস্ট জুলাই আন্দোলনের উত্তাল দিনে, মাকে খেলতে যাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বের হয় লামিম। কিন্তু তার গন্তব্য ছিল রাজপথ। সৈরাচার পতনের ১ দফা দাবিতে লাখো মানুষের কণ্ঠের সাথে মিশে গিয়েছিল লামিমের ছোট্ট কণ্ঠও।
কিন্তু হঠাৎ রাজপথে শুরু হয় ছাত্রলীগ আর পুলিশের হামলা। সাথে মুহুর মুহুর গুলি, টিয়ারশেলের বিশাক্ত ধোঁয়া, তীব্র শব্দ, আর রক্তঝরা বাস্তবতা। সেই বিশাক্ত ধোঁয়ায় একপলকেই থেমে যায় লামিমের চোখের দৃষ্টি। পুলিশের ছোড়া গুলি এসে লাগে তার বাম চোখে।
পরে আসপাশের মানুষ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন হাসপাতালে চার বারের অপারেশনের পর প্রথমে সামান্য দেখতে পেলেও, ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে তার চোখের দৃষ্টি। আগের মতো এখন আর সেই বাম চোখে কিছুই দেখতে পায় না।
৭ম শ্রেণির এই কিশোর আজ অপেক্ষায় একটি হারানো চোখের আলো ফিরে পাওয়ার আসায়।
লামিম বলেন, আমি টিভিতে মোবাইলে যখন দেখতাম আমার বড় ভাইয়েরা বোনদের নির্মম ভাবে মারা হচ্ছে, এগুলো আমার ভালো লাগছিলো না। পরে গত ৪ আগস্ট আমি বাসায় আম্মুকে খেলতে যাওয়ার নাম করে বের হই। এরপর যোগদেই আন্দোলনে। পরে আন্দোলন চলাকালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যায়। শুরু হয় পুলিশ আর ছাত্রলীগের হামলা।
পরে আমরা যখন আনসার ক্যাম্পের সামনে আসি ওখানে আমার পাশে এক ভাইয়ের পায়ে গুলি লাগে তখন সে আমাকে বলে ভাইয়া আমার পা থেকে গুলিটা একটু বের করে দাও তো। পরে আমি গুলি বের করে সামনে তাকাতেই পুলিশের ছোরা গুলি আমার বাম চোখে লাগে। এরপর ওখানে থাকা ভাইয়েরা আমাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
লামিম আরো বলেন, আমি শুরুর দিকে চোখে ভালোই দেখতাম কিন্তু এখন আর আগের মত দেখতে পাইনা। আমার চলতে ফিরতেও অনেক কষ্ট হয়। ধুলো-বালি, বেশি রোদ, ধোঁয়া কোনো কিছুই সহ্য হয় না চোখ জ্বলা পোড়া করে।
ছেলেকে নিয়ে অনেক সপ্ন ছিলো বাবা মার। কিন্তু এক পলকেই সপ্ন ভেঙে যায় তাদের। বর্তমান সরকারের কাছে ছেলের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে লামিমের বাবা মমিনুল ইসলাম জানান, গত ৪ আগস্ট দীর্ঘক্ষণ লামিম কে না পেয়ে আমরা খুঁজাখুজি করি।
এর একপর্যায়ে হাসপাতাল থেকে কল আসে। বলে যে আপনার ছেলের গুলি লাগছে হাসপাতালে আছে। পরে আমরা গিয়ে দেখি আমার ছেলের চোখে ব্যান্ডেজ করা চোখে গুলি আছেই। এরপর দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যাই সেখানেও কোনো চিকিৎসা পাইনি। পরে দিনাজপুরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চার বারের অপারেশনের পরে বুলেট বের হয়।
এরপর শুরুতে আমার ছেলে তেমন দেখতে পেলেও এখন আর পায় না। ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম ডক্টর বলেছে সে আর বাম চোখে দেখতে পাবে না। তবে দেশের বাইরে চিকিৎসা করালে হয়তো ঠিক হতে পারে। তাই সরকারের কাছে আমার আবেদন আমার ছেলের যাতে দেশের বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়।