মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:২৬:৩২

ঘটলো বিতর্কিত ঘটনা, কর্মকর্তাকে নিতে উল্টো পথে স্টেশনে ফিরল ছেড়ে যাওয়া ট্রেন!

ঘটলো বিতর্কিত ঘটনা, কর্মকর্তাকে নিতে উল্টো পথে স্টেশনে ফিরল ছেড়ে যাওয়া ট্রেন!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনে ঘটেছে এক বিতর্কিত ঘটনা। বিভাগীয় এক রেল কর্মকর্তাকে নিতে চলন্ত ট্রেন ফিরিয়ে আনা হয় স্টেশনে। সেই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। ট্রেনটি যখন ফের স্টেশনে আসে, তখন সেই কর্মকর্তা ‘নরমাল ট্রেন’ বলে সেটিতে উঠতে অনীহা প্রকাশ করেন। এতে যাত্রীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়লে তিনি সেই ট্রেনেই উঠতে বাধ্য হন।

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনে এমন ঘটনা ঘটে। পঞ্চগড় থেকে পার্বতীপুরগামী ট্রেনটি ঠাকুরগাঁও রোড স্টেশন অতিক্রম করার কিছুক্ষণ পরই থামিয়ে দেওয়া হয়। কারণ ট্রেনে উঠতে পারেননি লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবু হেনা মোস্তফা আলম। তাকে নিতেই ট্রেনটি আবার স্টেশনে ফিরে আসে।

ট্রেনের যাত্রী আমাজ হোসেন বলেন, সোমবার বিকেল ৪টা ২৬ মিনিটে ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায় পার্বতীপুরগামী কাঞ্চন সেমি আন্তঃনগর ট্রেনটি। ছেড়ে গিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার যাওয়ার পর হঠাৎ ট্রেনটি পেছন দিকে যেতে থাকে। এতে করে মুহূর্তেই ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ট্রেনটি ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনে ফিরে এলে আমরা জানতে পারি এক বিভাগীয় কর্মকর্তা ট্রেনে যাত্রা করার উদ্দেশ্যে ট্রেনটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যাত্রীরা।

তবে ওই কর্মকর্তা ট্রেন ফিরিয়ে আনার পরে লোকাল ট্রেনে যাত্রা করতে অস্বীকৃতি জানালে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ট্রেনের যাত্রীরা। ঘটনাটি কেন্দ্র করে স্টেশন এলাকা জুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং যাত্রীরা বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে জনসাধারণের রোষানলে পরে ট্রেনে উঠতে বাধ্য হন রেল কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা আলম।

যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, একজন কর্মকর্তার জন্য পুরো ট্রেন ফিরিয়ে আনা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তিতে থাকি, অথচ একজন বড় কর্মকর্তা ট্রেনে উঠতে না পারলেই পুরো ট্রেন ঘুরে আসে।

ঘটনার ভিডিও ও ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় যাত্রীরা ট্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে স্লোগান দিচ্ছেন।

ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে অনেকে চিৎকার করে বলেন, আমরা যাত্রীরা কি মানুষ না? একজন সাহেব উঠতে না পারলে পুরো ট্রেন ঘুরে আসে এটা কেমন নিয়ম?’ কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও করতে থাকেন, কেউ স্লোগান দিতে থাকেন রেল প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

অনেকে পোস্টে লিখেন, বড় সাহেবের জন্য ট্রেন ঘুরে এলো, কিন্তু দেশের ট্রেনব্যবস্থা ঘুরছে না।

রোড রেলস্টেশনে থাকা পারভেজ ও লিমন বলেন, ট্রেন ফিরিয়ে আনার ঘটনা এই অঞ্চলে আগে কখনও ঘটেনি। ঠাকুরগাঁও রোড স্টেশনের ইতিহাসে এটি এক অভূতপূর্ব ঘটনা।

রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ট্রেন একবার ছেড়ে গেলে কোনো যাত্রী বা কর্মকর্তার জন্য ফেরানো যায় না। এটা রেলওয়ে আইন ও নিয়মের পরিপন্থি।

ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন পরিদর্শনে আসেন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা আলম। ঠাকুরগাঁও থেকে তার দিনাজপুরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আগে থেকে এই বিষয়ে আমাদেরকে জানানো হয়নি। লালমনিরহাট অফিসের নির্দেশে ট্রেনটি আবারও স্টেশনে ফিরে আসে।

তিনি আরও বলেন, ফিরিয়ে আনার পরে লোকাল ট্রেন হওয়ায় তার ট্রেনটি পছন্দ হয়নি। তাই তিনি পরবর্তী ট্রেনে যাত্রা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যাত্রীদের ক্ষোভের কারণে তিনি সেই ট্রেনেই যাত্রা করেন।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা আলম বলেন, ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন পরিদর্শনে এসে আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাই। ওই স্টেশনের কর্মকর্তাদের জানিয়ে রাখি পরের ট্রেনে এলে আমাকে যেন জানানো হয়। আমি সেই ট্রেনে করেই দিনাজপুর যাব। কিন্তু স্টেশনের কর্মকর্তারা আমাকে না জানিয়েই ঠাকুরগাঁও থেকে ছেড়ে যাওয়া কাঞ্চন ট্রেনটি ছেড়ে দেয়, এরপর ৫ কিলোমিটার চলেও যাওয়ার পরেও তারা সেটা ব্যাক নিয়ে আসে। আমি জানতাম না যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন তারা আবার ব্যাক করেছে। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে