আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? শান্ত হও, শান্ত হও। বের হয়ে এসো গিউলিয়া। গিউলিয়া আসো।’ ইতালির ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা দশ বছরের এক মরণাপন্ন শিশুর খোঁজ চলছিল এভাবে। বুধবার রাতভর চেষ্টার পর পার্বত্য শহর পেসকারা দেল ট্রন্টোর একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে সেই শিশুকে শেষ পর্যন্ত জীবিত উদ্ধার করা গেছে।
উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ার ১৭ ঘণ্টা পর জীবিত অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তা দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন উদ্ধারকারীরা। এমনি করে জীবনের আহ্বান নিয়ে ধ্বংসস্তূপে চলছে উদ্ধার তৎপরতা।
একের পর এক মরদেহ উদ্ধারের পর যখনই ধ্বংস্তূপের নিচে জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে তখনই এভাবে আশাবাদী হয়ে উঠছেন উদ্ধারকারীরা। যদি সেখানে জীবনের আর্তি শোনা যায়, সেই আশায় এখনও জীবিতদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে ইতালি।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ইতালির ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২৪৭ জনের প্রাণহানির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সাড়ে তিনশোরও বেশি মানুষ।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সময় বুধবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ইতালির বিভিন্ন শহর। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ৬.২ মাত্রার ওই ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র ছিল রোমের উত্তর-পূর্বের রেইতি নামক একটি স্থান। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূমির ১০ কিলোমিটার গভীরে। ৬.২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর থেমে থেমে অনুভূত হওয়া আফটার শকে বারবার কেঁপে উঠে ইতালি। সবচেয়ে তীব্র আফটার শকের মাত্রা ৫.৫।
বুধবার রাতভর অভিযানের পর বৃহস্পতিবারও চলমান রয়েছে উদ্ধার তৎপরতা। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিতদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন কয়েক হাজার উদ্ধারকারী। যন্ত্রপাতির পাশাপাশি অনেকে খালি হাতেও চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধার তৎপরতা। শক্তিশালী আফটার শকের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
ইতালির পার্বত্য এলাকা আমাত্রিস, আকুমোলি ও পেসকারা দেল ট্রন্টো এলাকায় এখনও অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব এলাকায় ভারি উত্তোলন যন্ত্র দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন ৪ হাজার ৩শ’রও বেশি উদ্ধারকারী। ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই শিশু। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ভূমিকম্পে ইতালির আমাত্রিস শহরটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি কার্যত ধ্বংসস্তূপের শহরে পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, অন্তত ২৪৭ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা গেছে। আরও অনেকে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই সাবধানতার সঙ্গে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
রোমের উত্তর-পূর্বের শহর আমাত্রিসের মেয়র সার্জিও পেরোজ্জি জানান, ‘অর্ধেক শহরটাই নাই হয়ে গেছে।’ অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সার্জিও পেরোজ্জি জানিয়েছেন, ‘শহরের অনেক অট্টালিকা মাটিতে গুড়িয়ে গেছে। অনেক গ্রাম গায়েব হয়ে গেছে। অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শনও ধ্বংস হয়ে গেছে।’
আকুমোলির মেয়র স্তেফানো পেত্রোচ্চি ভূমিকম্পের ভয়াবহতায় কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা আমাদের চিন্তার চেয়েও ভয়াবহ। বাড়ি-ঘর ধসে পড়েছে, মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছেন। প্রাণের ধ্বনি যেন থেমে গেছে।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি সর্বাত্মক উদ্ধার তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে তিনি স্বেচ্ছাসেবক ও জনপ্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন যারা মধ্যরাতে খালি হাতে আটকে পড়াদের উদ্ধার কাজ শুরু করেছিলেন। সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান, বাংলা ট্রিবিউন
২৫ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম