আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অব্যাহত সমালোচনার মুখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন দেশের সেনাবাহিনীকে। নওয়াজের বার্তা, হয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, নয়তো বাকি বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।
তবে এ হুঁশিয়ারিতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মানতে নারাজ দেশটির সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ। খবর ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের।
বরং শরিফের নির্দেশে যাতে পাকিস্তানের সেনারা হতাশ না হয়, সেজন্য পাল্টা ভারতকেই হুমকি দিয়েছেন জেনারেল রাহিল শরিফ। তিনি জানিয়েছেন, ভারতকে উপযুক্ত জবাব দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত পাক সেনাবাহিনী। যে কোনও মুহূর্তে ভারতকে তাদের হামলার জবাব দেবে তারা। কাশ্মীর নিয়ে অযথা মিথ্যা কথা বলে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পেতে চাইছে ভারত।
সরকারের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানি গণমাধ্যম সম্প্রতি জানায়, সমালোচনার মুখে পড়ে পরপর বৈঠকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শরিফ। প্রতিটি বৈঠকেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, সচিব ছাড়াও সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর উচ্চপদস্থ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন নওয়াজের ভাই তথা পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও।
গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় সরকার ও সেনা, আইএসআই কর্তাদের মধ্যে। এরপরই সেনাবাহিনীকে পাকিস্তান সরকার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়, নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে পাক সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা যেন তাতে নাক না গলায়। জঙ্গিদের মদত দেওয়া আর চলবে না।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আইএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল রিজওয়ান আখতার ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাসির জানজুয়া প্রতিটি প্রদেশে গিয়ে সেনা ও গুপ্তচর সংস্থার কর্তাদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেবেন। পাঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন শরিফ। রাওয়ালপিন্ডির সেনা আদালতে মুম্বাই হামলার বিচার ফের শুরু করতে বলেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের নির্বাচিত কোনও সরকারই সেনার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস দেখাতে পারেনি। নওয়াজ শরিফকেই ক্ষমতাচ্যুত করে মসনদ দখল করেছিলেন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশারফ। সেই শরিফ এমন উল্টো সুর গাইছেন কেন? বিশেষজ্ঞদের মত, যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে, যে কোনও সময় আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার আশঙ্কা করছে পাকিস্তান।
সেক্ষেত্রে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়বে। তাই কিছুটা সক্রিয় হয়ে আমেরিকা-সহ প্রথম সারির দেশগুলির রোষ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে তারা। ওই বৈঠকে শাহবাজের সঙ্গে আইএসআই-এর ডিজির রীতিমতো ঝগড়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। যা থেকে স্পষ্ট, নওয়াজের দল কতটা ঝুঁকি নিয়ে সেনার সঙ্গে টক্কর নিতে চাইছে। এর ফলে যে কোনও সময় পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থান হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
সবচেয়ে চমকে দিয়েছে পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রী আইজাজ চৌধুরির ভূমিকা। বৈঠকে সেনা ও বেসামরিক কর্তাদের সামনে তিনি একটি প্রেজেন্টেশন দেন। সেখানে দেখানো হয়েছে, পাকিস্তান দ্রুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। চীন আপাতত পাশে থাকলেও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাপ দিচ্ছে।
প্রেজেন্টেশন শেষ হতেই আইএসআই ডিরেক্টর কী করণীয়, সে সম্পর্কে জানতে চান। আইজাজ চৌধুরীর স্পষ্ট জবাব, 'জইশ, মাসুদ আজহার, লস্কর-ই-তৈয়বা, হাফিজ সাঈদ ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে।'
আইএসআই প্রধান রিজওয়ান আখতার প্রস্তাব দেন, 'প্রয়োজন হলে যে কাউকে সরকার গ্রেফতার করুক।' দায় এড়ানো ও সেনা-সরকারের মধ্যকার অবস্থানের সংঘর্ষ নিয়ে পাকিস্তানের নেতারাও দ্বিধাবিভক্ত। অনেকে মনে করছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ভারতের কাছে নতিস্বীকার করা হবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে একঘরে হওয়ার জন্য শরিফকেই দায়ী করছেন বিরোধীরা।
০৭ অক্টোবর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস