আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর দেওয়া প্রথম ভাষণে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন বললেন, ‘আমি দুঃখিত৷ আমরা নির্বাচনে জিততে পারিনি। আমরা যে মূল্যবোধ ও লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিলাম তাতে বিজয়ী হতে পারিনি৷’ তিনি বলেন, ‘এটা কষ্টকর৷ এই ব্যথা দীর্ঘ সময় ধরে থাকবে৷’
ত্রিশ বছর ধরে মানুষ তাকে দেখছে, তবুও তাকে কেউ ঠিকভাবে চেনে না বলে ভোটারদের ধারণা৷ জীবনীকাররা বলেন, এর কারণ হলো হিলারির জটিল ও কখনো-সখনো পরস্পরবিরোধী ব্যক্তিত্ব৷
অর্ধেকের বেশি মার্কিনি হিলারি ক্লিন্টনকে অস্বচ্ছ, এমনকি কপট বলে মনে করেন৷ কিন্তু তার জীবনীকারদের মধ্যে হিলারি সম্পর্কে এক আশ্চর্য মতৈক্য দেখা যায়৷ তাদের মতে, হিলারি হলেন পরিশ্রমী, নাছোড়বান্দা, দুই বিরোধী দলের অভিমত সম্বলিত, বিশ্লেষক মনোবৃত্তির, মধ্যমপন্থি মনোভাবের, সুশৃঙ্খল এক ব্যক্তিত্ব যিনি রক্ষণশীল এবং কখনো-সখনো একটু উদ্ধত৷
এক জীবনীকার কারেন ব্লুমেনথাল হিলারিকে ‘নার্ড ছাত্র’ বা ছাত্রীদের সঙ্গে তুলনা করেছেন৷ বলেছেন, হিলারির তার স্বামী বিল ক্লিন্টন কিংবা বারাক ওবামার মতো ক্যারিসমা নেই৷ ‘‘বস্তুত উনি কিছুটা বোরিং,’’ বলেছেন ব্লুমেনথাল৷
বিশিষ্ট বামপন্থি পত্রিকা ‘দ্য নেশন’-এর লেখক রিচার্ড ক্রাইটনার বলেছেন, মার্কিনিরা পরিশ্রমী মানুষদের পছন্দ করে বটে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা হিলারিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চায়৷ হিলারি যে সাম্প্রতিক মার্কিন ইতিহাসে সব ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মধ্যে জরিপে সবচেয়ে নেতিবাচক ফলাফল করে থাকেন, অথচ বিশ বারের বেশি অ্যামেরিকার সবচেয়ে প্রশংসনীয় মহিলা হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন, তার কারণ সম্ভবত মার্কিনিদের এই দ্বিবিধ মনোভাব৷
হিলারি বস্তুত গোড়ায় রিপাবলিকান ছিলেন৷ তার কর্মপদ্ধতি ও লাইফস্টাইল বিশেষভাবে রক্ষণশীল, বলে হিলারির ব্রিটিশ জীবনীকার জেমস ডি. বয়েজের ধারণা৷ তার এই মধ্যমপন্থি, আপসের মনোভাবের ভালো-মন্দ দুই দিকই আছে, বলেন বয়েজ৷
তিন লেখকেরই অভিমত যে, শিশুদের সুরক্ষা, নারী অধিকার, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা, সামাজিক ন্যায় ও একটি যুক্তযুক্ত ও কিছুটা কঠোর বিদেশনীতির ক্ষেত্রে হিলারি পিছু হটবেন না৷ কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ারের স্বার্থে হিলারি নরম হয়ে যাবেন বলেই ক্রাইটনারের ধারণা৷ ইরাক যুদ্ধের সপক্ষে তিনি সে কারণেই ভোট দিয়েছিলেন৷ ব্লুমেনথালও মনে করেন যে, সেনেটে হিলারি ডেমোক্র্যাট ও কনজারভেটিভ দু’পক্ষেরই মতামত নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বটে, কিন্তু তিনি যে সঠিক কী চান, তা বোঝা মুশকিল৷
বয়েজের উত্তর হলো, হিলারি সর্বাগ্রে চান একান্ততা, প্রাইভেসি৷ প্রকাশ্য মঞ্চে তিনি তাঁর স্বামী, কিংবা বারাক ওবামা, এমনকি তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কোনোদিনই স্বস্তি বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি৷ তার ই-মেল কেলেংকারির পিছনেও এই একান্ততার কামনা আছে বলে বয়েজ-এর অভিমত৷ হিলারি ‘‘অবিশ্বাস্যরকম বুদ্ধিমতী, কিন্তু মাঝেমধ্যে অতিমাত্রায় বোকার মতো কাজ করে বসেন,’’- বলেও মনে করেন ব্লুমেনথাল৷ ডয়েস ভেলে
১০ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এস