রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ০১:৩৯:১০

তিন কট্টরপন্থীকে নিয়োগের ঘোষণা ট্রাম্পের!

তিন কট্টরপন্থীকে নিয়োগের ঘোষণা ট্রাম্পের!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ‘ইসলাম এক ধরনের ক্যান্সার৷’ এমনই মন্তব্য করে বিশ্বজুড়ে ঝড় তুলেছিলেন যে ব্যক্তি, তাঁকেই হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর কথা ভাবছেন আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সেই ব্যক্তির নাম মাইকেল ফ্লিন৷

সূত্রের খবর, এককালে মার্কিন সেনার উচ্চপদে থাকা ফ্লিনকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করতে চলেছেন ট্রাম্প৷ যে খবর প্রকাশ্যে আসার পরই বিতর্কের ঝড় উঠেছে আমেরিকাজুড়ে৷ সরব মানবাধিকার সংগঠনগুলিও৷ তবে, সব থেকে বড় বিষয় ট্রাম্পের এই ‘পছন্দ’চিন্তায় ফেলে দিয়েছে আমেরিকার বন্ধুরাষ্ট্র গুলিকেও!

২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বারাক ওবামার থেকে ওভাল অফিসের দায়িত্বভার নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ আপাতত তিনি ব্যস্ত রয়েছেন নিজের ‘টিম’ সাজাতে৷ এই পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই ট্রাম্প টাওয়ার থেকে ভেসে আসছে নিত্যনতুন নাম৷ তবে, এবার যে নামটি ভেসে এল তার ওজন পিছনে ফেলে দিল আগের সব বিতর্ককে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল থাকাকালীন ইরাক এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ফ্লিন৷

পরবর্তীকালে ডিফেন্স ইনটেলিজেন্স এজেন্সির মাথায় বসানো হয় তাঁকে৷ যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর সাফল্যকে সম্মান জানালেও তাঁর কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে৷ সমালোচনার মুখে পড়তে শুরু করে তাঁর মুসলিম-বিরোধী কট্টর অবস্থানও৷

পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে শেষ পর্যন্ত ২০১৪-এ ডিরেক্টর পদ থেকে সরিয়ে দিতে হয় ফ্লিনকে৷ যদিও, এতে হিতে বিপরীত হয়৷ প্রচলিত রীতির উল্টো পথে হেঁটে, এক জন প্রাক্তন সেনা কর্তা হওয়া সত্ত্বেও সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন তিনি৷ সরাসরি ওবামা প্রশাসনকে দুষে অভিযোগ করেন,‘ইসলামি কট্টরবাদ সম্পর্কে তাঁর নীতি মনঃপুত না হওয়াতেই তাঁকে পদ থেকে সরানো হয়েছে।’

গোটা ঘটনায় ফ্লিনের উপর বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রাক্তন সেনা অফিসারদের একটা বড় অংশ৷ অ্যাডমিরাল মাইকেল মুলেন তো তাঁকে ফোন করে এমনও বলেন যে,‘তোমার এই কীর্তিকলাপের জন্য সেনার উপর থেকে হোয়াইট হাউসের ভরসা চলে যাবে৷’যদিও, তাতেও দমেননি ফ্লিন৷

একের পর এক মুসলিম-বিরোধী মন্তব্য করেছেন৷ আক্রমণ করেছেন ওভাল অফিসকে৷ কখনও বলেছেন,‘মুসলিম দেশগুলিতে অবশ্যই সমস্যা রয়েছে৷ আমরা নিশ্চয়ই খ্রীস্টানদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াইনি!’কখনো আবার বলেছেন,‘আমেরিকা দেশটা মধ্যপন্থী আর সোশ্যালিস্টদের মাঝে ফেঁসে গিয়েছে৷’তবে, ফ্লিনের সব থেকে বড় কীর্তি অবশ্যই তাঁর রাশিয়া যাত্রা৷

গত বছর তিনি মস্কোয় ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি রাশিয়ান চ্যানেলের অনুষ্ঠানে যোগ দেন৷ পুতিন এবং তাঁর সহাস্য ছবি ঝড় তোলে মার্কিন মুলুকে৷ যার জবাবে মাইকেল ফ্লিন বলেন,‘তিনি রাশিয়ান এবং মার্কিন চ্যানেলের মধ্যে কোনও ফারাক দেখতে পান না৷’

এই পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, এমন লোককে যে ট্রাম্পের মনে ধরবে তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে! একদিকে, মুসলিম-বিদ্বেষ, অন্যদিকে রাশিয়া-প্রীতি। যেমন ট্রাম্প, তেমনই ফ্লিন৷ সেই কারণেই বোধহয় ভোটের আগে ট্রাম্পের হয়ে ময়দানে দেখা যায় প্রাক্তন এই সেনা কর্তাকে৷ ট্রাম্পের প্রচার পর্বে হিলারিকে জেলে ভরার যে বিতর্কিত স্লোগান উঠেছিল, অনেকের মতে তার নেপথ্যেও ছিলেন এই ফ্লিনই৷

এহেন মাইকেল ফ্লিনই এবার যাবেন হোয়াইট হাউসে৷ নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়ে৷ আইএস দমন থেকে চিনা নীতির জবাব, সব ক্ষেত্রেই তিনি পরামর্শ দেবেন প্রেসিডেন্টকে৷ এই খবর দুশ্চিন্তায় ফেলেছে মার্কিন নাগরিকদের একটা অংশকে৷ কারণ, এতদিনে অনেকেরই জানা হয়ে গিয়েছে, মানবাধিকার নিয়ে বিশেষ একটা মাথা ঘামান না ফ্লিন৷ তাঁর কাছে অপরাধীকে শাস্তি দেয়াই শেষ কথা৷ যে কোনও উপায়ে৷ তবে, ট্রাম্পের প্রশাসনে এমন লোকের আগমন কি খুব একটা বিস্ময়ের? প্রশ্নটা উঠতেই পারে।-এই সময়

২০ নভেম্বর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে