সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০২:২৪:১১

‘একজন বিচারক দেশকে বিপদের দিকে নিয়ে যাবেন; বিশ্বাস করতে পারছি না’

‘একজন বিচারক দেশকে বিপদের দিকে নিয়ে যাবেন; বিশ্বাস করতে পারছি না’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাত মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা ফেডারেল কোর্টে স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর আদালতের ওপর  চটেছেন ট্রাম্প। এমনকি আদালতের আদেশকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্রের  মাটিতে সন্ত্রাসী হামলার দায়িত্ব নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি। রবিবার তিনি এ নিজের এ অস্বীকৃতির কথা জানান। রবিবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘একজন বিচারক আমাদের দেশকে এমন বিপদের দিকে নিয়ে যাবেন- এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না। যদি কিছু ঘটে যায়, তাহলে তার জন্য তাকে এবং আদালত ব্যবস্থাকে দায়ী করুন। বাজে!”

ট্রাম্প বলেন, “হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে আমি নির্দেশনা দিয়েছিলাম, আমাদের দেশে আসা লোকজনকে যেন খুব ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। আদালত এটাকে খুব কঠিন করে তুলেছে।”

এই টুইটের মধ্য দিয়ে মূলত আদালতের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়লেন ট্রাম্প। এর আগে রবিবার একই ইস্যুতে কথা বলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি বলেন, সরকারের অন্য দুটি শাখার সমালোচনার পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে। এখানে ওই বিচারকের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়নি।

এদিকে ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে আদালতে দেওয়া রুলের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করেছে দেশটির একটি আদালত। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা জারির পর শুক্রবার সিয়াটলের একটি আদালত এ নিষেধাজ্ঞাকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে তা স্থগিত করেছিল। এর স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন।

শনিবার শেষ রাতের দিকে ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে তা পুনর্বহালের আবেদন জানায়। আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের এ আবেদন খারিজ করে দেন।

খারিজের আদেশে আদালত জানিয়েছেন, চূড়ান্ত শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। হোয়াইট হাউস ও যুক্তরাষ্ট্রকে আরও যুক্তি-প্রমাণ হাজির করার জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

আপিলে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এটা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে খর্ব করেনি, এতে নির্দিষ্ট দেশকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট আপিলে উল্লেখ করেছে, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের ক্ষমতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই।

শুক্রবার ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতের রুলের পর সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন। ওই দিন রাতেই দেশটির জাস্টিস ডিপার্টমেন্টে জানিয়েছিল, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে।

মুসলিমপ্রধান সাত দেশের নাগরিকদের প্রবেশ নিয়ে ট্রাম্পের আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছিলেন, এ ধরনের আইনি রুলিংয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্র খারাপ ও বিপজ্জনক মানুষে ভরে যেতে পারে।

এর আগে ট্রাম্প টুইটারে জানিয়েছিলেন, তথাকথিত বিচারক আইনের প্রয়োগ স্থগিত করেছেন। ট্রাম্প আরও জানিয়েছিলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হবে।

এরপর শনিবার ফ্লোরিডায় এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা জয়ী হবো। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা জয়ী হবো’।

যুক্তরাষ্ট্রমুখী অভিবাসন সীমিত করতে ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। আদেশ অনুযায়ী, আগামী চার মাস যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকবে। সিরীয়দের জন্য এই আদেশ পরবর্তী নির্দেশের আগ পর্যন্ত বহাল থাকবে। ৩ মাস বন্ধ থাকবে সাত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি। ট্রাম্পের নির্বাহী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দ্বৈত-নাগরিক এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়া (গ্রিন কার্ড হোল্ডার) ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ওই আদেশ কার্যকর হবে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি।
০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে