বুধবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০৪:১৮:২২

ফেসবুকে ছয় নামে উদয়ন, খুন করেও চালু রাখে বাবার প্রোফাইল

ফেসবুকে ছয় নামে উদয়ন, খুন করেও চালু রাখে বাবার প্রোফাইল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফেসবুকের পোস্ট দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়েছিল তদন্তকারীদের ‘মার্সিডিজ থেকে ল্যাম্বারগিনিতে আপডেট হচ্ছি৷ জীবন মানেই ক্ষমতা, আভিজাত্য এবং আধিপত্য!’ উদয়ন ভন রিচথোফেন মেহরা নামের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এই স্ট্যাটাস আপডেট দিয়েছে সিরিয়াল কিলার উদয়ন দাস৷ সঙ্গে কমলা রঙের গাড়িতে বসে তার একটি ছবি৷ পিছনে শোরুমের দেওয়ালে স্পষ্ট ল্যাম্বারগিনির লোগো৷ নিচে ধোপদুরস্ত পোশাকে স্মিত হাসিতে দেখা যাচ্ছে উদয়নকে।

না জানলে এই ছবি আর তার সঙ্গে উদয়নের দাবিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করে নেবে যে কেউ৷ ঠিক যেমনটা করেছিল বাঁকুড়ার আকাঙ্ক্ষা শর্মা৷ ফেসবুকে সিরিয়াল কিলার উদয়নের নানারকম ভুয়া স্ট্যাটাস দেখেই ভুলেছিল সে৷ আর পা দিয়েছিল উদয়নের পাতা ফাঁদে৷ তদন্তকারীরা এখন দেখছেন আকাঙ্ক্ষার মতো আর কোনও মেয়েকে উদয়ন এভাবে ফাঁসিয়েছিল কি না।

ভোপাল এবং রায়পুরের পুলিশ ইতিমধ্যেই উদয়ের ফেসবুক অ্যাকাউণ্ট ঘেঁটে সেই তথ্য বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ অন্যদিকে, আকাঙ্ক্ষার বাবা-মা এদিন অভিযোগ করেছে, মেয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট থেকে মাঝে মধ্যেই তোলা হত মোটা অঙ্কের টাকা৷ ওই টাকা উদয়নই তুলেছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

তদন্তকারীদের ধারণা, ফেসবুক আপডেট দেওয়ার জন্য বিলাসবহুল হোটেলে, বারে সময় কাটাতো উদয়ন এবং আকাঙ্ক্ষা৷ সেজন্যই প্রচুর টাকার দরকার পড়ত তাদের৷ সে জন্যই আকাঙ্ক্ষাকে চাপ দিয়ে তার অ্যাকাউণ্ট থেকে টাকা তোলাত উদয়ন৷ তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছে, শুধু একটা নয়, এমন অন্তত পাঁচ থেকে ছ’টা ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউণ্ট খুলে নিজের সম্পর্কে হাজারো ভুয়া তথ্যের সাম্রাজ্য খুলে বসেছিলো সিরিয়াল কিলার উদয়ন দাস৷

জীবনে কখনও বিদেশে যায়নি বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে যে উদয়ন, সে-ই ফেসবুকে গোটা বিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছে৷ কখনও ‘স্ত্রী’ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্যারিসে ছুটি কাটিয়েছে৷ কখনও আবার জার্মানির রাস্তায় চালিয়েছে মার্সিডিজ গাড়ি৷ কখনও স্রেফ ট্যাটু করাতে গেছে মস্কোয়৷ কখনও আবার ‘দাদু’ স্টিভ ভন রিচথোফেন মেহরার সঙ্গে পার্টি করেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়।

আসলে বাবা বীরেন্দ্র মেহরা, দাদু স্টিভের নামে ওই ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউণ্টগুলি চালাত নিজেই৷ এছাড়াও নিজের নামে ছিল আরও অনেকগুলি ভুয়া অ্যাকাউণ্ট৷ কোথাও সে জন শেরিডন কোথাও আবার নিখিল অরোরা মুখার্জি৷ কখনও পুশকিন স্ট্যাসজিউসকা কখনও আবার রায়ানসালে৷ তবে, পুলিশ জেনেছে, উদয়ন ভন রিচথোফেন মেহরা নামের অ্যাকাউণ্টটিই বেশি ব্যবহার করত সে৷

কারণ ওই অ্যাকাউণ্টের মাধ্যমেই উদয়ন যোগাযোগ রেখেছিল বাঁকুড়ার আকাঙ্ক্ষা শর্মার সঙ্গে৷ ওই অ্যাকাউণ্টে উদয়ন নিজেকে কখনও রাষ্ট্রসংঘের কর্মী কখনও বা মার্কিন বিদেশ দফতরের কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়েছে৷ এমনকী নিউ ইয়র্কের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করার কথাও জানিয়েছে ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টে।

এখানেই শেষ নয়, আকাঙ্ক্ষার নামেও একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট চালাত উদয়ন৷ সেটির নাম ছিল আকাঙ্ক্ষা উদয়ন মেহরা৷ সেখান থেকেই আকাঙ্ক্ষার হয়ে নানারকম পোস্ট করত উদয়ন৷ এমনই একটি পোস্টে আকাঙ্ক্ষার অ্যাকাউন্টে লেখা হয়েছে, ‘আমরা দু’জন টম আর জেরির মতো৷ আমরা সামনের দিকে এগিয়েই চলেছি৷ কারণ নিজের মর্জি মাফিক বাঁচার হিম্মত আছে আমাদের৷’ পোস্টটি করা হয়েছে ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর৷ অথচ পুলিশের হিসাবে আগস্টেই আকাঙ্ক্ষাকে খুন করেছিল উদয়ন৷

শুধু আকাঙ্ক্ষাকেই নয়, ফেসবুকে বাবাকেও একইভাবে বাঁচিয়ে রেখেছিল উদয়ন৷ বাবার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেই অ্যাকাউন্ট থেকে সে কমেন্ট করত নিজের অ্যাকাউন্ট ল্যাম্বারগিনি গাড়ি নিয়ে উদয়নের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বাবা বীরেন্দ্র দাসের অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে, ‘স্পিড লিমিট মেনে গাড়ি চালাও৷ সিট বেল্ট বাঁধতে ভুলো না৷’ উত্তরে উদয়ন তার বাবাকে লিখেছে ‘নিশ্চয়ই৷ লাভ ইউ ড্যাড৷’ তখন আবার বীরেন্দ্র দাসের প্রোফাইল থেকে কমেণ্ট করা হয়েছে ‘আমি পুরনো ফ্যাশনের মানুষ তুমি আধুনিক৷ সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ৷’

তদন্তকারীরা বলছেন, উদয়নের কুকীর্তির একটা বড় অস্ত্র ছিল এই ফেসবুক৷ ফেসবুকে রীতিমতো নিজের মর্জিমাফিক একটা পরিবার বানিয়ে নিয়েছিল সে৷ যেখানে কল্পিত দাদু আছে৷ বাবা জার্মানবাসী৷ তিনি আবার আর এক কল্পিত সংস্থা মেহরা কর্প-এর প্রতিষ্ঠাতা৷ তদন্তকারীদের মতে, ২০১১ সালে রায়পুরে বাবা-মাকে খুন করার আগে থাকতেই ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট চালাত উদয়ন৷ কারণ একটি পোস্টে সে লিখেছে, ২০০৭ সালে আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়।-সংবাদ প্রতিদিন

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে