আন্তর্জাকিত ডেস্ক: প্যাকেজের বাইরে বাড়তি টাকার দাবিতে রোগীর পরিবারকে এক চিকিৎসক ‘প্রাণনাশে’র হুমকি দিয়েছেন বলে রাজ্য ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনে’ অভিযোগ জমা পড়েছে।
অভিযুক্ত চিকিত্সক ‘হিপজয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট’ বিশেষজ্ঞ বলে পরিচিত অর্থোপেডিক সার্জন সন্তোষ কুমার। ২০১৬ সালে পড়ে গিয়ে বাঁ দিকের ‘ফিমার বোন’ ভেঙেছিল হুগলির বলাগড় থানার ঘোষপুকুরের বাসিন্দা ৬২ বছরের শেখ ইসরাইলের। শ্রমজীবী হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ওয়াকার নিয়ে হাঁটাহাঁটি শুরু করলেও পরে তিনি হাঁটার ক্ষমতা হারান। গত জানুয়ারিতে সন্তোষের কাছে চিকিত্সা শুরু করেন ইসরাইল।
ইসরাইলের পরিবারের দাবি, দেড় লক্ষ টাকার প্যাকেজে দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার করার কথা বলেন সন্তোষ। ইসরাইলের ভাই শওকত জানান, অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে বেরিয়ে চিকিত্সক জানান, ওটি’তে আলো কম, পরিকাঠামো ঠিক নেই। অস্ত্রোপচার মাঝপথে বাতিল হয়। রোগীর পরিবারকে ফিরিয়ে দেয় অর্ধেক টাকা। পরে নাগেরবাজারের আইএলএস হাসপাতালে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকার প্যাকেজে ফের অস্ত্রোপচার করা হয়। তার মাসখানেক পর চিকিত্সক বাড়তি টাকা দাবি করেন (ফোনে কথোপকথনের অডিও ক্লিপ রয়েছে এবেলা’র কাছে)।
শওকত বলেন, ‘‘কোথায় টাকা পাব? কেঁদে ফেলেছিলাম। দাদা শয্যাশায়ী। তার পরেও ডাক্তার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছেন। কমিশনে বিচার চাইছি।’’ সন্তোষ কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগ ঠিক নয়। ওই টাকা বাকি ছিল। তাই চেয়েছি। পারিশ্রমিক ছাড়াই চিকিত্সা করেছি।’’ রোগীর পরিবারের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের আরও টেপ তিনি
(এক চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর ভাইয়ের কথোপকথন। চিকিৎসক সন্তোষ কুমার বলে দাবি রোগীর পরিবারের)
চিকিৎসক: দেখুন, আপনাকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। ৫ ঘণ্টার ওটি হলেও দু’ঘণ্টার চার্জ নিয়েছি। টাকা আপনাকে দিতে হবেই। ইমপ্লান্টের দাম দেখুন কমিয়ে নিয়েছে।
রোগীর ভাই: আপনাকে না দেওয়ার কোনও কারণই ছিল না।
চিকিৎসক: না না। আপনাকে দিতেই হবে। আপনি ভুল বলছেন। না দেওয়ার অপশনই নেই। আপনাকে দিতেই হবে আরও ২০ হাজার টাকা। আমি আপনাকে না দিতে বলিইনি।
রোগীর ভাই: দিতে পারতাম। কিন্তু…
চিকিৎসক: না না। দিতেই হবে। পারতে হবে। না হলে আপনি বেঁচে যেতে পারবেন না আমার কাছ থেকে। আপনি যেতেই পারবেন না।
রোগীর ভাই: যদি অপারেশন সাকসেস হয়ে যায়, তারপর না হয় দেব।
চিকিৎসক: না না। তাহলে সাকসেসই হবে না। সাকসেস হবে না। দিতে আপনাকে হবেই। না হলে আপনি বেঁচে যেতে পারবেন না।
রোগীর ভাই: এই মুহূর্তে স্যার যা অবস্থা….
চিকিৎসক: তা আমি কী করতে পারি? what can I do?
রোগীর ভাই: স্যার, এটা বলছেন এই মুহূর্তে?
চিকিৎসক: হ্যাঁ। তা what can I do? আমি ওখানে রাতে ৫ ঘণ্টা অপারেশন করেছি। আমার টিমের ৫-৬ জন অপারেশন করেছে। ড্রিল করতে গিয়ে আমার আঙুল ফুটো হয়ে গিয়েছে। সব কিছুর পর বলছেন টাকা দেবেন না?
*** (পাশে উল্লিখিত অডিও কথোপকথনের সত্যতা যাচাই করেনি ‘এবেলা’। করা সম্ভবও নয়। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। নীচে তারই নির্বাচিত অংশ)পাঠাবেন জানিয়েছিলেন। কিন্তু পাঠাননি। ফোনও আর ধরেননি।
প্রশ্ন: রোগীর কাছ থেকে প্যাকেজের বাইরে জোর করে ২০ হাজার টাকা চাইছেন। কেন? এই রেকর্ড কি ঠিক?
চিকিৎসক: সেলাই কাটানোর সময় আমাদের চেম্বারে ওটা রেকর্ড করেছে। আমরা এক পয়সাও ডক্টরস্ ফি চার্জ করিনি। কোনও সার্জেন্ট, অ্যানাসথেসিস্ট ফি’জ নেই। ইমপ্লান্ট এসেছে আমেরিকা থেকে। ইমপ্লান্টের দাম ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নার্সিংহোম খরচ ৬০ হাজার টাকা। আমি এক পয়সাও ডক্টরস ফি’জ নিইনি। আমি দু’বার অপারেশন করলেও এক টাকাও নিইনি। ইমপ্লান্টের বিল ডাব্বা দিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে পেশেন্টের পুরো অডিও রেকর্ডিং আছে। উনি ইমপ্লান্টের জন্য দেড় লাখ টাকা দিলেন। পরে নার্সিংহোমের জন্য দিলেন ৫০ হাজার। বাকি ছিল ২০ হাজার টাকা। তিনি বললেন, সেলাই কাটানোর সময় বা এক মাস পরে তিনি বাকি ২০ দিয়ে দেবেন। কিন্তু তারপর এসে তিনি বললেন আমি দিতে পারব না। উনি না দিলে সে টাকা আমাকেই দিতে হবে।
প্রশ্ন: বাড়তি টাকা চাইছেন কেন আপনি?
চিকিৎসক: বাকি ছিল তাই। আমার কাছে আরও অডিও রেকর্ডিং আছে। আপনি আমার কাছে আসুন। শোনাব।
প্রশ্ন: কখন যাব?
চিকিৎসক: ঠিক আছে। শুনুন না, আমার যা বলার ছিল বলে দিয়েছি। ....আমার বক্তব্য হচ্ছে, আমি চ্যারিটেবল অপারেশন করেছি।
প্রশ্ন: একজন চিকিৎসক কি বলতে পারেন যে বাড়তি ২০ হাজার টাকা না দিলে রোগী সারাজীবন দাঁড়াতে পারবে না? বেঁচে বাড়ি ফিরতে পারবেন না। এটা বলা কি ঠিক?
চিকিৎসক: না, না, সেটা বলা হয়নি।
প্রশ্ন: রেকর্ড রয়েছে। এটা কি কোনও চিকিৎসকের বলা উচিত?
চিকিৎসক: না না। বলাই হয়নি। রেকর্ড থাকলে কী হবে?
প্রশ্ন: এটা বলা উচিত?
চিকিৎসক: দেখুন আপনার কাছে যে একটা রেকর্ড রয়েছে, সেটা প্রোভোক করে কিছু একটা রেকর্ড করে নিয়েছে। রেকর্ড তো প্ল্যানিং করে করা হয়েছে না?-এবেলা
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস