বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ০৩:৪৫:০০

‘মুসলমান মেয়েদের বিপদ বাড়বে’ ; মারাত্মক হুমকি মন্ত্রীর

‘মুসলমান মেয়েদের বিপদ বাড়বে’ ; মারাত্মক হুমকি মন্ত্রীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  :  তিন তালাক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ই 'অসাংবিধানিক'! সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পরেই প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা মন্ত্রিসভার গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। তিনি  বলেন, রায় দেওয়ার অধিকার নেই সুপ্রিম কোর্টের। ফের  মারাত্মক বার্তা মন্ত্রীর। বললেন, ‘রায় যাই হোক এটা আইন নয়। তাই তালাক আটকানো যাবে না। মুসলমান সমাজে তালাক দেওয়া চলবে, মুসলমান মেয়েদের বিপদ বাড়বে’।

বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করে মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারে আদালত অন্যায্য ভাবে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টেই পাল্টা আবেদনের ভাবনার কথা জানিয়েছে জমিয়তের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা।

রাজ্যের অপর এক সংখ্যালঘু মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা আদালতের রায়কে স্বাগত জানালেও উল্টো মত সিদ্দিকুল্লার। রেজ্জাক মনে করেন, এই রায়ে মুসলমান মেয়েরা খুশি। অন্য দিকে, সিদ্দিকুল্লার দাবি, মুসলমান মেয়েদের বিপদ বাড়বে। তিনি মনে করিয়ে দেন, মুসলমান পুরুষের সঙ্গেই ঘর করতে হবে মেয়েদের।

বুধবার মহাজাতি সদনের অ্যানেক্স হলে বৈঠকে জমিয়তের রাজ্য ওয়ার্কিং কমিটি ঠিক করে, ২৮ অগস্ট মহাজাতি সদনেই প্রতিনিধি সভা করে প্রতিবাদের কৌশল ঠিক করবে জমিয়তে।

আর বৃহস্পতিবার ফোনে বলেন, আদালতের রায় কার্যকর হবে না। এটা আইন নয়। কোর্ট কোনও নির্দেশ দিতে পারে না। শরিয়তের নির্দেশ মেনেই চলবে ইসলাম।

তিনি নিজের মতো করে বলে চলেছেন। কিন্তু দল এখনও নীরব। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যপাধ্যায়ের সমর্থন রয়েছে কী? এই প্রশ্নের উত্তরে সিদ্দিকুল্লা বুঝিয়ে দেন দলের নীরবতাকে সমর্থন হিসেবে ধরে নিয়েছেন তিনি। সিদ্দিকুল্লা বলেন, ''এখন এই বিষয়ে দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলার ক্ষমতা আমাদের সামনে নেই, কিন্তু একটা কথা বলতে পারি, মুখ্যমন্ত্রী বরাবর বলেছেন ধর্মীয় স্বাধীনতায় কেউ কোনও হস্তক্ষেপ করুক এটা আমাদের কাম্য নয়। এটা কিন্তু বরাবর তিনি বলে এসেছেন। আলোচানার জায়গা তৈরি হোক না। আইন করে কি সব হবে!''

বুধবারই সাংবাদিক সম্মেলনে সিদ্দিকুল্লা বলেন, ''আমাদের সভা থেকে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা তিন তালাকের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তার পরে দলের অবস্থান বদলেছে, এমন কোনও বার্তা দলের তরফে আমাকে দেওয়া হয়নি।''

উল্লেখ্য, বুধবারই সিদ্দিকুল্লা নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে হাজির ছিলেন। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তালাক প্রসঙ্গে কোনও বার্তা তিনি দেননি সেখানে। সিদ্দিকুল্লার সরব হওয়া নিয়েও কোনও কিছু বলেননি। এটাকেই দলের সমর্থন বলে দেখছেন গ্রন্থাগারমন্ত্রী।

এ দিন  সিদ্দিকুল্লা মেনে নিয়েছেন, তিন তালাক প্রথার অপব্যবহার হয়েছে। কিন্তু তাই বলে সেই রীতি আদালত নিষিদ্ধ করতে পারে না। মুসলমান পুরুষদেরই সেই দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারত।

এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ''আদালত যাই বলুক তালাক বন্ধ হবে না। এখন এই মুহূর্তে যদি কেউ তিন তালাক দেয় তবে কি কেউ কিছু বলবে? কেউ ঠেকাতে পারবে না। ঠেকানো যাবে না। পরিবেশ না তৈরি করে ঠেকানো যাবে না। শরিয়ত আইনে তো তালাকের অধিকার আছেই। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে বলেছে। ভারত সরকার যতক্ষণ না পার্লামেন্ট আইন করছে ততক্ষণ বাধা দেওয়া যাবে না। ছ‍‍'মাস তালাক দেওয়া যাবে না, ছ'মাস বিয়ে করা যবে না, এটা বলে দিলেই হল! এই আইনটা মিডিয়া খাওয়াচ্ছে।''

এখানেই থামেননি সিদ্দিকুল্লা। তাঁর দাবি, গোটা দেশে এবং এই রাজ্যে তাঁরা সমীক্ষা চালাচ্ছেন। তাতে তালাক নিয়ে মুসলমান সমাজের মনোভাব উঠে আসছে। তিনি বলেন, ''যেটুকু অধিকার শরিয়ত দিয়েছে তাতে আমরা হস্তক্ষেপ করতে দেব না।''

এর পরেই তিনি কিছু মারাত্মক প্রশ্ন তোলেন। সিদ্দিকুল্লার দাবি, ''কোনও মেয়ের ক্ষতি হোক আমরা চাই না। কিন্তু মেয়েরা কি পুরুষদের বাদ দিয়ে চলতে পারবে? যে মহিলারা খুশি বলা হচ্ছে তাঁরা মুসলমান পুরুষের কাছে যাবে না, হিন্দু পুরুষদের কাছে যাবে? খবরের কাগজে বড় বড় কথা আর ছবি! ওই মেয়েদের বিয়ে-শাদি কোথায় হবে? মুসলমানদের সঙ্গেই হবে। অতএব ব্যাপারটায় তো সমন্বয় তৈরি করতে হবে। মেয়েরা একা বিয়ে করতে পারবে? মেয়েদের হাতে তালাকের ব্যবস্থা আছে? থাকবে না কোনও দিন। এই বিতর্কের প্রশ্নে যদি কেউ ভাবে জিতে গিয়েছে, তবে মুর্খের স্বর্গে বাস করছে।''

সুপ্রিম কর্টোর এই রায় কি মুসলমান নারীদের নিরাপত্তা বিড়িয়ে দিল না? এই প্রশ্নের উত্তরে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, ''মুসলিম মেয়েরা ভাবছে যে আইন আমাদের একটা নিরাপত্তা দিয়েছে, কিন্তু মুসলমান পুরুষদের বাদ দিয়ে মুসলমান মেয়েরা চলতে পারবে?

মুসলমান মেয়েদের পুরুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এখন অমুসলিম মেয়েরা রোজ নির্যাতিত হচ্ছে, খুন হচ্ছে। আইন তাদের বাঁচাতে পারছে? মুসলমান মেয়েদেরও কি আইন বাঁচাতে পারবে?'' --এবেলা

এমটিনিউজ২৪/এম.জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে