আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্ভ্রমহানীর অভিযোগ প্রমাণিত, সাজা ঘোষণা সোমবার। কিন্তু শুক্রবার ডেরা–অনুগামীদের তাণ্ডবের পর গুরমিত রাম রহিম সিংকে আর পাঁচকুলায় ফেরত আনা হবে না। তিনি থাকবেন রোহতকের সুনারিয়ার জেলেই, যেখানে এখন আছেন। বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারপতিই সেখানে গিয়ে তাকে দণ্ডাদেশ শুনিয়ে আসবেন।
বরং রোহতকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার কাজ শুরু হয়েছে। ১০ কোম্পানি আধাসেনা এবং ১৮ কলম সেনা জওয়ান চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সিবিআই বিচারপতি জগদীপ সিংকে রোহতকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করতে হরিয়ানা সরকারকে এদিন নির্দেশ দিয়েছে পাঞ্জাব–হরিয়ানা হাইকোর্ট।
সেই সঙ্গে হরিয়ানার বিজেপি সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বলেছে, রাজনৈতিক স্বার্থের কথা ভেবে আপনারা ডেরা–অনুগামীদের সামনে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এটা ভোটব্যাঙ্কের মুখ চেয়ে রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ। মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সরাসরি অভিযোগ, তিনিই আগলে রেখেছিলেন ডেরা সদস্যদের, তাদের রাজনৈতিক মদত জুগিয়েছেন।
শুক্রবার হাঙ্গামার পর মুখ্যমন্ত্রী খট্টর ‘বহিরাগত গুন্ডা’দের ঘাড়ে গন্ডগোল বাধানোর দায় চাপিয়েছেন। হাইকোর্টের পাল্টা বক্তব্য, প্রায় দেড় লক্ষ ডেরা সদস্য কী করে পাঁচকুলায় জড়ো হয়েছিলেন? বহিরাগত গুন্ডাদের শনাক্ত করা যদি সম্ভব না–ও হয়, ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও ওই দেড় লাখ লোক কী করে পাঁচকুলায় ঢুকে পড়ল? যদিও গোটা ঘটনার জন্য খট্টর সরকার বলির পাঁঠা করেছে পাঁচকুলার ডেপুটি পুলিস সুপার, আইপিএস অশোক কুমারকে। শনিবারই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
হরিয়ানা পুলিশ এদিন জানিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ডেরা–সমর্থকদের দুটি গাড়িতে লুকনো ১টি একে–৪৭, ১টি মাউৎজার রাইফেল–সহ মোট ৪টি রাইফেল, ৫টি পিস্তল এবং পেট্রল বোমা উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া প্রচুর লাঠিসোটা, লোহার রড, কুড়ুল, তলোয়ার। এইসব অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গে আটক করা হয়েছে ১৫ জন ডেরা–গুন্ডাকে। তবে সিরসায় ডেরার সদরঘাঁটিতে এখনও প্রায় ১ লক্ষ অনুগামী হাজির আছে।
পুলিশের তরফে তাদের আশ্রম খালি করে চলে যেতে বলা হয়েছে। তবে এখনই ওই ডেরায় ঢোকার কোনও পরিকল্পনা নেই পুলিস অথবা আধাসেনার। জানিয়েছেন সিরসায় মোতায়েন সেনার ৩৩ নম্বর সাঁজোয়া বাহিনীর জেনারেল কমান্ডিং অফিসার রাজপাল পুনিয়া।
এদিন হরিয়ানার অতিরিক্ত মুখ্য সচিব রাম নিবাস জানিয়েছিলেন, ডেরা সচ্চা সওদার সব ক’টি আশ্রমে, আড্ডায় তল্লাশি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরেই লোকের ধারণা হয়, হয়তো সিরসার মূল আশ্রমেও সামরিক অভিযান হবে। কিন্তু সিরসা সাব–ডিভিশনের অতিরিক্ত জেলাশাসক পরমজিৎ সিং চাহল পরে জানিয়ে দেন, আপাতত সিরসায় আইন–শৃঙ্খলা বজায় রাখাই লক্ষ্য। ওখানে এখনও চাপা উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি শান্ত, প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে।
সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। আশ্রমে যাতায়াতের রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
শুক্রবারের হাঙ্গামায় হতাহতের একটা স্পষ্ট ছবি এদিন পাওয়া গেছে। হরিয়ানার মুখ্য সচিব ডি এস ঢেসি মোট ৩৬ জনের মারা যাওয়ার হিসেব দিয়েছেন। তার মধ্যে ৩২ জন পুরুষ, ৩ জন মহিলা এবং একটি শিশু আছে। আহতের সংখ্যা সরকারি হিসেবে ২৫০, যার মধ্যে ৫০ জন পুলিশকর্মীও আছেন।
বাকিদের ১০১ জনের চোট গুরুতর হওয়ায় পাঁচকুলার বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৩১ জনকে। তবে মুখ্য সচিবের দেওয়া এই হিসেবের সবথেকে উল্লেখযোগ্য দিক হল, হতাহতদের মধ্যে একজনও পাঁচকুলার বাসিন্দা নয়।
পুলিশ এদিন ডেরা সমর্থকদের বিরুদ্ধে দুটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করেছে, মুখ্য সচিবদের উপস্থিতিতে জানিয়েছেন হরিয়ানা পুলিসের ডিরেক্টর জেনারেল বি এস সান্ধু। এছাড়া মোট ৫২৪ জন ডেরা অনুগামীকে বিভিন্ন অভিযোগে আটক করা হয়েছে। পাঁচকুলায় এখন ৬ কলাম সেনা মোতায়েন আছে, আর সিরসায় ৪ কলাম। তবে কার্ফু শিথিল করা হয়েছে দু’জায়গাতেই।
ওদিকে, সোমবারের সাজা ঘোষণার আগে পাঞ্জাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং। তবে শুক্রবার পাঁচকুলা আদালত রায় ঘোষণার পর পাঞ্জাবে তেমন কোনও বড় হাঙ্গামা হয়নি, বা কেউ হতাহত হয়নি, জানিয়েছেন তিনি।
এমটিনিউজ/এসএস