সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ১০:৫১:২১

সাধু বাবার ডেরায় রহস্যজনক সুন্দরী!

সাধু বাবার ডেরায় রহস্যজনক সুন্দরী!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ডেরা–র উত্তরসূরি কে?‌ ভারতের বিতর্কিত সাধুবাবা গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের ‘‌সাম্রাজ্য’‌ দেখভাল করবেন কে?‌ পাল্লা ভারী হানিপ্রীত ইনসানের। তিনি পালিত কন্যা। ‘‌বাবা’‌র ভক্তদের কাছে তিনি ‘‌পাপা’‌জ অ্যাঞ্জেল’‌। ভক্ত–‌‌সমাবেশ থেকে আদালত, সর্বত্র তিনি ‘‌বাবা’র ছায়াসঙ্গী। তার সিদ্ধান্তই নাকি ‘‌বাবা’‌র সিদ্ধান্ত!‌

গুরুতর অভি‌যোগ করেছিলেন জামাই বিশ্বাস গুপ্তা। তার অভি‌যোগ ছিল, পালক কন্যা হানিপ্রীতের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ডেরা সচ্চা সওদার প্রধানের। নিজের পাপ ঢাকতে হানিপ্রীতকে দত্তক নিয়েছিলেন। বিশ্বাসের দাবি, ২০১১ সালে একবার তিনি আশ্রমে বাবার গুফায় গিয়েছিলেন। ঘরের দরজা খোলা ছিল। উঁকি মেরে দেখতেই স্তম্ভিত হয়েছিলেন। আপত্তিকর অবস্থায় ছিলেন রাম রহিম, তার স্ত্রী ও হানিপ্রীত। বিশ্বাস গুপ্তা জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালে ফতেহাবাদে তাদের বিয়ে হয়েছিল। রাম রহিম ‌যদি হানিপ্রীতকে দত্তক নিয়ে থাকেন, তাহলে উনি আমাকে সঙ্গে থাকতে দেন না কেন? প্রশ্ন তুলেছিলেন বিশ্বাস। ২০১১ সালে তিনি রাম রহিমের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। তবে পরে আদালতের বাইরে আলোচনার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করে নেন।

আসল নাম প্রিয়াঙ্কা তানেজা। হরিয়ানার হিসার জেলার ফতেবাদের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ১৯৯৯ সালে সিরসার ডেরা–‌ভক্ত বিশ্বাস গুপ্তর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয়েছিল। ডেরা–‌অনুগামীদের বক্তব্য, পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার শুরু হলে ‘‌বাবা’‌র দ্বারস্থ হন প্রিয়াঙ্কা। ২০০৯ সালে রাম রহিম প্রিয়াঙ্কাকে দত্তক নেন। নাম রাখেন হানিপ্রীত। খুব কম সময়ে হানিপ্রীত নাকি যেকোনো কাজ রপ্ত করতে সিদ্ধহস্ত। মেয়ের গুণে মুগ্ধ ‘‌বাবা’‌।

সোশ্যাল মিডিয়ায় হানিপ্রীতের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে সমাজসেবী, নির্দেশক, পরিচালক, অভিনেত্রী, গায়ক, মোটিভেশনাল স্পিকার, ব্যবসায়ী ও চিত্রশিল্পী হিসেবেও দাবি করেন। ফেসবুকে তঁার ৫ লাখ ভক্ত রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি রাম রহিমকে ‘‌গুরু পা’‌ বলে উল্লেখ করেছেন। ডেরা–র ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, চলচ্চিত্র নির্দেশনার সময় হানিকে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখেছিলেন রাম রহিম। কথা দিয়েছিলেন, হানিকে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনার দায়িত্ব দেবেন। কথা রেখেছেন ‘‌বাবা’‌। ২০১৫–‌য় ‘মেসেঞ্জার অব গড: দ্য ওয়ারিয়র লায়ন হার্ট’ ছবিতে পরিচালনার কাজ করেন হানিপ্রীত। সে–‌ছবিতে অভিনয়ও করেছেন হানি। মেয়ের সিদ্ধান্তে অমত করেন না ‘‌বাবা’‌। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাম রহিমকে যখন রোহতকে নিয়ে যাওয়া হয়, সে–‌সময়ও হানিকে দেখা গেছে তার পাশেই।

অভিযোগ, জেলে রাম রহিম যাতে ভিআইপি সুযোগ–সুবিধে পান, তার ব্যবস্থা করেছেন হানিপ্রীত। সঙ্গে দুটি পেল্লাই বিদেশি স্যুটকেস ছিল। তাতে ছিল সুগন্ধী, চকোলেট আর বিদেশি সিগারেট। রাম রহিমের সেলে ওই স্যুটকেস পৌঁছে দেন অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল গুরদাস সিং সালয়ারা। হানিপ্রীতের নির্দেশেই নাকি রাম রহিমের জন্য পাঁচতারা হোটেল থেকে খাবার, মিনারেল ওয়াটার আনা হচ্ছে। সেলে এসি, নতুন বিছানা। সহায়ক নিয়োগ করা হয়েছে। ‘‌বাবা’‌র কাছাকাছি থাকতে জেলের কাছেই একটি হোটেলে উঠেছেন হানিপ্রীত।


ডেরার ভিতর অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র!

হাজার হাজার লাঠি। ধারাল অস্ত্র। পেট্রল বোমা। বন্দুক। অত্যাধুনিক রাইফেল। রাম রহিমের মূল ডেরায় অভিযান চালিয়ে চক্ষু চড়কগাছ সেনাকর্তা-প্রশাসনের। কী নেই সেখানে? ছোটখাটো সেনাবাহিনী যেন! ধর্মের আড়ালে ডেরার সদর দপ্তরে চলা এইরকম গতিবিধি সম্পর্কে প্রশাসন কি কিছুই জানত না, উঠছে প্রশ্ন। এই পরিস্থিতিতে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সাচা সওদার মূল ঘাঁটিতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মজুত, এমনকী অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১০-এই সতর্কবার্তা শুনিয়েছিল ‘মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স’।

জানা গিয়েছে, ওই বছরই পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করেন ভারতীয় সেনার গোয়েন্দারা। সেখানে বলা হয়, ডেরার ঘাঁটিতে চলছে ব্যাপক অস্ত্র প্রশিক্ষণ। মজুত করা হয়েছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। শুধু তাই নয়, ওই কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন সেনার প্রাক্তন অফিসাররাও। তারাই নাকি এই প্রশিক্ষণ দিতেন। সে বছরই সেনা-জওয়ানদের ডেরার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেয়া হয় সেনার তরফে। অভিযোগ, রিপোর্ট পাওয়ার পরও এবিষয়ে কোনো পদক্ষেপ করেনি রাজ্য প্রশাসন। নামমাত্র তল্লাশি চালিয়ে ডেরাকে ‘ক্লিনচিট’ দেয় পুলিশ। সাত বছরের পুরনো সেই রিপোর্ট ফের প্রকাশ্যে আসায় খাট্টার প্রশাসনের পাশাপাশি আঙুল উঠতে শুরু করেছে পূর্বতন হুডা সরকরের বিরুদ্ধেও। অনেকেই মনে করছেন, সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত। শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে স্বঘোষিত ‘বাবা’ রাম রহিমের দহরম মহরম রয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী, গত শুক্রবারও নির্যাতনের দোষী সাব্যস্ত রাম রহিমকে জেলে নিয়ে গিয়ে জামাই-আদর করা হয়েছে বলে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশের অভিযোগ।

তবে এই নির্যাতক বাবা একা নয়। ২০১৪ আরেক স্বঘোষিত ধর্মগুরু রামপালকে নিয়ে একটি মামলায় হরিয়ানা সরকারকে একটি নোটিস পাঠায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট। ডেরার মতোই ‘সতলোক’ আশ্রমের মধ্যেও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ দায়ের হয় আদালতে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, জানতে চায় আদালত। ওই মামলা চলাকালীন আরও একবার ডেরার আশ্রমে অস্ত্রশস্ত্র মজুত থাকার তথ্য। তবে এক্ষেত্রেও ২০১৫-য় ডেরাকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে আদালতে রিপোর্ট পেশ করে হরিয়ানা সরকার।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ডেরা সাচা সওদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের প্রতিপত্তি ছিল প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে। কেন্দ্র ও রাজ্যের বহু মন্ত্রী, আমলা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী অনেকেই তার অনুগামী। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সিবিআই আধিকারিক নারায়ণন। বয়ান বদলাতে তাঁকে বারবার চাপ দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ। সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে প্রভাবিত করারও চেষ্টা হয়েছিল বলেও তার দাবি। এভাবে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসায় ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে নির্যাতক গুরুর আরো কুকীর্তি।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে