সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ১১:১৬:২১

ভক্তের বৌ চুরি করলেন এই সাধু বাবা!

ভক্তের বৌ চুরি করলেন এই সাধু বাবা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ২০১৫ সালের ঘটনা। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে গিয়েছিলেন গুরু-সাক্ষাতে। সংসারে নিত্য অভাব-অভিযোগ, অশান্তি। যদি গুরুর আশীর্বাদে গ্রহের ফের কাটে— সেই আশাতেই রাজস্থানের জয়পুর থেকে হরিয়ানার সিরসায় পাড়ি দিয়েছিলেন দিনমজুর কমলেশ রাইগর ও স্ত্রী গুড্ডি দেবী। কী ভাগ্যি! পেয়েছিলেন গুরু গুরমিত রাম রহিমের সাক্ষাৎও। ২৪ থেকে ২৮ মার্চ ডেরা সচ্চা সৌদার সদর দফতরের আশ্রমে থেকে ভেবেছিলেন, ‘দর্শন’ যখন হল, এ বার ফিরে আসবেন জয়পুরে। কিন্তু ২৮ তারিখ সকালে ভিতর থেকে ডাক পড়ে গুড্ডির। এক ‘সেবকদার’ এসে কমলেশকে বলে, ‘‘ডেরা প্রমুখের সেবা আছে। তোমার বৌ তাতে স্থান পেয়েছে। সে ভাগ্যবতী।’’ কমলেশ যেতে দেন স্ত্রীকে। ভেবেছিলেন, ভালোই হলো। গুরুর নজরে কপাল ফিরবে।

আসলে কপাল পুড়েছিল। দু’দিন পরেও গুড্ডি না ফেরায় কমলেশ খোঁজ নিতে যান ডেরার আধিকারিকদের কাছে। তাঁকে বলা হয়, ‘‘বৌ ভালো আছে। তুমি এখন বাড়ি যাও। ঠিক সময়ে গুড্ডি ফিরে যাবে।’’ কমলেশ যান সিরসা থানায়। সেখানে বলা হয়, ‘‘যেখান থেকে এসেছ, সেখানেও অভিযোগ করো।’’ চার ও ছয় বছরের ছেলের হাত ধরে রাজস্থানে ফেরেন কমলেশ। জয়পুরের জহওর সার্কল থানায় ডেরা ও তার প্রধান গুরমিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বলেন, গুড্ডিকে ওই আশ্রমে সেবাদাসী করে রাখা হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

শুরু হয় তদন্ত। কিন্তু তদন্তকারী অফিসারদেরই গা-ছাড়া মনোভাব দেখে আদালতের দ্বারস্থ হন কমলেশ। তাঁর আইনজীবী বাবুলাল বৈরোয়া বলেন, ‘‘প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত হাল্কা করার চেষ্টা করছিল ডেরা। ২০১৫-র ২১ মে আদালতে শুনানির দু’দিন আগে কমলেশকে অপহরণ করে ডেরা-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। কমলেশকে আদালতে নিয়ে গিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আমি ওই দিন কমলেশকে আদালতে দেখতে পেয়ে দলবল নিয়ে ছাড়িয়ে আনি।’’ তার পরও একাধিক বার সিরসার ডেরা সদরে স্ত্রীর খোঁজে গিয়েছিলেন কমলেশ। প্রতি বার তাঁকে বলা হয়েছে, স্ত্রী সমাধিতে রয়েছেন। ঠিক সময়ে বাড়ি ফিরবেন।

৭ সেপ্টেম্বর ফের শুনানি মামলার। তার আগে আদালত গুরমিতকে নির্যাতনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করায় কিছুটা বল পাচ্ছেন নিরাপদ স্থানে গা-ঢাকা দিয়ে থাকা কমলেশ। আশা, গুরমিতের শাস্তি হলে মুক্তি পাবেন গুড্ডি। কিন্তু কমলেশের ঘনিষ্ঠরা ততটা আশাবাদী নন। বাবুলালের আশঙ্কা, ‘‘মেয়ে পাচার থেকে অঙ্গ বিক্রি— সব দুষ্কর্মই হয় সিরসাতে।’’

আজই গুরমিতের প্রাক্তন গাড়িচালক খট্টা সিংহের বছর দশেক আগেকার একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করেছে একটি চ্যানেল। সিবিআইয়ের অন্যতম সাক্ষী খট্টা তাতে অভিযোগ করেছেন, নিজের পার্শ্বচর রঞ্জিৎ সিংহের বোনকে নির্যাতন করেছিলেন গুরমিত। সূত্রের দাবি, সেই সাধ্বীই গোটা ঘটনা জানিয়ে চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রীকে। তদন্তে নামে সিবিআই।

কিন্তু কমলেশের কী হবে? সোমবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের উপরেই যাবতীয় আশা-ভরসা তাঁর। যদি ফিরে পান মানুষটাকে।


জেলে গিয়ে প্রথম রাতে কী করলেন ভণ্ড বাবা

ডেরা সচ্চা সওদার আশ্রমের গোপন ডেরায় ‘রাসলীলা’ চালাতেন তিনি। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, দামি দামি গাড়ি, সিনেমার হিরো, বিদেশযাত্রা— আমোদ-প্রমোদের কোনো আয়োজনেরই ঘাটতি ছিল না তাঁর জীবনে। কিন্তু গত ৪৮ ঘণ্টায় বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। জেলে গিয়েই অবশ্য ঘুম উড়ে গেল গুরমিত রাম রহিমের।

একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের খবর অনুযায়ী, রোহতকের সুনারিয়ার জেলে নির্যাতনে দোষী সাব্যস্ত গুরু রাম রহিমকে রাখা হয়েছে। জেলের কয়েদি নম্বর ১৯৯৭ এখন ভণ্ড গুরুর পরিচয়। সেখানেই প্রথম রাতে না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে নির্যাতক বাবাকে। শুধু তাই নয়, রাতে মাত্র একটি রুটি এবং দুধ খেয়ে ডিনার সারেন তিনি। জেল সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছে, ভোর পাঁচটা নাগাদ ঘণ্টাখানের যোগ ব্যায়াম করে শুতে যান তিনি। নির্যাতনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে কী সাজা পেতে হবে, তা ভেবেই সম্ভবত ঘুম উড়েছে বাবাজির।

যদিও, বিতর্ক রাম রহিমের পিছু ছাড়ছে না। কোনো কোনো মহল থেকে দাবি করা হয়, জেলেও একজন মহিলা রাম রহিমের সঙ্গে রয়েছেন। সরকারি তরফে অবশ্য এমন দাবি উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, সাধারণ কয়েদিদের তুলনায় কোনও বাড়তি সুবিধেই দেওয়া হচ্ছে না রাম রহিমকে।

একটি বিশেষ সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, জেলে থাকার জন্য এক কামরার একটি বিশেষ সেল দেওয়া হয়েছে রাম রহিমকে। সেখানে নিজের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে একজন থাকতে পারে।

গোপন ডেরায় মহিলাদের ‘মাফ’ করতেন বাবা! আদালতে কী বলেছিলেন দুই সাধ্বী
জালি বাবা! যে ‘গুরু’-রা ফেঁসেছেন কুকীর্তির দায়ে রাম রহিমের বাড়বাড়ন্তের পিছনে বিজেপি-র প্রশয়কেই দায়ী করা হচ্ছে। যদিও এ দিন ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে নাম না করে রাম রহিমের সমর্থকদের হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, ধর্মের নামে কেউ যদি আইনকে হাতে নেয়, তাহলে সহ্য করা হবে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিন্দুকরা অবশ্য বলছেন, আরো আগে সতর্ক হলে ডেরা সচ্চা সওদার সমর্থকদের গুণ্ডাগিরি সহজেই আটকে দিতে পারত সরকার। নিরীহদের প্রাণ বাঁচত, রক্ষা পেত সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি।


সাজা আজ জেলেই

নির্যাতনের শাস্তি ঘোষণা নয়, যেন যুদ্ধের প্রস্তুতি! তা-ও আবার জেলের অন্দরে!
জোড়া নির্যাতন মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে রোহতকের সুনারিয়ার জেলা সংশোধনাগারে শাস্তির মেয়াদ শোনার অপেক্ষায় সময় গুনছেন ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান, গুরমিত রাম রহিম সিংহ। গত শুক্রবার তিনি দোষী সাব্যস্ত হতেই ভক্তেরা যে রকম তাণ্ডব চালিয়েছিল, তার পরে আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না হরিয়ানা প্রশাসন। শাস্তি ঘোষণার জন্য স্বঘোষিত ওই ধর্মগুরুকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে না। সুরক্ষার স্বার্থে আদালতকেই উড়িয়ে আনা হচ্ছে সুনারিয়ার জেলে চৌহদ্দিতে। জেলটিকে ঘিরে রেখেছে জলপাই উর্দিধারীরা। ইতিমধ্যেই সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক জগদীপ সিংহকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। আগামিকাল হেলিকপ্টারে উড়িয়ে নিয়ে আসা হবে তাঁকে। জেলে রায় ঘোষণার পরে তিনি ফিরবেনও হেলিকপ্টারে।

সুরক্ষার স্বার্থে বা বিশেষ প্রয়োজনে আদালত ভবনের বাইরে এজলাস বসানোটা নতুন নয়। নরসিংহ রাও দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি (সাংসদের) ঘুষ দেওয়ার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। ২০০০ সালে সেই মামলার বিচার হয়েছিল নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে। ১৯৯৩ সালে হিরো কাপের সম্প্রসারণ নিয়ে দূরদর্শন এবং ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের মধ্যে মামলায় জরুরি ভিত্তিতে অনেক রাতে বিশেষ আদালত বসেছিল তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি এন কে মিত্রের বাসভবনে।

সে বছরেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় একাধিক বার আদালত বসে বেতওয়া নদীর ধারে মাতাটিলা বাঁধের পাশে এক বাংলোর লনে। সেখানে বন্দি ছিলেন বাবরি ধ্বংসে অভিযুক্ত লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ারের মতো নেতারা। তখনও লখনউ থেকে উড়িয়ে আনা হতো বিচারকদের। মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত আজমল কসাবের বিচার হয়েছিল মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলে। প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশে নিম্ন আদালত এ ভাবে বসতে পারে।’’

হামলার আশঙ্কায় অভিযুক্তেরাও অনেক সময়ে চায়, বিচার হোক জেলেই। যেমন, পাকিস্তানের টাকায় কাশ্মীরে অশান্তি ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সাবির শাহ। পটিয়ালা আদালতে তিনি আর্জি জানিয়েছেন যে, তিহাড় জেল থেকেই ভিডিও কনফারেন্সে বা জেলেই বিশেষ আদালতে বিচার হোক তার।

‘রকস্টার গুরু’ গুরমিতের বিচার এত দিন পঞ্চকুলার আদালতে হলেও কাল শুধু শাস্তির মেয়াদ ঘোষণা হবে জেলে। গত শুক্রবার থেকে সেখানেই বিশেষ একটি সেলে রয়েছেন তিনি। জনা বারো বন্দিকে রাখা হয়, এমন একটি ঘরে আপাতত একলা।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে