আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সম্প্রতি দেশটির রাখাইন রাজ্যের সীমান্ত চৌকিতে ‘রোহিঙ্গা জঙ্গি’দের হামলার জেরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ ৮৯ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছে ১২ জন। এ সংঘর্ষের ফলে প্রাণ বাঁচাতে বিপুল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। তাদের মতে, দেশটির সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে সংঘাত বেড়েই চলছে। নির্যাতন সয়ে সয়ে এবার প্রতিরোধ করছে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা, এবার তারা প্রতিরোধ শুরু করেছে।
এদিকে, কূটনীতিক অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রোহিঙ্গারা সংগঠিত হয়ে এবার তাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিরোধ করতে শুরু করেছে।
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যের সীমান্ত চৌকিতে যে হামলা হয়েছিল তার জন্যও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দায়ী করা হচ্ছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ঘটনা যেটা আমি বুঝতে পারছি, এটা একপক্ষীয় বিষয় ছিল না। তার কারণ হলো যে কোনো একদিক থেকে আক্রমণ হলে অন্যদিকের লোকজন মারা যেত। এখানে দুইপক্ষের মানুষ মরছে। এখানে একটা সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ অর্থ দু’টি পক্ষের মধ্যেই এটি ঘটেছে।’
‘এটি পরিষ্কার যা আমরা দেখেছি। দু’টি বক্তব্য আমরা পাচ্ছি। এরমধ্যে রোহিঙ্গা কনভার্সন আর্মি বলছে, মায়ানমারের সেনা প্রথমে আক্রমণ করেছে, পরে তারা প্রতিবাদ করেছে। আর মায়ানমার সরকার বলছে, রোহিঙ্গারা আগে পুলিশ স্টেশন আক্রমণ করেছে। তবে যাই ঘটুক দুই পক্ষেই মানুষ মারা গেছে।’
তিনি বলেন, এ ঘটনাটি স্বাধীনাতাকামীদের আক্রমণ বলাটা আগাম চিন্তাভাবনা হয়ে যাবে। আমরা বলতে পারি এক ধরনের প্রতিরোধ, হয়তো রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে এবার উঠে দাঁড়াচ্ছে।
অভিবাসন ও উদ্বাস্তু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট নতুন ঘটনা নয়। তবে সম্প্রতি মায়ানমারের দিকে এটি চরম আকার ধারণ করেছে। গত বছর অক্টোবরে যখন এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ হয়। তখন হয়েছিল ৩টা চেকপোস্টে। এবার হয়েছে ২৪ টা চেকপোস্টে। দেখে মনে হচ্ছে এরা কয়েক মাস বা গত এক বছরে প্রস্তুতি নিয়ে আরও সংগঠিত হয়ে তারা আক্রমণ করেছে। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির সৈন্যও বসে থাকবে না। যেসব গ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী হোক বা স্বাধীনতাকামী লুকিয়ে থাকছে সেখানে হয়তো সাধারণ মানুষ মানবঢাল হয়ে যায় এবং তারাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়। সেই পরিস্থিতি আরও কঠোর হবে।’
তিনি বলেন, ‘একটা জাতিকে যখন বিভিন্নভাবে দমন করার চেষ্টা করা হয় কিছুলোক কষ্ট করে মেনে নেবে বা পালিয়ে বাঁচবে আর এদের মধ্যে থেকে আরেকটা দল যারা মনে করবে- না, আমাদের প্রতিবাদ করা উচিৎ, আর সেটাই এখন হচ্ছে।’
সম্প্রতি মায়ানমারের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে আসিফ মুনির বলেন, এবার আক্রমণে মনে হচ্ছে- তারা (রোহিঙ্গা) অনেক সংগঠিতভাবে করেছে। ব্যাপকহারে একটা চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এটা উত্তোরত্তর বাড়বে। অবশ্যই তারা এখন অনেক বেশি সংগঠিত। এর উপর মিলিটারি আরও সংগঠিতভাবে আক্রমণ করবে।
সংঘাতের বিষয়ে উদ্বাস্তু বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, গত কয়েকদিনে রাখাইন রাজ্যে শুধু সেনাবাহিনী নয়, মগ থেকে শুরু করে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও লুটপাট করতে পারে। জাতিগত বিদ্বেষটা মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর আছে। এটাকে উসকে দিয়ে একে অন্যের সাধারণের মধ্যে একটা চাপ পড়বেই।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস