সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ০৮:২৬:৫৩

যে কারণে কারাগারে পালক-কন্যাকে নিয়ে রাতে থাকতে চেয়েছিলেন রাম রহিম

যে কারণে কারাগারে পালক-কন্যাকে নিয়ে রাতে থাকতে চেয়েছিলেন রাম রহিম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের হরিয়ানা ও পাঞ্জাব অঞ্চলের বিতর্কীত ‘ধর্মগুরু’ গুরমিত রাম রহিমকে নিয়ে যখন আদালত চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হেলিকপ্টার তখন তার পাশে বসে থাকা এক মহিলার পরিচয় নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।

কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অবশ্য সব ধোঁয়াশা পরিষ্কার হয়ে যায়। জানা যায় ইনি নাকি গুরমিতের পালক কন্যা, হানিপ্রীত ইনসান।

তবে এই মুহূর্তে আরো বেশি আলোচ্য বিষয় হল, গুরমিত এবং হানিপ্রীত দু’জনেরই একান্ত ইচ্ছা ছিল, রোহতাকের জেলে তাদের যেন একসঙ্গে রাখা হয়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাম রহিম এবং হানিপ্রীত দু’জনেই পঞ্চকুলার সিবিআই আদালতে আবেদন রেখেছিলেন যাতে তাদের জেলে একসঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান ফর্মাল পিটিশন দায়ের করেছিলেন। অন্যদিকে হানিপ্রীত তার আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন। তার বক্তব্য তিনি আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ এবং বাবা রাম রহিমের মাইগ্রেন এবং পিঠের ব্যাথার চিকিৎসা একমাত্র তিনিই করতে পারবেন।

সিবিআই আদালত অবশ্য আবেদন খারিজ করে দিয়ে জানায়, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার এবং জেল কর্তৃপক্ষেরই রয়েছে। এরপর জেল কর্তৃপক্ষের কাছে রাম রহিম এই আবেদন রাখেন। জেলের পক্ষ থেকে যখন জানানো হয় একজন পুরুষের সঙ্গে একজন নারীকে একসঙ্গে জেলের ভিতর থাকতে দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই, তখন জেল কর্তৃপক্ষকে হুমকি দেন ডেরা প্রধান।

তিনি বলেন, যদি হানিপ্রীতকে তার সঙ্গে থাকতে দেওয়া না হয় তাহলে তাদের প্রত্যেককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করিয়ে ছাড়বেন।

প্রভাবশালী গুরমিত রাম রহিমের পক্ষ থেকে এতটাই চাপ সৃষ্টি করা হয় যে, অবশেষে জেল কর্তৃপক্ষ হানিপ্রীতকে ডেরা প্রধানের সঙ্গে প্রায় ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট জেলের ভিআইপি অবসর কক্ষে একা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তবে এতেও শান্ত করা যায়নি বাবা ও তার কন্যাকে! তাদের দাবি ছিল রাতেও একসঙ্গে থাকতে দিতে হবে। তাতে জেল কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়ায় আরও বেশ কিছুক্ষণ হম্বিতম্বি চালান দু’জনেই।

ফেসবুক প্রোফাইলে নিজেরে পাপাজ পরি বলে পরিচয় দেন হানিপ্রীত। প্রিয়াঙ্কা তানেজা ওরফে হানিপ্রীতকে ২০০৯ সালে দত্তক নেন গুরমিত।

প্রায় হাজার একর জমির মাঝখানে আয়নায় মোড়া এক প্রাসাদ। তার নাম ‘বাবা কি গুফা’। দামি আসবাব, সোফা, পর্দায় সাজানো বিলাসবহুল সেই প্রাসাদেই বাস গুরমিত রাম রহিম সিংহের।

গুফায় তাকে ঘিরে থাকেন ২০০ জনেরও বেশি বাছাই করা শিষ্যা। তাদের চুল খোলা। পরনে সাধ্বীদের মতো দুধসাদা রঙের পোশাক। এরাই রাম রহিমের যত্নআত্তি, দেখভাল করেন।

এমনই দুই শিষ্যাকে সম্ভ্রমহানীর মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বাবা রাম রহিম। এক সময়ে বাবার ‘গুফা’য় অতিথি হওয়া বিহারের সাংবাদিক পুষ্পরাজ জানিয়েছেন, সেখানে আছে মেয়েদের স্কুল ‘পরীলোক’। তার সব পড়ুয়াই সুন্দরী। কারণ, বাবাজি মনে করেন ‘খুবসুরত’ হলেই মেধাবী হয়।

সেই গুফায় প্রবেশাধিকার আছে মাত্র কয়েক জনের। তাও আঙুলের ছাপ, চোখের মণি-র মতো বায়োমেট্রিক তথ্য মিললে তবেই ভিতরে যাওয়ার অনুমতি মেলে। ধর্মগুরু হলেও রাম রহিমের পছন্দ শিফনের রঙবেরঙের জামা, বাহারি জুতো। তার জামাকাপড় তৈরির জন্য নিজস্ব ফ্যাশন ডিজাইনার রয়েছেন। রয়েছেন নিজস্ব ‘হেয়ার ড্রেসার’-ও।

রাম রহিমের কনভয়ে বিলাসবহুল ১০০টি গাড়ি। তার মধ্যে ১৬টি কালো রঙের ফোর্ড এনডেভার। বাবা প্রাসাদ থেকে বের হলে সব গাড়ি তাবু দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। বাবা নিজেই ঠিক করেন, তিনি কোন গাড়িতে উঠবেন। আশ্রমে নিজের ব্যাটারিচালিত গাড়িতেই ঘোরেন তিনি।

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে