আন্তর্জাতিক ডেস্ক: একদিকে উত্তর পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী নাগা জঙ্গি সমস্যা৷ অন্যদিকে জ্বলন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু, দুটি বিষয়ই বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন মায়ানমার সফরে৷ প্রশ্ন, কাকে গুরুত্ব দেবে নয়াদিল্লি?
বিবিসি সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, মায়ানমারে নতুন করে জাতি সংঘর্ষের জেরে যখন বিপুল সংখ্যায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শরণার্থীরা সেদেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসছেন, সেই সময়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রী সফর গুরুত্বপূর্ণ৷
মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে মোদীর মায়ানমার সফর৷ এই সফরে দেশের রাখাইন প্রদেশের ক্রমবর্ধমান রক্তাক্ত পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়েও আলোচনা হবে নয়াদিল্লি ও নেপিদ-র মধ্যে৷
বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র উদ্ধৃত করে বিবিসি জানাচ্ছে, নিরাপত্তা ও মানবিকতার ইস্যুগুলি তোলার সঙ্গেই ভারত প্রতিবেশী মায়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে সামাজিক উন্নয়নের উপরেও জোর দিচ্ছে। এদিকে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে চলে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বলছেন, হিংসাত্মক পরিবেশ বন্ধে নরেন্দ্র মোদী জোরালোভাবে মায়ানমারের সংখ্যালঘুদের সমর্থনে এগিয়ে আসুন৷
পাশাপাশি উঠে আসছে উত্তর পূর্ব ভারতের জ্বলন্ত নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যা৷ সীমান্ত পেরিয়ে মায়ানমারের জংলি ঘাঁটি থেকে বারে বারে ভারতে ঢুকে নাশকতা চালাচ্ছে ন্যাশনাল সোশালিস্ট কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড বা এনএসসিএন (খাপলাং) সহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী৷ যদিও এই নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি গোষ্ঠী এনএসসিএন(আই-এম)-এর সঙ্গে সরকারের শান্তিচুক্তি হয়েছে৷ সম্প্রতি তারা জানায়, শান্তি প্রক্রিয়া চলতে থাকলেও কোনওভাবেই সংগঠনের সশস্ত্র শাখা ‘নাগা আর্মি’ কোনওভাবেই অস্ত্র সমর্পণ করবে না৷
অন্যদিকে সশস্ত্র পথেই আন্দোলন চালাতে এনএসসিএন(খাপলাং) এর মতো জঙ্গি সংগঠন অনড়৷ মায়ানমার লাগোয়া ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় তাদের জঙ্গি শিবির নিয়ে চিন্তিত মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরাম সরকার৷
নয়াদিল্লির অভিযোগ, চিনের মদতেই আলফা (স্বাধীনতা) বা ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (ইন্ডিপেন্ডেন্ট) উত্তর পূর্ব ভারতে নাশকতা চালাতে মরিয়া৷ মায়ানমার ও চিনের সীমান্ত এলাকায় এই গোষ্ঠী বিশেষ সক্রিয়৷ চিনের ভূখণ্ড রুইলি টাউন থেকেই নাশকতার পরিকল্পনা চালাচ্ছেন অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা পরেশ বড়ুয়া৷
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মায়ানমার থেকে পরিচালিত হওয়া নাগা সহ উত্তর পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকে নিষ্ক্রিয় করতে চাপ দেবে নয়াদিল্লি৷ কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা, অন্তত রোহিঙ্গা ইস্যুর থেকেও বিচ্ছিন্নতাবাদ সমস্যা বড় করে দেখছে মোদী সরকার৷
মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জ্বলন্ত রোহিঙ্গা সমস্যায় ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ শিকড় গেড়েছে৷ তাতে চিন্তা বেড়েছে নয়াদিল্লির৷ মায়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে গিয়েছে বিভিন্ন বিদ্রোহী রোহিঙ্গা গোষ্ঠী৷ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অঞ্চলটিতে নাশকতা ছড়িয়ে দিতে মরিয়া পাক সামরিক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই৷
ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সরাসরি ভারতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কঠিন৷ কিন্তু জাতিগত সমস্যায় যেভাবে সন্ত্রাসবাদ তার অবস্থান পাকা করছে তাতে চিন্তিত নয়াদিল্লি৷ গোয়েন্দা বিভাগের সতর্কতা, বিচ্ছিন্নতাবাদকে ভিত্তি করেই মায়ানমার-ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় নাশকতার জাল ছড়িয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা৷
মায়ানমার ও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন জানিয়েছেন, রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে ৷ সঠিক তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস