শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১০:৩৪:৫৯

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

 নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের সবথেকে ক্ষমতাশালী সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেদাজ্ঞা আরোপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব দেয় দেশটি। সহিংসতা বন্ধ, রাখাইনে ত্রাণের অবাধ প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘের ওয়েব টেলিভিশনে প্রচারিত সেই বৈঠকের লাইভ সম্প্রচার থেকে এসব কথা জানা গেছে। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া তার ওই বক্তব্যে বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছে। মিয়ানমার সরকারকে এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে হবে। পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজেদের দেশে ফিরতে সাহস পায় না।’

নিকি হ্যালি বলেন, ‘আমরা রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানাই। কেবল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীই নয়, অন্য যেকোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনাতেও আমরা নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, মিয়ানমারে নৃশংসতা ও সহিংসতা অব্যাহত আছে। এর শিকার হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এসব বিষয়ে তথ্য গোপন করছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশটি গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টাও অব্যাহত থাকতে হবে।’

‘মিয়ানমারকে সহিংসতা হচ্ছে না বলে আপনাদের দাবি সত্য হলে রাখাইনে গণমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হোক। পাশাপাশি মানবিক ত্রাণও ঢুকতে দেওয়া হোক। আর আমরা জানি, এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে থাকলে কী হয়। তাই অবশ্যই আমাদের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীসহ সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।’  বলেন নিকি।

সুনির্দিষ্ট তিনটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে নিকি হ্যালি বলেন, ‘প্রথমত, মিয়ানমারের সব নাগরিকের মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যারা সহিংসতা চালিয়েছে, সেসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে যেসব দেশ অস্ত্র সরবরাহ করছে, তাদের এই অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার সরকারকে সহিংসতাপ্রবণ এলাকায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। রেডক্রস ছাড়াও মানবিক ত্রাণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও ঢুকতে দিতে হবে। তৃতীয়ত, সহিংসতার শিকার হয়ে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছে, তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে এবং তাদের নিজ বাসভূমে স্বাগত জানাতে হবে।’

জাতিসংঘের ওই মার্কিন মুখপাত্র  বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে মিয়ানমার সরকারকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করার আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গাদের এই সংকটে আমরা বাংলাদেশের উদারতা দেখেছি। তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য আরও সহায়তা প্রয়োজন।’

এই মার্কিনস রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘রাখাইনে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় একসঙ্গে বাস করে আসছে। কিন্তু সেখানে রোহিঙ্গারা এখন বৈষম্যের শিকার, তারা নাগরিকেত্বের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, আমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান। স্বাধীনতা নিয়ে নিরাপদে বসবাসের অধিকার সবারই রয়েছে। তাই আমি আহ্বান জানাই, সবাই একসঙ্গে কাজ করব যেন ঈশ্বরের সব সন্তানই ভালো থাকে।’
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে