আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘদিনের নির্যাতন দমনে ফেটে পড়তে শুরু করেছে চীনের প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিমরা। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক থেকে অনুবাদ করেছেন জুলফিকার হায়দার
উরুমচির দিনটা শুরু হচ্ছিল সাদামাটাভাবে। দেখে বোঝার উপায় নেই গত সপ্তাহে কী ঘটেছে। সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে তাও বুঝবে না কেউ। জুলাইয়ের এই দিনটিতে নীরবে সেনারা ছড়িয়ে গেছে শহরে। ঘর থেকে লোকজন বের করে দিচ্ছে তারা। বন্ধ দোকানপাটের জানালাগুলো ভাঙা।
কিছু ফেরিওয়ালা শুধু পথে নেমেছে খাবারের পসরা নিয়ে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গা এখানকার জনজীবন তছনছ করে গেছে। মারা গেছে কমপক্ষে ২০০ মানুষ। দুই দশক আগে তিয়েনামেন স্কোয়ারে যে হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিল, তারপর আর এমন মৃত্যু দেখেনি চীনের মানুষ। ঘটনার পর উইঘুরদের স্বায়ত্তশাসিত এ এলাকায় হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছে চীন সরকার। হান আর উইঘুরদের মধ্যে শান্তি ফেরাতে চায় তারা। হান গোষ্ঠী এলাকার চীনাদের নেতৃত্বে। আর উইঘুররা তুর্কিভাষী, মধ্য এশীয়। এই উরুমচি তাদের পূর্বপুরুষদের মাতৃভূমি।
শহরের পথে পথে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে হান নিরাপত্তা বাহিনী। হাতে অটোমেটিক অস্ত্রশস্ত্র। ট্রাকে ট্রাকে মাইকিং হচ্ছে, ‘জাতিগত সম্প্রীতি ফিরে এসেছে’। দাঙ্গার এক সপ্তাহ পরে উরুমচি এখন অস্বাভাবিক নীরব।
উইঘুরদের বেশির ভাগই মুসলিম। দুপুরের দিকে শহরের কেন্দ্রীয় একটা মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম কত মানুষ আছে ভেতরে। ভাবতে ভাবতেই মসজিদ থেকে শত শত মানুষ বেরিয়ে এলো। ছড়িয়ে পড়ল রাস্তায়।
বিপুল মানুষের স্রোত দেখে পথিকদের কিছুটা বিভ্রান্ত দেখাচ্ছিল। মানুষের ভিড় দেখে একটু খটকা লাগে। জুতামোজা ছেড়েই ছুটছিল অনেকে। চিৎকার করছিল স্লোগানের মতো হয়তো ভয়ে অথবা আনন্দে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল না যে বিপদ কেটে গেছে। ভিড়ের দঙ্গল টুকরো টুকরো হয়ে মুহূর্তেই উত্তর আর দক্ষিণে হারিয়ে গেল।
এরপর মসজিদ থেকে বেরোল তিনজন। হাতে কাঠের লাঠির মতো কিছু একটা। একজনের গায়ে নীল শার্ট, একজনের কালো শার্ট, তৃতীয়জনের সাদা। তারা চিৎকার করছিল, মুখে ছিল হাসি, ভঙ্গি বেপরোয়া। দেখে মনে হচ্ছিল না চীনা পুলিশের উপস্থিতি নিয়ে তারা চিন্তিত। মাইকিংয়ের আওয়াজ পেয়েছে বলেও মনে হলো না।
দক্ষিণে এগিয়ে গেল দলটি। লম্বা পা ফেলে হাঁটছিল তিনজন। মাথার ওপর একসাথে ঘোরাচ্ছিল লাঠিগুলো অদৃশ্য ড্রামে আঘাত করছিল যেন। কতগুলো দোকান পেরোনোর সময় তাদের এভাবে এগোতে নিষেধ করল অনেকেই। অনেক দোকানের ঝাঁপি নেমে গেল দ্রুত। দুটো ব্লক পার হয়ে থেমে গেল তিনজন। হাঁটা দিলো উত্তরে। আমার কাছাকাছি আসার আগেই রাস্তা পেরোল তারা। তাদের হাতের লাঠিগুলো মনে হলো মরচে ধরা তলোয়ার।
রাস্তা পার হয়েই একদল সশস্ত্র চীনা নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে ধেয়ে গেল ওরা। নীল শার্ট সবার আগে। সম্ভবত নিরাপত্তারক্ষীদের কাউকে ধরে ফেলেছিল সে, কারণ অন্যদের পিছু হটতে দেখা গেল। পরমুহূর্তেই দেখা গেল নিচু হয়ে দৌড়াচ্ছে একজন, পেছনে মাটিতে তার শার্ট গড়াচ্ছে। এরপরই গুলির শব্দে খানখান ভেঙে পড়ল চার পাশের শুমশাম নৈঃশব্দ্য। তিন উইঘুর তখনো থামেনি। মাথা নিচু করে সামনে এগোচ্ছে তখনো।
চীন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তিব্বতের সংগ্রাম দীর্ঘদিন দেখে এসেছে পশ্চিমা বিশ্ব। পাশেই উইঘুরদের সাম্রাজ্য। তাদের আরো জটিল এক সংগ্রামের গল্প অজানাই রয়ে গেছে বহু মানুষের কাছে। এই ধরনের নীরব অনুচ্চ জীবনযাপনে উইঘুরদের কোনো লাভ হয়নি। সাম্প্রতিক এই সঙ্কটে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের ব্যাপারে ছিল উদাসীন।
জিনজিয়াং বলতে গেলে এশিয়ার ঠিক মাঝখানে। চার পাশে ঘিরে রেখেছে বিশ্বের উচ্চতম কতগুলো পর্বত। তুষারময় পাহাড়গুলো পেরিয়ে ব্যবসায়ী আর পর্যটকরা যে পথ ধরে এগোয়, সেটাই বিখ্যাত সিল্ক রোড। তারা বলে, এটাই পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান। আফগানিস্তান থেকে পামির পর্বতে চড়েছিলেন মার্কো পোলো। পর্বত পেরিয়ে উইঘুরদের বসতি দেখে চমৎকৃত হয়েছিলেন তিনি। মার্কো পোলো লিখে গেছেন, এখান থেকে বহু ব্যবসায়ী পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ অঞ্চলে ভর দিয়েই যেন ভারসাম্য রক্ষা করেছে এশিয়া আর ইউরোপ। তুর্কি অভিযাত্রী থেকে চেঙ্গিস খান, বৌদ্ধ-মুসলিম, ব্যবসায়ী-উপজাতি, মিশনারি কিংবা সন্তু সবাই এই ক্রস রোড পেরিয়েছে। প্রত্যেকেই কিছু না কিছু রেখে গেছে। এক মুসলিম মহিলাকে দেখলাম স্কার্ফ পরা। সাথের শিশুটির মাথার চুলগুলো বিশেষ নকশা করে কাটা। ইসলাম-পূর্ব যুগে ছেলেধরা খারাপ আত্মাকে ভয় দেখাতে এভাবে চুল কাটার চল ছিল। জিনজিয়াংয়ের ইতিহাসের বৈচিত্র্য এখানকার মানুষদের দেখলেও বোঝা যায় কালো চেহারা, কিছুটা গোলাকার চোখ। কারো ফরসা চেহারা, চোখগুলো নিচু। কখনো আবার সাদা চুলের নীল চোখও চোখে পড়বে।
জিনজিয়াংয়ের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিম হোটান। ভূপ্রকৃতি নিজেই এখানে উইঘুরদের সংস্কৃতি লালন করে চলেছে। শহরের পেছনে তুষার মাথার পর্বতসারি। সামনে তাকলিমাকান মরুভূমি। আকারে পোল্যান্ডের চেয়েও বড়। এই মরুভূমিকে মৃত্যুসাগরও বলা হয়। হোটানের অধিবাসীদের বেশির ভাগই কৃষক। প্রতি রোববার শহরের বাইরে এখানে হাট বসে। শিশুরা বরফ মেশানো মিষ্টি কিনে খায়। বরফগুলো সংগ্রহ করা হয় কারাকাক্স নদীতে ভাসমান বরফের চাঁই থেকে। তাঁবুভর্তি সিল্ক আছে মেয়েদের জন্য। আর পুরুষরা জোকস বলার ফাঁকে ফাঁকে ছেঁটে নেয় তাদের গোঁফ-দাড়ি।
শহরে এক সঙ্গীতশিক্ষকের সাথে দেখা হলো। নাম দাউদ। অল্প কিছু ছাত্রকে সে সঙ্গীত শেখায়। তার স্কুলে ‘মাশরাপ’-এর ম্যুরাল। মাশরাপ হলো শুধু উইঘুর পুরুষদের ঐতিহ্যগত এক সমাবেশ। এখানে তারা গান গায়, আবৃত্তি করে, সামাজিকতা ঠিক রাখে। চীনারা এখন এ ধরনের মাশরাপগুলোর ওপর কড়া নজর রাখছে। বাদ্যযন্ত্রগুলোতে হাত দুটো খেলে গেল দাউদের।
বেশ কিছু জটিল সুরে উঠে এলো অন্তত পাঁচ শতাব্দী আগের পুরনো কিছু গান। এই গানগুলো উইঘুরদের একটা মস্ত পরিচয় বহন করে চলেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এখানে তাদের বসবাস। আর তারা নিজেদের মধ্যে সেভাবে কোনো শ্রেণী বিভাজন করে না। কিন্তু পৃথিবী একসময় তাদের ভুলে গেছে। যার ফল হয়েছে ভয়াবহ। বাণিজ্যের প্রসার সমুদ্রপথে ছড়িয়ে পড়ার পর ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে সিল্ক রোডের গুরুত্ব। প্রাচ্য, পাশ্চাত্য সবাই ভুলে গেছে উইঘুর আর তাদের তীব্র পাহাড়ি জীবনের কথা। জিনজিয়াংয়ে খুব সামান্যই সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিল চীন। জিনজিয়াং অর্থ নতুন ভূমি। চীনারা তখন খুঁজছিল কৃষি উপযোগী জমি। কিন্তু এখানে তারা পেয়েছে শুধু ধুলো আর পাথর। এখানে মেষ আছে, শূকরের খামার নেই। ১৯৩২ সালে জিনজিয়াং সফর করেছিলেন এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা।
তিনি লিখেছিলেন, ভবিষ্যতে বাড়তি জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের জন্য চীনকে হয়তো এই রহস্যঘেরা জিনজিয়াংয়ের উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। তবে বিংশ শতকে কখনোই এ এলাকায় চীনাদের আধিপত্য বিস্তারের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। দু-দু’বার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে উইঘুররা। দ্বিতীয়বার ঘোষণা দেয়া হয় ১৯৪৪ সালে। পাঁচ বছরে এই ঘোষণা জারি ছিল। মাও ও কমিউনিস্ট পার্টির উত্থানের পর এখানে সামরিক বাহিনী পাঠায় সরকার। লোপ নুর এলাকায় তৈরি হয় পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র।
কিছু না হলেও বিদেশীদের হাত থেকে রক্ষায় বাফার জোন হিসেবে কাজে লাগতে পারে জিনজিয়াং। এ চিন্তা থেকে এ এলাকায় কিছু কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয় মাও সরকার। তৈরি হয় ফার্ম, সামরিক গ্যারিসন আর বন্দিশালা। অন্যান্য রাজ্য থেকে চীনারা এসে এখানে বসত গড়বে। চোখ রাখবে সীমান্ত এলাকার ওপর। ১৯৫৪ সালে প্রথম এক লাখ মানুষের একটা দল আসে এখানে। এরা সবাই সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অথবা বহিষ্কৃত কর্মচারী। অনেককেই তখন জোর করে পাঠানো হয়েছিল। এরপর ১৯৬২ সালে উরুমচির পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হলো। খাবার আর কাপড়ের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলো সবাইকে। সাংহাইয়ের মতো জনাকীর্ণ শহরের মানুষদের তখন এখানে আসতে প্রলোভন দেখানো শুরু হলো।
এর মধ্যে চীন বুঝতে শুরু করেছিল জিনজিয়াং শুধু সীমান্ত এলাকার একটা বাফার জোন মাত্র নয়; জাতি হিসেবে টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস রয়েছে এখানে। চীনের কয়লা সম্পদের প্রায় ৪০ শতাংশই আছে জিনজিয়াংয়ে। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ আছে এখানে। সবচেয়ে বড় বিষয় চীনের তেলসম্পদের পাঁচ ভাগের পরীক্ষিত এক ভাগ জমা আছে এখানে। চীন সরকার অবশ্য বলে তিন ভাগের এক ভাগই নাকি জিনজিয়াংয়ে। স্বর্ণ, লবণ আর অন্যান্য খনিজের কথা তো বাদই দিলাম। জিনজিয়াং তুচ্ছ কিছু নয়। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এসব বোঝার সাথে সাথে আরো কিছু বিষয় নজরে আসে চীন সরকারের। দূরবর্তী জায়গাগুলোর মধ্যে জিনজিয়াংই সবচেয়ে বড়। সবচেয়ে বেশি দেশের সীমানা এ অঞ্চলের সাথে। এখানে বাস করছে এমন একটি জাতি, যারা দুইবার স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে।
দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১৯৪৭ সালে জিনজিয়াংয়ে হান জনসংখ্যা ছিল দুই লাখ ২০ হাজার। জিনজিয়াংয়ের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। উইঘুরদের সংখ্যা তখন ৩০ লাখের মতো, মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ। বাকিরা মধ্য এশীয় মিশ্র জাতিগোষ্ঠীর। ২০০৭ সালে এসে উইঘুরদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৬ লাখে। কিন্তু হানরাও ফুলে-ফেঁপে হয়েছে ৮২ লাখ।
কিছু উইঘুর সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় বাড়িয়েছে। আশির দশকে উরুমচিতে ব্যবসায়-বাণিজ্য বাড়ছিল। রাবিয়া কাদিরের তখন লন্ড্রির ব্যবসায়। নিজের দোকানটাকে ডিপার্টমেন্ট স্টোর করে ফেললেন তিনি। আস্তে আস্তে সেটা হয়ে উঠল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্বর্গ। রাবিয়া কাদির তখন চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি অনুপ্রেরণা। কারণ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে নাম এসেছে তার। বিল গেটস আর ওয়ারেন বাফেটের মতো ব্যবসায়ীদের সাথেও সাক্ষাৎ হয়েছে উইঘুর এই মহিলার। বহু দিক থেকেই জিনজিয়াংয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। বিংশ শতকের শেষ দুই দশকে এ এলাকার জিডিপি বেড়েছে ১০ গুণ।
কিন্তু উইঘুরদের সবার অবস্থা এক রকম নয়। অনেকেই হারিয়েছে সব কিছু। জিনজিয়াংয়ের সবচেয়ে বড় ব্যবসায় হলো তেল-বাণিজ্য। এর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে সরকার নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানিগুলো। জিনজিয়াংয়ে অনেক ভালো সরকারি চাকরি রয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেই চাকরিতে যোগদান কিংবা প্রমোশন সহজ হয়। কিন্তু উইঘুরদের এ জন্য ধর্ম ছাড়তে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ উইঘুরই সেটা করতে নারাজ। ফলাফল বেদনাদায়ক। হানদের সংখ্যা যখন বাড়ছে, সম্পদশালী প্রশস্ত মাতৃভূমি ছেড়ে উইঘুরদের তখন কাজের জন্য চলে যেতে হচ্ছে জনাকীর্ণ উপকূলীয় এলাকায়। ব্যক্তিমালিকানার কারখানায় খেটেখুটে রোজগার করছে তারা।
বিগত কয়েক দশকে বেশ কয়েকবার জিনজিয়াংজুড়ে ফুঁসে উঠেছে উইঘুররা। আশির দশকে বেশ কিছু ঘটনায় পুলিশি আচরণের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল উইঘুর ছাত্ররা। ১৯৯০ সালে কাশগড়ে এক সহিংসতায় প্রায় অর্ধশত নিহত হয়। ১৯৯৭ সালে গুলজা শহরে এক বিক্ষোভ হয়েছিল ধর্মীয় আচরণের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিবাদে। শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল। গ্রেফতারও হয়েছিল প্রচুর। কতজন নিহত হয়েছিল তা জানা যায় না। এ ছাড়া বাসে হামলা, খুনÑ এসবের টুকরো ঘটনা তো অগণন।
চীন সরকার বুঝেছে, জিনজিয়াংয়ে সমস্যা হচ্ছে। অনেকটা তিব্বতের মতো। মাশরাপের পাশাপাশি মসজিদগুলোর ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। সরকারের আশঙ্কা এসব জায়গায় বিচ্ছিন্নতাবাদী বেড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। বিদ্রোহীদের অনেকটা বিচ্ছিন্ন বিবেচনা করে কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে। এর বাইরের অবস্থা এক ধরনের শান্ত বলা যায়। ২০০১ সালের সেপটেম্বরে জিনজিয়াং কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি ওয়াং লেকান ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘সমাজব্যবস্থা এখানে সুস্থির। মানুষ শান্তি ও অসহিংসভাবে বসবাস করছে।’
দিন কয়েক পরেই একটা অপ্রত্যাশিত এবং ফলদায়ক প্রচারাস্ত্র পেয়ে গেল বেইজিং ‘১১ সেপ্টেম্বর’।
আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব যখন ‘ওয়্যার অন টেরর’ ঘোষণা করছে, তখন এর অনুকূলে থাকা জনসমর্থন কাজে লাগাতে নতুন কৌশল নিলো চীন। পরিবর্তনটা এতই পরিষ্কার যে রীতিমতো কানে লাগে। ১১ অক্টোবর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো তারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের শিকার।
জিনজিয়াংয়ের অস্থিরতা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করল চীন সরকার। সেখানে দায়ী করা হলো খোদ ওসামা বিন লাদেনকে। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জিনজিয়াং বিশেষজ্ঞ জেমস মিলওয়ার্ড ব্যাখ্যা করলেন ব্যাপারটা। কৌশলটা ছিল খুবই ফলপ্রসূ। কারণ আমেরিকায় কোনো মুসলিমের মধ্যে কোনো নেতিবাচক কিছু দেখলেই বলা হয় সেটা হয়েছে ধর্মের কারণে।
এই ধারাতেই উইঘুরদের একটা বিশেষ কাতারে ফেলে দেয়া হলো। উইঘুর যাদের ছিল মিশ্র সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ অতীত আর চীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘৃণার পাহাড়। বিচ্ছিন্নতাবাদী উইঘুরদের একটি অংশকে সন্ত্রাসী ঘোষণা দিয়ে চীন আমেরিকাকে বলল, তার সন্ত্রাসীর তালিকায় এদেরকে সংযুক্ত করতে। যদিও সেবার চীন পাত্তা পেল না। অন্তত প্রথমবার নয়।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ধরা পড়ল ২২ উইঘুর। সেখানে হয়তো তারা অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ফিরে গিয়ে জিনজিয়াংয়ে লড়াই করবে, এ জন্য। তাদের গ্রেফতার করে তুলে দেয়া মার্কিন সেনাদের হাতে। মার্কিনিরা তাদের পাঠিয়ে দিলো গুয়ানতানামো কারাগারে। (বছর কয়েক পরে এক মার্কিন আদালতে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।) ২০০২ সালের আগস্টে মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি চীন যান আসন্ন ইরাক অভিযান নিয়ে আলোচনা করতে। সেখানে বদলে যায় মার্কিননীতি। উইঘুরদের একটা দল ‘ইস্টার্ন তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট’-এর নাম যোগ হয় মার্কিন সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায়।
উইঘুরদের ঐতিহ্যের কেন্দ্র হলো কাশগড়। আজো এখানকার অবস্থা সেই মার্কো পোলোর ঐতিহাসিক বিবরণের মতোই। প্রাচীন মাটির ঘর যেন শিশুদের হাতে গড়া খেলনা সব। গেল বছরের গোড়ার দিকে মারাত্মক একটা কাজ করে চীন সরকার। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় ব্লকের পর ব্লক মাটির ঘরগুলো। অধিবাসীদের ঠেলে দেয়া হয় শহরের এক প্রান্তে।
গ্রেফতারের ভয়ে ক্ষোভের কথা বলতে চায় না কোনো উইঘুর। তবে পুরনো শহরের এক বাসিন্দা আহুনকে পাওয়া গেল যে তার বাসায় কথা বলতে রাজি হলো। সময়ক্ষণ ঠিক করে কিছু করাটা ছিল অসম্ভব। কারণ বেশ অনেক দিন হলো, আমার পেছনেও লেগে আছে চীনা গোয়েন্দারা। ব্যস্ত একটা দিনে দুপুরের দিকে মেইন স্কোয়ারে অপেক্ষা করছিলাম। তখন মাওয়ের মূর্তির নিচ দিয়ে যেতে দেখলাম তাকে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে, সেভাবে পিছু নিলাম তার।
শহরের রাস্তা পেরোনোর সময় ইচ্ছে করেই সে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পানি পান করল। এক জায়গায় নিচু হয়ে জুতার ফিতা ঠিক করল। শেষ পর্যন্ত পুরনো শহরে ঢুকলাম আমরা। পুরনো শহর ভাঙার পেছনে চীন সরকারের যুক্তি হলো বিল্ডিংগুলো ভূমিকম্পের ধাক্কা সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু আহুনের সাথে চলতে চলতে বুঝতে পারলাম আসল কারণ। আহুনকে দেখলাম অনেক নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছে, আগের মতো সচকিত নয়। এখানে তাকে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। পুরনো শহরে পালিয়ে থাকার একটা আদর্শ জায়গা বটে।
বাড়িগুলো গায়ে গায়ে লাগানো। একটা থেকে আরেকটাতে যাওয়ার পথ আছে। প্রতিটি বাড়ি দোতলা আর মাঝখানে আছে কমন একটা উঠোন। আহুনের পিছু পিছু বেশ কতগুলো সিঁড়ি বাওয়ার পর যখন দরজা খোলা হলো, মনে হলো বাড়িগুলো অনেকটা ঝিনুকের মতো।
বাইরে খসখসে চেহারা, ভেতরে সাদা চুনকাম করা দেয়াল। রঙ-বেরঙের সিলিং। আহুন বলল, নামাজে বসলেই সে দোয়া করে, আল্লাহ যেন তার বাড়িটাকে রক্ষা করেন। তার বাড়ি থেকে পরিষ্কার দেখা যায়, সরকারি কর্মচারীরা তারই প্রতিবেশীদের বাড়িঘর ভাঙছে। সরকারের যে শিডিউল, তাতে তিন বছর পরে আহুনের বাড়িটাও থাকবে না।
আহুনের জন্ম এ বাড়িতেই। তার বাবা ও দাদার জন্মও এখানেই। তার দাদার বাবা নিজেদের জমির ওপর এ বাড়ি বানিয়েছিলেন। আহুন জানাল, তার দুই ছেলে আছে। পাঁচ পুরুষ ধরে এ বাড়িতে বাস করে আসছে তারা।
অনেক সময় নিয়ে আহুন যেটা বলল, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে চীনের রাজনীতি বদলালে হয়তো তাদের সুদিন আসবে। চীন অবশ্যই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে। কিন্তু পূর্বপুরুষের ভিটা বাঁচানোর জন্য এ মুহূর্তে প্রার্থনা ছাড়া যার কিছুই করার নেই, তাকে উত্তেজিত হলে চলবে না। সে বলল, ‘আমাদের ক্ষোভ কী তীব্র, বুঝবে না। মধ্যপ্রাচ্যে মানববোমা আছে। শরীরে বোমা জড়িয়ে তারা আত্মাহুতি দেয়। কিন্তু আমাদের বোমার দরকার পড়ে না। আমরা এমনিতেই বিস্ফোরিত হতে পারি।
গেল বছরের জুনে হংকংয়ের শাওগুয়ানে এক শ্রমিক জানায়, উইঘুররা নাকি দু’জন মহিলাকে ধর্ষণ করেছে। সাথে সাথে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টার সে সংঘর্ষে বহু আহত হয়। ক্রুদ্ধ হান কর্মীরা কারখানার ডরমিটরিতে দুই উইঘুর সহকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এই হত্যার ঘটনায় ২০০০ মাইল দূরের জিনজিয়াংয়ে আগুন ধরে যায়। উইঘুর শ্রমিকদের ওপর অন্যায়ের প্রতিবাদে উরুমচির রাস্তায় নামে প্রায় পাঁচ হাজার উইঘুর। পরিস্থিতি সামলাতে ডাকা হয় নিরাপত্তারক্ষীদের।
সেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল আরজিগুল। সে জানাল কী ঘটেছিল সে দিন। বিক্ষোভের শুরুটা শান্তই ছিল। বিক্ষোভকারীরা একত্র হয়ে উইঘুর উইঘুর স্লোগান দিচ্ছিল। নিরাপত্তারক্ষীরা আসলে কিছু একটা ঘটেছিল যেটা তার কাছে পরিষ্কার না। দুই পক্ষেরই দাবি, তাদের ওপরই আঘাত করা হয়েছে আগে। কিন্তু এক পর্যায়ে রণমূর্তি ধারণ করে নিরাপত্তারক্ষীরা। উইঘুরদের ছত্রভঙ্গ করতে সর্বশক্তি দেয়া হয়। উইঘুররা ক্রুদ্ধ হয়ে রাস্তায় হানদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। দিন দুই পরে কয়েক হাজার হানের একদা দল মাংস কাটার চাপাতি, ছুরি, দা নিয়ে রাস্তায় নামে।উইঘুরদের ওপর হামলা শুরু করে তারা।
চীনা কর্মকর্তারা বলেন, দেশের নাগরিকদের সন্ত্রাস থেকে রক্ষা করছেন তারা। জুলাই মাসে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হে ইয়াফেই এ ঘটনার বর্ণনা দেন বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে, যেটা নাকি নিয়ন্ত্রণ করছে সন্ত্রাসবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও চরমপন্থী বাইরের কোনো শক্তি। জিনজিয়াং বিশেষজ্ঞ জেমস মিলওয়ার্ড জানালেন, বহু হান এমনকি সরকারি কর্মকর্তাও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে জিনজিয়াং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী চক্রের শিকার। তাদেরকে এটা বারবার বলা হয়েছে। এর পরপরই পুলিশ আর সামরিক বাহিনী রাস্তায় নামলে মনে হয়েছিল সহিংসতার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। এরপরই মসজিদ থেকে ওই তিন ব্যক্তি রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল। চীনা সেনাদের দিকে ধাওয়া করছিল তারা। নিরাপত্তারক্ষীদের প্রথম গুলিটা মিস হলো। তবে গুলি বন্ধ হলো না। পরিষ্কার বুঝলাম, মরচে ধরা এই তলোয়ার নিয়ে এদের কেউই বাঁচতে পারবে না। তারা যেন মৃত্যুর জন্যই পথে নেমেছিল।
এরপরই একঝাঁক অটোমেটিক বন্দুকের গুলি। নীল শার্ট পরা উইঘুর ছেঁড়াফাটা পুতুলের মতো আছড়ে পড়ল রাস্তায়। কয়েক সেকেন্ডের জন্য উল্টা দিকের ফুটপাথে থমকে দাঁড়িয়েছিল বাকি দু’জন। এরপর তারাও রাস্তায় নামল। গুলি ছুটছে তখন তিন দিকে। কাছের এক বিল্ডিংয়ে দৌড়ে ঢুকে পড়লাম আমি। সেটা ছিল বড় একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের লবি। মানুষ এক কোনায় কাপড়-চোপড়ের পেছনে জড়োসড়ো হয়ে আছে। মহিলারা কান্নাকাটি করছে। দরজার হ্যান্ডেলের মধ্যে মেটাল বার দিয়ে তালার মতো আটকে রেখেছে দু’জন লোক। গ্লাসের দরজা দিয়ে দূরে দেখা যাচ্ছে তিনজন উইঘুরই রাস্তায় পড়ে আছে। দু’জন মৃত, একজন আহত। সেনা, পুলিশ আর সাদা পোশাকের নিরাপত্তারক্ষীরা তখন ওপর দিকে আশপাশের বিল্ডিংগুলোর জানালায় গুলি ছুড়ছিল।
ডিপার্টমেন্টাল স্টোরটা ছিল উইঘুরদের জন্য একটা বিশেষ জায়গা। এটার মালিক তাদের প্রিয় রাবিয়া কাদির। উইঘুরদের ওপর চীনা সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে কথা বলায় উইঘুরদের আরো প্রিয় উঠেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে মার্কিন এক প্রতিনিধিদল দেখা করতে এলে কাদিরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ছয় বছর কারাগারে কাটিয়েছেন তিনি। পরে যুক্তরাষ্ট্রে তার নির্বাসিত স্বামীর সাথে যোগ দেন তিনি। তাকে বন্দী করায় উইঘুরদের মধ্যে তার মর্যাদা আরো বেড়েছে। সবাই তাকে ‘উইঘুরদের মা’ বলে ডাকে।
রাবিয়া এখন দাদিদের বয়সী। উচ্চতা পাঁচ ফুটের সামান্য কিছু বেশি। কিন্তু তাকে ভয় পায় চীনা কর্তৃপক্ষ। জিনজিয়াংয়ে তার নাম উচ্চারণ করলেই তড়িত শাস্তি দেয়া হয়। কাশগড়ের পুরনো শহরে চীনা সরকারের বিরুদ্ধে সমানে সমালোচনা করেছিল আহুন। কিন্তু রাবিয়ার নাম বলতেই থেমে যায় সে। আমার রেকর্ডার দেখিয়ে সে বলেছিল, চীনা সরকার যদি ওখান থেকে তার পরিচয় পায়, তাহলে শেষ বিচারের দিন সে আমার ঘাড় চেপে ধরবে।
জুলাইয়ের দাঙ্গার পর উরুমচির পথে পথে ঘোষণা দেয়া হয়, ওয়াশিংটনের অফিস থেকে এ দাঙ্গার নেতৃত্ব দিয়েছেন কাদির। সমগ্র বিশ্বে চীনা কর্তৃপক্ষ কাদিরকে অভিযুক্ত করেছে। তার ব্যবসায়-বাণিজ্য ধ্বংস করারও পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। চীন সরকার উইঘুরদের ওপর অত্যাচার করেছে বলেই কাদিরকে ভয় পায়। রাবিয়া কাদিরের অফিসে দেখা করতে গেলে এ কথাই বলেছিলেন তিনি। তার অফিসের এক দেয়ালে টাঙানো পূর্ব তুর্কিস্তানের বিশাল পতাকা। স্বাধীন উইঘুরদের প্রতীক এই পতাকা। অন্য দেয়ালে ঝুলছে কাদিরের ১১ সন্তানের ছবি। এদের দু’জন এখন কারাগারে।
তিব্বতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা খুব ভালোভাবেই জানে পশ্চিমা বিশ্ব। কারণ দালাই লামার মতো একজন নেতা আছে তাদের। কিন্তু উইঘুরদের এ রকম কোনো নেতা নেই বলেই হয়তো তাদের সংগ্রাম অজানাই রয়ে গেছে। চীনা সরকার রাবিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই রাবিয়াই এখন অনেকটা উইঘুরদের প্রতিনিধি হয়ে গেছেন। উইঘুরদের স্বাধিকারের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয়ের কথা জানালেন কাদির। সেটা চীনের মধ্যে স্বায়ত্তশাসন হোক, কিংবা পূর্ণ স্বাধীনতাই হোক। এ মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ সংলাপের দিকেই আমি আহ্বান করছি চীন সরকারকে, বললেন রাবিয়া কাদির।
কাদির যখন কথা বলছিলেন জিনজিয়াংয়ে তখন আরেক দফা সঙ্ঘাত, গুজব, দোষারোপ, প্রতিরোধ মঞ্চস্থ হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ সমাধান তাই মাঝে মধ্যে অসম্ভব মনে হয় কাদিরের কাছেও। হোটান ও কাশগড় যদি হয় উইঘুরদের অতীত ও বর্তমান, তবে অনুমান হয় ভবিষ্যৎটা হবে উরুমচির মতো।
যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের গন্ধে ছুটে আসা অভিবাসী হানরা সব দখল করে বসেছে। সংখ্যালঘু উইঘুররা আটকা পড়েছে তাদের ছোট্ট ঘরে। আর যখন ক্রোধ আরো ফেটে পড়ছে, তখন কোনো এক বিকেলে বোমা ছাড়াই উরুমচির তিন যোদ্ধার মতো বিস্ফোরিত হবে উইঘুররা।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস