আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আলোচিত ফিলিস্তিনি কিশোর ফাউজি আল জুনাইদিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। প্রায় তিন সপ্তাহ কারাগারে আটক থাকার পর গত বুধবার সে মুক্তি পায়। আগামী ৭ জানুয়ারি আবারো সামরিক আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে তাকে জামিন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১০ হাজার ইসরাইলি শেকেল জরিমানা করা হয়েছে তাকে।
ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ইসরাইলি সেনাদের নির্মমতার শিকার ১৬ বছর বয়সী জুনাইদির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ছবিতে দেখা যায়, ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ২৩ জন ইসরাইলি সেনা সাধারণ এক কিশোরকে ঘেরাও করে চোখ বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে। সেই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে।
জুনাইদিকে ১১ ডিসেম্বর ইসরাইলের সামরিক আদালতে হাজির করা হয়।
ইসরাইলি বাহিনীর দাবি, জুনাইদি তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করেছে।
তবে জুনাইদির আইনজীবী ফারাহ বায়াদসি বলেছেন, তার মক্কেল বিক্ষোভে অংশই নেয়নি। তাকে বিনাদোষে গ্রেফতার করেছেন সেনারা।
তিনি বলেন, ‘জুনাইদি বলেছে কাঁদানে গ্যাস যখন ছোড়া হচ্ছিল তখন সে আতঙ্কিত ছিল এবং দৌঁড়াচ্ছিল। তাকে রাইফেল দিয়ে পেটানো হয়েছে। মুখের পাশাপাশি তার ঘাড়, বুক এবং পিঠে কালশিটে দাগ হয়ে গেছে।’
ইসরাইলি সেনাকে ঘুষি মেরে বীরের মর্যাদায় ফিলিস্তিনি কিশোরী
বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা ইসরাইলি সেনার গালে ঘুষি মেরে প্রতিবাদ করায় বীরের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন ফিলিস্তিনি কিশোরী আহেদ তামিমি। দুই সেনাকে ফিলিস্তিনি কিশোরীর রুখে দাঁড়ানোর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
এর পরই ফিলিস্তিনের নবী সালেহ গ্রামের ১৬ বছর বয়সী এই কিশোরী নতুন প্রজন্মের এক বীরপ্রতীক হিসেবে ফিলিস্তিনের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান।
ফিলিস্তিনি কিশোরী আহেদ তামিমি তাদের বাড়ির প্রবেশপথের কাছে দাঁড়ানো দুই ইসরাইলি সেনার দিকে হেঁটে এগিয়ে যান কোঁকড়ানো ও সোনালি চুলের এই কিশোরী। সেনাদের কাছাকাছি গিয়ে নিজেদের বাড়ির আঙিনা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলেন তিনি। কিন্তু ওই দুই সেনা তার কথায় কোনো কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর ওই দুই সেনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু সেনারা কোনো তোয়াক্কা না করায় এক সেনার গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেন তিনি।
এনবিসি নিউজ জানায়, গত শুক্রবার জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার প্রতিবাদে পশ্চিম তীরে বিােভ করছিলেন ফিলিস্তিনিরা। এ সময় ফিলিস্তিনের বিখ্যাত কিশোরী অ্যাক্টিভিস্ট আহেদ তামিমির পরিবারের এক সদস্যকে মাথায় গুলি করে ইসরাইলি সেনারা। এতে ােভে ফেটে পড়েন কিশোরী আহেদ তামিমি। এ দৃশ্য কেউ একজন মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিওটি। এ ভিডিওকে ঘিরে ফিলিস্তিনি কিশোরীর বিরুদ্ধে ইসরাইলি কর্তৃপকে ব্যবস্থা নিতে উসকানি দেয় ইহুদিবাদী সংবাদমাধ্যমগুলো।
মঙ্গলবার ভোরে ওই ফিলিস্তিনি কিশোরীর বাড়িতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলি সেনারা মাসহ ওই কিশোরী আহেদ ও তার ২১ বছর বয়সী চাচাতো বোন নূর নাজি আল তামিমিকে গ্রেফতার করে। আহেদের ব্যক্তিগত ল্যাপটপ, মোবাইল ও বেশ কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রী জব্দ করা হয়। অভিযানের সময় তামিমির পরিবারের লোকজনকে সেনারা মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
এ ঘটনায় ফিলিস্তিনিরা সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ ও নিন্দা জানান। তাদের কথা, দখলদার ইসরাইলি সেনাদের প্রতিরোধ করার অধিকার রয়েছে ফিলিস্তিনিদের। এ দিকে দুই সেনার ওপর হামলার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ১০ দিনের সাজাও ঘোষণা করা হয়েছে। ইসরাইলের শিামন্ত্রী নাফতালি বেন্নেত মঙ্গলবার আর্মি রেডিওতে এক ঘোষণায় বলেন, ‘অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডে জড়িত দুই ফিলিস্তিনি কিশোরীকে জেলেই পচে মরতে হবে।’ - আলজাজিরা ও এবিসি নিউজ (২৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংবাদ)-আলজাজিরা
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস