আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট। অথচ আনোয়ার ও মাহাথির একসময় পরস্পরের ঘোর বিরোধী ছিলেন। বন্ধু থেকে শত্রু ্আবার শত্রু থেকে বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন। মূলত: ব্যক্তির চেয়ে দল বড় এবং দলের চেয়েও দেশ বড় এটাই প্রমাণ হয়েছে কিংবদন্তী দুই নেতার বর্তমান কর্মকাণ্ডে।
আনোয়ারের দল বর্তমানে সংসদে বিরোধী দল। আবার তার সাথে মাহাথির যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মনোনয়নের মূল ক্ষমতা আনোয়ার ইব্রাহিমের হাতে। তাকে বিনা অপরাধে তাকে জেল খাটানো মাহাথিরকে তিনি জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। দেশ ও দলের স্বার্থে নিজের অতীত কষ্টের কথা ভুলে ইসলামপন্থী আনোয়ার ইব্রাহিমের এমন উদারতায় উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত মাহাথির মোহাম্মদ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
নাম ঘোষণার পর উপস্থিত দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এসময় পাশে থাকা তার স্ত্রী সিতি হাসমান কেঁদে ফেলেন। টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে চোখ মুছতে থাকেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে সিতির পাশে গিয়ে বসেন আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী আজিজাহ। সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে তিনিও কেঁদে ফেলেন। হলরুমের অনেকের চোখ তখন ভিজে উঠে। এক পর্যায়ে চোখের পানি নিজেও ধরে রাখতে পারেননি মাহাথির মোহাম্মদও। টলমল চোখ নিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে কান্না লুকানোর চেষ্টা করেন তিনি।
কিছুক্ষণ পরে বক্তব্য দেয়ার জন্য মঞ্চে উঠে মাহাথির বলেন, ‘আমি আনোয়ারের কাছে ঋণী। তার অনুভূতি আমি অনুভব করতে পারছি। যখন আমার সরকারের সময়ে তাকে সুনগাই বুলো কারাগারে পাঠানো হয়েছিল তখন ওর কেমন লেগেছে আমি অনুভব করতে পারছি। গত ২০ বছরে তার পরিবার অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছে। আমি তাদের অনুভূতিটাও বুঝতে পারছি। আমাকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত তার জন্য খুব সহজ ছিল না। আমরা এখন একের অন্যের সাথে হাত মিলিয়েছি। কিন্তু তার পক্ষে আমাকে মেনে নেয়া সহজ নয়। কারণ আমি তখন নেতৃত্বের অংশ ছিলাম। এ কারণে আজকের সিদ্ধান্ত নিতে আমরা অনেক সময় নিয়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত আনোয়ার আমাদের দেশের জন্য করা সংগ্রামকেই প্রাধান্য দিয়েছে। আমি তার কাছে ঋণী’।
মালয়েশিয়ায় বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মাহাথির
সহিংসতার রাজনীতি থেকে মালয়েশিয়াকে একনায়কতন্ত্রের গণতন্ত্রে প্রবেশ করিয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ। তাকে বলা হয়, আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার। ২২ বছর ছিলেন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ২০০৩ সালে শেষবারের মতো ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ।
৯২ বছর বয়সে এসে মাহাথির মোহাম্মদ আবারও মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন এটি হয়তো দুই বছর আগেও কেউ ভাবেননি। যেখানে তারই সাবেক রাজনৈতিক দল বারিসাহ ন্যাশনাল ক্ষমতায়। তবে এবার তাই হয়েছে। বিরোধীদলীয় জোট থেকে আগামী ১৪তম জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হচ্ছেন মাহাথির মোহাম্মদ। চলতি বছরের আগস্টের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
বিরোধীদলীয় জোট পাকাতান হারাপানের দলগুলোর নেতারা রোববার একসভায় মাহাথিরকে প্রধানমন্ত্রী পদে লড়াই করতে দেয়ার জন্যে সম্মতি প্রকাশ করেন। তবে এ জন্য পুত্রজায়া থেকেও অনুমতি প্রয়োজন হবে।
পাকাতান জোটের দফতর প্রধান দাতুক সাইফুদ্দিন আব্দুল্লাহ এই ঘোষণা দেন। এ ছাড়া দাতুক সেরি ড. ওয়ান আজিজাহকে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। এ ছাড়া জোট ক্ষমতায় এলে বর্তমান বিরোধী দল দ্য পিপলস জাস্টিস পার্টি বা পার্টি কেয়াদিলান রাকায়াতের (পিকেআর) প্রধান আনোয়ার ইব্রাহিমকে রাজক্ষমা দিয়ে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হবে বলেও একমত হয়েছেন জোটের নেতারা। দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলেও একমত হয়েছেন জোটের সদস্যরা। নির্বাচনে জোটের পক্ষ থেকে প্রিবুমিকে ৫২ আসন, পিকেআর’কে ৫১ আসন, ডিএপি’কে ৩৫ আসন এবং আমানাহকে ২৭ আসন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
১৯৮১ সাল থেকে টানা ছয়টি জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন মাহাথির। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি বারিসাহ ন্যাশনালের চেয়ারম্যানও ছিলেন। এরপর দুই মেয়াদে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বারিসাহ ন্যাশনালের পরবর্তী চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাদওয়ি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন একই দলের প্রধান নাজিব তুন রাজ্জাক।
২০১৫ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় নাজিবের ১ এমডিবি কেলেঙ্কারি বড় রূপ ধারণ করে। সরকারি প্রজেক্টের টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নেয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কিত হয়ে ওঠেন নাজিব। তখন থেকেই বিরোধী দলের সাথে নাজিব বিরোধী ঐক্যে সম্মতি দিয়ে আসছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস