শুক্রবার, ০৬ এপ্রিল, ২০১৮, ০৫:৫৩:৪৬

সৌদির যুবরাজ নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের নাচের পুতুল

 সৌদির যুবরাজ নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের নাচের পুতুল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স বা যুবরাজ। বাবা সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের ক্ষমতার সুবাদে অতি অল্পসময়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। ক্রাউন প্রিন্স হলেও তিনিই সৌদির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছেন।

এখন তার লক্ষ্য সৌদির পরবর্তী বাদশাহ হওয়া। ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই তিনি করছেন না। অভিযোগ রয়েছে, নিজের মাকে পর্যন্ত বন্দি করে রেখেছেন তিনি। ক্ষমতার মসনদে যেতে এমনকি মুসলিম বিশ্বের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তিনি। এ সম্পর্কের কথা এতদিন অস্বীকার করে এলেও এখন তা প্রকাশ্যেই বলছেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাচের পুতুলে পরিণত হয়েছেন সৌদি যুবরাজ। তারা যা-ই বলছেন যুবরাজ মোহাম্মদ তাই বাস্তবায়ন করছেন।

২০১৪ সালে সৌদির সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের মৃত্যুর পর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাদশা সালমান। ছয় মাসের মধ্যেই ২০১৫ সালে নিজের ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফের জায়গায় ছেলে মোহাম্মদকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন তিনি।

মোহাম্মদকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসার নেপথ্যে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের হাত ছিল বলে মনে করা হয়। এর পেছনে তাদের বড় ধরনের স্বার্থ রয়েছে মত বিশ্লেষকদের। অবশ্য ট্রাম্প এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন, তিনিই যুবরাজ মোহাম্মদকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। নেতানিয়াহু চান, সৌদি আরবের কাছ থেকে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের স্বীকৃতি। অন্যদিকে অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে ট্রাম্পের।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলবিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদার হওয়ায় নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ কারণে তারা ইরান, হাশত আশ্ শাআবি, হামাস, হিজবুল্লাহ, আনসারুল্লাহর মতো প্রতিরোধ সংগ্রামের বিরোধী হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবকে দিয়ে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করতে চান। তারা চান, সৌদিকে অনুসরণ করে অন্য মুসলিম দেশগুলোও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে আসুক।

ইসরাইল তার জন্মের ৭০ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। দীর্ঘ এ সময়ে দখলদার এই দেশটিকে মাত্র তিনটি মুসলিম দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। সেটিও ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর কিছু কৌশলগত কারণে। যদিও ইসরাইল বছর বছর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে তার সীমানা বৃদ্ধি করে চলেছে। ফিলিস্তিনের জমি অবৈধ দখলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ইসরাইলের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না মুসলিম বিশ্ব।

দেশটির সঙ্গে তাই কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই দেশগুলোর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম বিশ্বের প্রধানকেন্দ্র সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় অবৈধ এ রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব মেনে নেয়া বা না নেয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। ইসরাইলকে মেনে নিয়ে তাকে স্বীকৃতির একটা ইঙ্গিত এরই মধ্যে দিয়েছে সৌদি আরব।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মার্কিন পত্রিকা দ্য আটলান্টিককে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘নিজেদের ভূমিতে বসবাসের পূর্ণ অধিকার রয়েছে ইসরাইলের’। এখানেই থামেননি তিনি। আরেকটু বাড়িয়ে তিনি বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং আমরা যদি ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও শান্তি স্থাপন করতে পারি তাহলে মিসর, জর্ডানসহ পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত আরব দেশগুলো ব্যাপক লাভবান হবে।

সৌদি যুবরাজ তার এ বক্তব্যে কার্যত পররাষ্ট্রনীতিতে তাদের দীর্ঘ অবস্থান পরিবর্তন করে ইসরাইলকে স্বীকৃতির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্ষমতার স্বাদ পেতেই মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

সৌদি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফুয়াদ ইব্রাহিম মনে করেন, আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনগণ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। সৌদি আরবেও ভেতরে ভেতরে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায় রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে একত্রিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রাজতন্ত্রবিরোধী বা কোনো উগ্র গোষ্ঠী যাতে বাদশাহর আসন গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন।

তিনি নিজেকে সৌদি আরবের প্রকৃত শাসক ও সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। তবে সৌদি পররাষ্ট্রনীতিতে এই পরিবর্তন ফিলিস্তিনিদের আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বৈ আর কিছু নয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে