আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ২০টি মুসলিম সংগঠন শনিবার এক যৌথ মঞ্চ গঠন করেছেন। তারা মুসলমানদের দাবী আদায়ের এক সাথে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জী।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতার নেতৃত্বাধীন সরকার মুসলমানদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির একাংশও পূর্ণ করতে পারেন নি - এই অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই সংগঠনগুলির এক সম্মেলন থেকে।
পরের বছরের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলমানদের অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও চাকরীর সুবিধাসহ সামাজিক উন্নয়নের দাবীগুলি যে দল মেনে নেবে, তাদের পক্ষেই মুসলমানরা রায় দেবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সম্মেলনে।
কলকাতায় যে কুড়িটি মুসলিম সংগঠন যৌথ মঞ্চ গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিল, তারা বলছে যে রাজ্যের মুসলমানরা বহু সম্প্রদায়, রাজনৈতিক দল আর ছোট ছোট সংগঠনে বিভক্ত হয়ে থাকার ফলে সবসময়েই ক্ষমতাসীন দলগুলি সেই সুযোগ নিয়েছে। কোনও সরকারই মুসলমানদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা শিক্ষা ও চাকরীর সুবিধার দিকে নজর দেয় নি।
এই যৌথ মঞ্চের প্রধান হিসাবে সকলেই মেনে নিয়েছেন রাজ্যের সবথেকে বড় ঈদের জমায়েত পরিচালনা করেন যে বর্ষীয়ান ইমাম, সেই ক্বারী ফজলুর রহমানকে।
তিনি বলছিলেন, “বিভিন্ন ছোট সংগঠনে বিভক্ত হয়ে থাকার ফলে সরকারের কাছে আমাদের দাবীগুলো ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না। সেজন্যই একজোট হয়ে যদি একটা বড় মঞ্চ আমরা গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমাদের দাবীগুলো নিয়ে আমরা সোচ্চার হতে পারব, সরকারের কাছে পৌঁছতে পারব।“
এই সম্মেলনে যাঁরা যোগ দিতে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কোনও পরিচিত মুসলমান রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। মুসলমানদের এলাকাভিত্তিক সংগঠন, ইমাম-মোয়াজ্জিনদের সংগঠন বা মাদ্রাসা সংগঠনগুলি যেমন সম্মেলনে এসেছিল, তেমনই ছিলেন অনেক মুসলমান অধ্যাপক, চিকিৎসক ও বুদ্ধিজীবিও।
এরকমই একটা সংগঠন, হাজি মুহম্মদ মহসীন মুসলিম উন্নয়ন সমিতির প্রধান বজলে রহমান বলছিলেন, মুসলমানদের জন্য একটা প্রেসার গ্রুপ তৈরী করাই তাঁদের উদ্দেশ্য।
“আমরা সবাই মিলে একটা রাজনৈতিক সংগঠন গড়ব, এটা অবাস্তব ভাবনা। কিন্তু একটা অরাজনৈতিক প্রেশার গ্রুপ যদি আমরা তৈরী করতে পারি, যেটা বিশেষ কোনও দলের লেজুড়বৃত্তি করবে না তবে আমাদের দাবীগুলো তুলে ধরে জোরের সঙ্গে বলতে পারবে যে, যারা আমাদের দাবী মানবেন, ভোট তাকেই দেব,” বলছিলেন বজলে রহমান।
এই সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা – অল বেঙ্গল মাইনরিটি ইয়ুথ ফেডারেশনের প্রধান, মুহম্মদ কামরুজ্জামানের কথায়, “যে দল আমাদের সাহায্য করবে, তাদেরকেই সমর্থন করব। কোনও সরকার যদি সংখ্যলঘু উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনীহা দেখায়, অবজ্ঞা করে, তাদের উচিত শিক্ষা দেব গণতান্ত্রিক রায়ের মাধ্যমেই।“
এই সম্মেলনের যে দাবী সনদ তৈরী হয়েছে, তার জন্য রাজ্যের মুসলমানদের সমস্যাগুলি একটি সমীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মুসলমানদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদ তৈরী করা, শিক্ষা আর চাকরীর ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতিগোষ্ঠীর অধীনে সংরক্ষন, ওয়াকফ সম্পত্তির নয়ছয় বন্ধ, বেসরকারী মাদ্রাসাগুলিকে সহায়তার মতো দাবীগুলি রয়েছে। সূত্র: বিবিসি
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস