শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৮, ০৬:১২:০৬

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ইরানি সেনাসহ নিহত ১৪

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ইরানি সেনাসহ নিহত ১৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলের একটি সরকারি বিমানঘাঁটিতে ভোরবেলা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এতে মিত্র ইরানি সৈন্যসহ মোট ১৪ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। ব্রিটেন ভিত্তিক পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটস সোমবার এ কথা জানিয়েছে। তারা জানায়, ‘টি-ফোর বিমানবন্দরে ওই হামলায় অন্তত ১৪ সেনা নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ইরানি বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে।’

এ হামলার জন্য কারা দায়ী তা পরিষ্কার হয়নি। তবে এ জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে সিরিয়া ও তার প্রধান মদদদাতা রাশিয়া। হোমসে যে বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয় তার কাছে অবরুদ্ধ দোমা শহরটি অবস্থিত। এই শহরে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের হামলায় অসংখ্য লোক নিহত হওয়া নিয়ে যখন চাপের মধ্যে সিরিয়া সরকার তখনই বিমানঘাঁটিতে হামলার ঘটনায় ইসরাইলকে দায়ী করছে দেশটির সেনাবাহিনী। একই কথা বলছে রাশিয়ায় সেনাবাহিনীও। তবে এই অভিযোগের বিপক্ষে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইল।

রুশ সেনাবাহিনী জানায়, লেবাননের আকাশসীমা থেকে দু’টি ইসরাইলি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আটটির মধ্যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে বলেও দাবি করে তারা। এই অভিযোগের ব্যাপারে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্রকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি।

লেবাননে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি বিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র অনেক নিচু হয়ে সিরিয়ার দিকে ছুটে যাচ্ছে। এই হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই ইরানি নাগরিক কিংবা ইরান সমর্থিত বাহিনীর সদস্য।

দামেস্ক সংলগ্ন সর্বশেষ বিদ্রোহী ঘাঁটি ছিল পূর্ব গৌতা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে বলা হয়, শুক্রবার (৬ এপ্রিল) রাত থেকে শনিবার (৭ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত রাসায়নিক গ্যাস হামলায় পূর্ব গৌতার দোমা শহরে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে। বাশার বাহিনীর বিষাক্ত সারিন রাসায়নিক গ্যাস হামলায় তারা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোয়াইট হেলমেট। সিরিয়া অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছে। তবে রোববার এ ব্যাপারে সিরীয় সরকারকে হুঁশিয়ার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এর জন্য বাশার আল আসাদ সরকারকে চড়া মূল্য দিতে হবে। রাশিয়াও দাবি করেছে দোমা রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এর অল্প পরে সোমবার সেখানকার এক বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর জানা যায়। সিরিয়ান টিভির খবরে বলা হয়, ‘সোমবার ভোরে হোমস শহরে টি ফোর বিমানঘাঁটির কাছে প্রচণ্ড রকমের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।’ সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, ‘তায়ফুর বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।’

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেখানে বিমান প্রতিরক্ষা বিভাগ কাজ করছে। তাইয়াস নামের ওই বিমানঘাঁটি হোমস ও প্রাচীন শহর পালমিরার মাঝামাঝিতে অবস্থিত। ঘাঁটিটি মূলত রুশ সেনাবাহিনী ব্যবহার করে। তবে হামলায় তাদের কোনো বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

সিরিয়ার সেনা সূত্র জানায়, বিমানবাহিনীর সদস্যরা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছোড়া আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিমানঘাঁটিতে বিপুলসংখ্যক রুশ সেনা মোতায়েন আছে। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালাতে এখান থেকেই বিমানগুলো উড়ে যায়। প্রথমদিকে সিরিয়ার গণমাধ্যমগুলোর খবরে এ হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা হয়। তবে পরের খবরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নাম মুছে দেয়া হয়।

সকালে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, ‘টি ফোর বিমানঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি বিমান হামলার মধ্য দিয়ে যে আগ্রাসন চালানো হয়েছে তা মার্কিন হামলা বলে মনে হচ্ছে।’ তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর সে অভিযোগ অস্বীকার করে।

পেন্টাগন জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এ সময়ে সিরিয়ায় কোনো বিমান হামলা চালায়নি। তবে তারা পরিস্থিতির ওপর ‘গভীর নজর রাখছে’ এবং সিরিয়ায় যারা রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালিয়েছে তাদের জবাবদিহিতার জন্য চলমান কূটনৈতিক উদ্যোগকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ওই বিবৃতিতে জানিয়েছে।

এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র সিরীয় বিমানঘাঁটিতে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সরকারি বাহিনীর সারিন গ্যাস হামলায় বেশ ক’জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এ হামলা চালানো হয়েছিল।

গত বছর সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা খান শেইখুনে রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওই বছরের এপ্রিলে দেশটির শায়রাত সামরিক বিমানক্ষেত্রে ৫৯টি টমাহক ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরের প্রথমদিকে সিরিয়ার লক্ষ্যস্থলগুলোতে ইসরাইলও বড় ধরনের হামলা চালিয়েছিল। সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটির সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে অতীতে ইসরাইলকে হামলা চালাতে দেখা গেছে।

বাশার আল আসাদ সরকারের পক্ষের ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের ঘাঁটি ও বহরেও হামলা করেছিল ইসরাইল। তবে সোমবারের হামলার ব্যাপারে রয়টার্সের পক্ষ থেকে এক ইসরাইলি মুখপাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে