আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কুয়ালালামপুরে শনিবার ভোরে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়েছিলেন ফিলিস্তিনি বিজ্ঞানী ড. ফাদি আল বাচ। আজান শুনে ফজর নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিলেন তিনি।
কিন্তু নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে কিছু দূর যেতেই পরপর ১০টি গুলি ছুটে আসে তার দিকে। এর মধ্যে চারটি গুলি শরীরে লাগলে লুটিয়ে পড়েন ড. ফাদি।
আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ৩৫ বছর বয়সী এ তরুণ ছিলেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সিনিয়র সদস্য।
ইসলামিক জিহাদ আন্দোলনের গাজা শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা খালিদ বাচ তার চাচাতো ভাই।
কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়েও ড. ফাদি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিলেন তার প্রতিভার কারণে।
তিনি ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। রকেট নির্মাণে পারদর্শিতার জন্যও খ্যাতিমান ছিলেন।
মালয়েশিয়ায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত আনওয়ার এইচ আল আগা বলেন, ফাদি ছিলেন তার বাসার কাছাকাছি মসজিদটির দ্বিতীয় ইমাম। ১০ বছর ধরে তিনি মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন।
শনিবারই একটি সম্মেলনে যোগ দিতে তার তুরস্ক যাওয়ার কথা ছিল। ফিলিস্তিনে সক্রিয় একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। নিহত ফাদির স্ত্রী ছাড়াও তিন সন্তান রয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ফিলিস্তিনি ড্রোন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আল জাওয়ারিকে তিউনিশিয়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তাকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছিল হামাস।
বিদেশের মাটিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মীদের হত্যার কুখ্যাতি রয়েছে ইসরাইলি গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের।
তড়িৎ প্রকৌশলী ফাদি কুয়ালালামপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।
হামাস জানিয়েছে, এই তরুণ বিজ্ঞানী হামাসের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও ফিলিস্তিনি তরুণ পণ্ডিতদের একজন। আন্তর্জাতিক বিদ্যুৎ খাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেন, আমাদের পণ্ডিত, যুবক ও সন্তানদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।
ফাদি বাচের দাফনের আয়োজনে মুখোশ পরা ১০ হামাস যোদ্ধাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। শোকগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের হাতে ছিল তার ছবিসংবলিত পোস্টার।
এই তরুণ ফিলিস্তিনি ২০১৫ সালে মালয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্রিটিশ মালয়েশিয়ান ইনস্টিটিউটের সিনিয়র প্রভাষক ছিলেন তিনি।
গবেষণায় তার আগ্রহের বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল- বৈদ্যুতিক রূপান্তর, বৈদ্যুতিক মান ও নবায়ন যোগ্য জ্বালানি।
ইসরাইলের গনমাধ্যমগুলোর দাবি, তিনি ফিলিস্তিনের ড্রোন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি বলেন, ফাদি ছিলেন একজন তড়িৎ প্রকৌশলী ও রকেট নির্মাণে বিশেষজ্ঞ।
তিনি মাইকেয়ার নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া আল আকসা ফাউন্ডেশন ও আই৪সিরিয়ার হয়েও বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন।
মাইকেয়ারের প্রধান নির্বাহী কামরুল জামান শাহারুল আনওয়ার বলেন, ড. ফাদি প্রকৌশলগত উৎকর্ষতার জন্যই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমি মনে করে বিজ্ঞানী হিসেবে তার দক্ষতার কারণেই শত্রুতা থেকে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ছাড়া গাজা উপত্যকার উন্নয়নে নিহত ফাদি অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন বলে জানান শাহারুল।
২০১৬ সালে মালয়েশিয়া সরকার এ প্রকৌশলীকে বিজ্ঞান পুরস্কার দিয়েছে। মৃত্যুর আগে তিনি ১৮টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।
এ ছাড়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বর্জন, পরিত্যাগ ও নিষেধাজ্ঞা (বিডিএস) কর্মসূচির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
গাজার খান ইউনিসে তার জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। যাতে কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ফাদির সৎগুণের বর্ণনা দিতে গিয়ে মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আহমাদ আবু বাকার বলেন, তাকে দুই বছর আগ থেকে আমি চিনতাম। তিনি ছিলেন খুবই বন্ধুসুলভ। তিনি ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারের বিরোধিতা করতেন। ফাদি মানুষকে সেই কথাগুলোই কেবল বলতেন, যেগুলোতে উপকৃত হওয়া সম্ভব।
ড. ফাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় ছিলেন। গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ছয় সপ্তাহব্যাপী গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন বা মহান ঘরে ফেরার বিক্ষোভের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি টুইট করেছেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস