আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ‘আমি কাল শুনলাম আমার চোখের জলটা নাকি নাটক??? তোর সেটা মনে হতেই পারে। তাই আমি তোর জীবন থেকে চলে গেলাম…।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ভারতের এক কিশোর।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, রোববার দুপুরে দমদম থানা এলাকা নয়াপট্রির দুর্গাবতী কলোনিতে বিশ্বজিৎ দাস নামে এ যুবক আত্মহত্যা করে।
খবরে আরো প্রকাশ পায়, বাড়িতে সিলিংয়ের বাঁশে ওড়নার ফাঁস থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় বিশ্বজিৎ দেখা যায়। এরপর ঘরের দরজা ভেঙে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ২টা ৩৯ মিনিটের দিকে বিশ্বজিৎ তার ফেসবুকে একটি গ্রাফিক কার্ড ‘পোস্ট’ করে। সেখানে লেখা ছিল, ‘বড় লোকের ভালবাসা প্রকাশ পায় দামি দামি উপহারে! আর গরিবের ভালবাসা প্রকাশ পায় দু’ফোঁটা চোখের জলে’!
ওই ‘পোস্টে’ই নিজের মনের ভাব বোঝাতে কিশোর লিখেছে, ‘সবাই ভাল থেকো, সবাই সুখে থেকো, কখনও মন খারাপ করো না, আর কখনও কারও মন নিয়ে খেলা করো না’!
এর ৩১ মিনিট পরেই সিলিং ফ্যানে দড়ির ফাঁস লাগানো ছবিও ‘পোস্ট’ করা হয়েছে বিশ্বজিতের প্রোফাইলে। চার মিনিটের মাথায় আবার একটি ‘পোস্ট’।
লেখা, ‘সব মানুষই ভালবাসে। কিন্তু প্রথম ভালবাসার মানুষকে খুব কম মানুষ পায়। কারণ, যে আপনাকে প্রথম ভালবাসতে শেখায়, আপনাকে প্রথম কষ্টও সে-ই দেবে।’ পরে এই লেখাই ‘কভার ফোটো’ করে বিশ্বজিৎ।
প্রথম লেখায় একজন মন্তব্যও করেছেন, ‘ঠিকই বলেছো ভাই’। ‘কভার ফোটো’ করা লেখাটি একজন ‘শেয়ার’ করেছেন।
তবে পরিবারের দাবি, বিশ্বজিতের মৃত্যুর আগে সে সব বিষয়ে কিছুই টের পাননি অভিভাবকেরা।
মৃতের মা সুমিত্রা জানান, স্থানীয় এক কিশোরীর সঙ্গে ছেলের এক বছর ধরে ঘনিষ্ঠতা ছিল। সম্প্রতি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় মেয়েটির। তা নিয়ে ক’দিন ধরেই সেই কিশোরীর সঙ্গে অশান্তি চলছিল বিশ্বজিতের।
পরিজনদের অনুমান, সে জন্যই শুক্রবার বিশ্বজিৎ লেখে, ‘আমি কাল শুনলাম আমার চোখের জলটা নাকি নাটক??? তোর সেটা মনে হতেই পারে। তাই আমি তোর জীবন থেকে চলে গেলাম…।’
বিশ্বজিতের বাবা খোকন দাস পেশায় রিকশাচালক। বিশ্বজিৎ নিজে মাধ্যমিক পাশ করতে পারেনি। একটি প্রেশার কুকারের কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিল।
বিশ্বজিতের মায়ের অনুমান, সে সব কারণেই বিশ্বজিতের সম্পর্কটি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেনি ওই কিশোর।
মৃত কিশোরের পরিজনরা জানিয়েছেন, রোববার ঘটনার সময়ে বাড়িতে কেউ ছিলেন না। মায়ের সঙ্গে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফোনে কথা হয়। এর পরে দুপুরে বারবার ফোন করে সাড়া না পেয়ে বিশ্বজিতের কাকিমাকে ফোন করেন সুমিত্রা। এর পরেই কিশোরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
সোমবার সুমিত্রা বলেন, ‘এই সামান্য কারণে কেউ এমন করতে পারে? বাবা-মায়ের কথা ভাববে না!’
ঘটনাটি শুনে মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেওয়া বিচিত্র নয়। সোশ্যাল মিডিয়া এখন মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে। সেগুলো ধরতে বা বুঝতে পারলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু তা অনেকেই ধরতে পারেন না।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস