বিতান ভট্টাচার্য : ভিড় ঠেলে প্ল্যাকার্ড সংগ্রহ করে চলেছে ভুটু। একই রকম পোশাকের এত মোটরবাইক আরোহী আগে দেখেনি সে। প্রথমটায় হাত পাতার চেষ্টা করলেও টিফিনের প্যাকেট থেকে ভাঙা কেকের টুকরো ছাড়া বিশেষ কিছুই জোটেনি।
কাঁধে প্ল্যাকার্ডের গোছা নিয়ে ব্যস্ত পায়ে ফুটপাথ ধরে ছুটছে সে! বাঁশের মাথায় সাঁটানো প্ল্যাকার্ডগুলি নিয়ে বেসামাল অবস্থা। প্রচুর জ্বালানি জোগাড় হয়েছে। পাছে তা হাতছাড়া হয়ে যায়, তাই ভরদুপুরে ব্যস্ত বছর তিনেকের ভুটু!
নীল গেঞ্জি হাঁটু পর্যন্ত ঝুলছে। প্যান্টের বালাই নেই। ঠা-ঠা রোদে খালি পায়ে ছুটতে থাকা ভুটুকে কে যেন প্রশ্ন করলেন, ‘‘এগুলো দিয়ে কী হবে?’’ থমকে দাঁড়িয়ে উত্তর, ‘‘চুলা জ্বলবে, মা রান্না করবে।’’
রবিবার দুপুর ১২টা। সদ্য শেষ হয়েছে কলকাতা পুলিশ আয়োজিত ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফে’র বার্তা প্রচার করা মোটরবাইক র্যালি। সকালে হাজরা মোড় থেকে বেরনো ২৪৮ জন বাইকারের র্যালি শেষ হয়েছে হাজরা মোড়েই। খুলে ফেলা হচ্ছে মোটরবাইকে লাগানো প্ল্যাকার্ডগুলি। চলছে শংসাপত্র, টিফিন বিতরণ, চক্ষু পরীক্ষা শিবির।
এরই মধ্যে ভিড় ঠেলে প্ল্যাকার্ড সংগ্রহ করে চলেছে ভুটু। একই রকম পোশাকের এত মোটরবাইক আরোহী আগে দেখেনি সে। প্রথমটায় হাত পাতার চেষ্টা করলেও টিফিনের প্যাকেট থেকে ভাঙা কেকের টুকরো ছাড়া বিশেষ কিছুই জোটেনি। তবে বাইকআরোহীদের চেয়ে ভুটুর নজর বেশি রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা কয়েকশো খালি জলের বোতলের দিকে। সেগুলি কুড়িয়ে মাকে ডেকেছে বিক্রির ব্যবস্থা করতে।
মা সাবিনা তো ছেলের কাণ্ড দেখে অবাক! খালি বোতল বিক্রি করতে তৎপরতা শুরু করেছেন তিনিও। ততক্ষণে ভুটু প্ল্যাকার্ডের গোছা কাঁধে নিয়ে হাঁটা দিয়েছে হাজরা পার্কের পিছন দিকে।
তার সম্বল নামটুকুই। পদবী নেই। ঠিকানা নেই। সাবিনা বলছিলেন, ‘‘যার সঙ্গে থাকি, তাকে নেশার টাকা না দিতে পারলে মার খেতে হয়। ও তো সবই দেখে। তাই যখনই পারে আমাকে সাহায্য করে।’’
সাবিনা থামতে চান না, অনর্গল বলতে থাকেন, তাঁর আর ভুটুর রোজনামচা। ভুটুর মায়ের কথায়, ‘‘অনেকদিন তো রান্নাই হয় না। আজ অন্তত দেড়দিনের রান্নার জোগাড় হল। বাজার থেকে ছাঁট মাংস আনব। মাংস-ভাত রান্না করব।’’ ছেলেটা কবে শেষ মাংস খেয়েছে মনে করতে পারেন না সাবিনা। মাংসের কথা শুনে ভুটুর মুখে চওড়া হাসি।
হতবাক বাইকারদের কয়েকজন হাততালিও দেন, র্যালি সাফল্য দিক না দিক, ভুখা পেটে আহার জুগিয়েছে।-এবেলা