রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯, ০৮:৪২:০৮

কাশ্মিরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ

কাশ্মিরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে ভারতের মূল ভূখন্ডে হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন কাশ্মিরি জনগণ। বৃহস্পতিবারের (১৪ ফেব্রুয়ারির) আত্মঘাতী ওই হামলা চালায় কাশ্মিরি তরুণ আদিল আহমেদ দার। কাশ্মিরিদের অভিযোগ, ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো তাদের হুমকি দেওয়ার বা তাদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত। 

ভারতজুড়ে কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে ডাক দেওয়া হয়েছে ধর্মঘট। রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এতে অচল হয়ে পড়ে কাশ্মির। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা কাশ্মিরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর হুমকি-মারধরের শিকার বা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া কাশ্মিরিদের আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বহু ভারতীয় নাগরিক।

৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কাশ্মিরের বাসিন্দারা। তৎপর গোষ্ঠীগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতা চাইলেও, অনেকেই কাশ্মিরকে পাকিস্তানে অঙ্গীভূত করার পক্ষে। তিন দশক ধরে চলা কাশ্মির বিরোধে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার। ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের’ গাড়ি বহরে আরডিএক্স বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে প্রাণ হারায় বাহিনীটির অন্তত ৪০ জন সদস্য। হামলার পর পাকিস্তানভিত্তিক  জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ স্বীকার করে জানায়, কাশ্মিরের পুলওয়ামার  স্থানীয় বাসিন্দা আদিল আহমেদ দার ওই হামলা চালিয়েছে।

বৃহস্পতিবারের হামলার ঘটনার পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী কাশ্মিরি জনগণ হুমকি-হামলা শিকার হয়েছেন, বাধ্য হয়েছেন বাড়ি ছাড়তে। নিসার আহমেদ (২৩) ছদ্মনামের এক শিক্ষার্থী উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুনের একটি প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ্যার শিক্ষার্থী। আত্মঘাতী হামলার পর শুক্রবার সুধাওয়ালা এলাকায় দুই কাশ্মিরি শিক্ষার্থীকে একটি সংঘবদ্ধ দল নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়েছে। শনিবার ওই এলাকায় প্রায় ৭০ জনের একটি দল মিছিল করেছে। ওই মিছিলে স্লোগান দেওয়া হয়েছে, ‘বিশ্বাসঘাতক কাশ্মিরিদের গুলি কর, তাড়িয়ে দাও।’ নিসারের ভাষ্য, ‘হামলার পর আমরা ঘর থেকে বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছি না।  এখানকার পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। আমরা অনিরাপদ বোধ করছি। আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই। কিন্তু কীভাবে যাবো বুঝতে পারছি না। ঘরে থাকা প্রয়োজনীয় সামগ্রী শেষ হয়ে গেলেও, আমরা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছি।’

দেরাদুনের একটি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা আসমা আশরাফ (২৪) আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীটি হোস্টেল ঘিরে রাখায় তারা প্রাণ নিয়ে শঙ্কায় আছেন।  আসমা জানিয়েছেন, সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীটি কলেজ কর্তৃপক্ষকে কাশ্মিরিদের বের করে দিতে বলেছে।

উত্তর কাশ্মিরের বারামুল্লাহ জেলা থেকে আসা মুহাম্মদ দাউদ (২৩) দেরাদুনে ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা করেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ‘হিন্দু ডানপন্থীদের সংঘবদ্ধ হামলার পর বাইরে বের হতে পারছি না। সংঘবদ্ধ দলটি আমাদের ঘরে প্রবেশ করলে বাড়িওয়ালি আমাদের রক্ষা করেন। আমি বাথরুমে পালিয়েছিলাম।’ দাউদ জানান, তারা ২০ জন শিক্ষার্থী একটি বাড়িতে থাকেন।  

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে থাকা ২৫ বছর বয়সী সারা খুরশিদ আল জাজিরাকে জানিয়েছন, ‘হামলার পর কাশ্মিরিদের সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। গতকাল আমি কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। এক পথচারী আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠল এবং বলল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এসব কাশ্মিরিরা না কি খুশি হয়েছে। ভয় হচ্ছে, বাড়িওয়ালা হয়তো আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেবে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে