মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৯, ০২:১৮:৫০

কারাগারের ভেতরেই ‘খুন’ হতে পারেন মসজিদে হামলাকারী ব্রেনটন

কারাগারের ভেতরেই ‘খুন’ হতে পারেন মসজিদে হামলাকারী ব্রেনটন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলাকারী ব্রেনটন ট্যারেন্টকে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত রিমান্ড দিয়েছে আদালত। ৫০টি তরতাজা প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী জেলে নাকি সবচেয়ে ‘টার্গেটেড’ ব্যক্তি বলে দাবি করেছেন বিশ্লেষকরা।

নিউ জিল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউ জিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৮ বছর বয়সী ব্রেনটনকে নাকি ইতোধ্যেই সতর্ক করেছে জেলের একাধিক গ্যাং সদস্যরা। তাদের মধ্যে একজন বলেছেন, ‘আমাদের ভেতরেও (জেলে) বন্ধুবান্ধব আছে।’ তিনি এর বেশি কিছু না বললেও ব্রেনটনের বর্তমান পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয় তার আভাস দিয়েছেন।

ক্যানটারবারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধী বিশেষজ্ঞ গ্রেগ নিউবোল্ড জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময় জেলে পার করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘হুমকিগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। আমি তা খুব সিরিয়াসলি নিতাম। আমি বলবো, তিনি (ব্রেনটন) খুব ভয়াবহ বিপদে আছেন।’

গ্রেগ নিউবোল্ড আরও বলেন, ‘জেলে এমন অনেক মানুষই থাকবে যারা এই হামলার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং বিশেষ করে তার (ব্রেনটন) শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী হওয়ার বিষয়েও। ’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলের বেশিরভাগ আসামিরাই শ্বেতাঙ্গ নন এবং যেহেতু সেখানে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা সংখ্যালঘু তাই ব্রেনটন খুব সহজেই তার মতো কারোও সঙ্গে জোট গঠন করতে পারবেন না।’

তবে জেলে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের সামান্য সুবিধা আছে বলে আরও জানান নিউবোল্ড। তিনি বলেন, ‘যদি আদালতে ব্রেনটনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাহলে তাকে অকল্যান্ডের জেলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হতে পারে।’

‘তার জীবনের বাকি সময় সে জেলেই নির্বাসিত হিসেবে কাটিয়ে দিতে পারেন এবং আগামী ৫-১০ বছর ব্রেনটন একজন “বাস্তবিক” নির্জন বন্দী হিসেবে সময় কাটিয়ে দিতে হবে।

‘জেলে এমন অনেকেই আছেন যারা সেকেন্ডের মধ্যে ব্রেনটনের সন্নিকটে যেতে পারবেন। আর তাই অবশ্যই তাকে নির্জন কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।’ ‘সে যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাকে দীর্ঘ সময় বন্দী থাকতে হবে এবং তাকে বেশিরভাগ সময় নিজের কারাকক্ষেই থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্রেনটনকে খুব সহজেই জেলে হত্যা করা যেতে পারে। তাই সেখানে তার আশেপাশে অধিক মানুষের সমাগম করতে দেওয়া যাবে না।’

নিউবোল্ড আর বলেন, ‘দেশে বেশিরভাগ স্বজাতবাদীরা হিটলারের মতাদর্শে চলেন না। তারা এশিয়ার, মুসলিম কিংবা কৃষ্ণাঙ্গদের পচ্ছন্দ করেন না ঠিক আছে। তবে এভাবে হত্যা করার পক্ষেও নন। তার তাই খুব সহজেই তারা একত্রিত হয়ে তার (ব্রেনটন) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারেন।’

এদিকে হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন ট্যারান্টকে কারাগারে ‘চিহ্নিত ব্যক্তি’ হিসেবে রাখা হবে। কারাগারে তার নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় তাকে নির্জন প্রকোষ্ঠে রাখা হবে।

ফৌজদারি মামলার আইনজীবী স্যার কিম ওয়ার্কম্যান বলেছেন, নিরপেক্ষ সূত্রের কাছ থেকে তিনি জেনেছেন, ট্যারান্ট কারাগারে বিপদে পড়তে পারেন। তার নিরাপত্তার জন্যই মূলত তাকে নির্জন প্রকোষ্ঠে রাখা হবে।

আইনজীবী ওয়ার্কম্যান আরও বলেন, তার অভিজ্ঞতা হলো, যখনই কেউ নির্জন প্রকোষ্ঠে থাকার সুযোগ পান, তখন তারা পালানোর উদ্যোগ নেন। তা অনেক ক্ষেত্রেই হয় কারাবাসের শুরুর দিকে কিংবা হেফাজতে থাকা অবস্থায়। তাই ট্যারান্টকে নির্জনে রাখা হলেও ‘সর্বোচ্চ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করা হবে, যাতে কোনো কয়েদিই তার কাছে যেতে না পারেন।

প্রসঙ্গত, ১৫ মার্চ শুক্রবার নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় ৫০ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন, অর্ধশতাধিক। এই সন্ত্রাসী হামলার সময় আল নূর মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। তারা মসজিদে ঢোকার কিছুক্ষণ আগে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। ফলে অল্পের জন্য বেঁচে যান টাইগাররা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে