আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের প্রস্থানের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে দৃশ্যমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান।
দুই দিন আগেও ইরান ইস্যুতে অনমনীয় ট্রাম্প এখন তেহরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সম্ভাবনাকেও নাকচ করে দিচ্ছেন না। তবে তিনি মনে করেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানো যেতে পারে।
যদিও এ বিষয়টি মোটেই মনঃপূত নয় রুহানির। সাবেক অবস্থানে অনড় থেকে তিনি জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরান আলোচনায় বসবে না। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যত দিন তাঁর দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ রাখবে, তত দিন ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরান আলোচনায় বসবে না।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ছাড়া আলোচনা হবে অর্থহীন। গত বুধবার রাতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি এ অবস্থানের কথা জানান।
রুহানি বলেন, ২০১৮ সালের মে মাসে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালে দেওয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে। ইরান সরকার, পার্লামেন্ট ও জনগণ এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত যে যত দিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে, তত দিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপের প্রশ্ন উঠবে না।
পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য ও জার্মানির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় পরমাণু কার্যক্রমের লাগাম টানার বিনিময়ে ইরানে ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে এ চুক্তি থেকে গত বছর বেরিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সম্প্রতি ইরান পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫ সালের পরমাণু সমঝোতার কিছু ধারার বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার বিষয়ে রুহানি বলেন, সমঝোতাকারী দেশগুলো যদি নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে, তাহলে তেহরান ওই সমঝোতার শর্ত পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেই শুধু আলোচনায় বসার প্রসঙ্গ আসতে পারে।
এ সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতা যাতে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে বৈঠক করতে চান। এ বৈঠকের জন্য কোনো শর্ত থাকবে না।
পরদিন বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের চিন্তা করলে তা বিপজ্জনক হবে। আগের দিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে বরখাস্ত করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি আলোচনায় বসলে দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে এখনো সম্ভাবনা আছে; এ দেশ দুটি নিয়ে আমরা উচ্চপর্যায় থেকে কাজ করছি। ইরানের জনগণ খুবই ভালো; আমরা সেখানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছি না। ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র বানানোর সুযোগ দেব না; তারা কখনো পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে না। যদি তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের চিন্তা করে থাকে তাহলে তারা ভুল করবে। কারণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। খুব, খুবই বিপজ্জনক, ঠিক আছে?’ সূত্র : এএফপি।