বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৩:৫৪

'যোগী-মোদি দু'‌জনে নিঃসন্তান বলেই কি আমাদের সন্তানরা ম'রবে?'

'যোগী-মোদি দু'‌জনে নিঃসন্তান বলেই কি আমাদের সন্তানরা ম'রবে?'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে পুলিশের গু'লিতে র'ক্ত। আসামের চাইতেও উত্তরপ্রদেশের মৃ'তের সংখ্যা অনেক বেশি। আর মৃ'তের পরিবারগুলির সবারই প্রশ্ন, 'কী দো'ষ ছিল আমার সন্তানের? ওকেই কেন?' 

একটি সংবাদমাধ্যম উত্তরপ্রদেশের নেহতর শহরে গিয়ে কথা বলে এসেছে একাধিক পরিবারের সঙ্গে। সেখান থেকেই পাওয়া গিয়েছে কিছু বিশেষ তথ্য। বেশির ভাগ পরিবারের কাছেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য জানানোর সুবিধা না থাকায় তথ্যগুলি অ'ন্ধ'কারেই থেকে গিয়েছিল।

নেহতর শহরটিতে প্রায় ৫০,০০০ মানুষের বাস। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষ মুসলিম। এই শহর থেকে প্র'তিবা'দ বা বি'ক্ষো'ভের খবর তেমন কানেও আসেনি কারওর। তাও এই শহর থেকেই সবথেকে বেশি মৃ'তদেহ বের হল?

প্রথমে আসা যাক, দু'চারটে কথায়। রাফিক আহমেদ, ৫৫। শুক্রবারের নামাজ পড়ে মসজিদের বাইরে পা রাখতেই এক পুলিশ এসে তাঁকে মাইকে বক্তব্য রাখতে বললেন। কথামতো রাফিক মাইক তুলে বললেন, 'সবই শান্তি বজায় রেখে বাড়ি ফিরুন। কেউ পাথর ছুঁড়বেন না।' 

আহমেদ মনে মনে ভাবছিলেন, কেন বলতে বললেন? দরকার ছিল কি? খুব বেশি হলে ১০০ টা লোক রাস্তায় বেরিয়েছে এখানে। তাও শুক্রবারের নামাজ পড়তেই। কোনও প্র'তিবা'দ মিটিং পর্যন্ত হয়নি। এরপরেই তার চোখে পড়ল কয়েকজন লোক সিভিল পোশাক পরে হাতে লা'ঠি নিয়ে ঘো'রাফেরা করছেন। 

সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেসও করলেন আহমেদ। কিন্তু নেই, উত্তর নেই। যাই হোক, বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলেন তিনি। কানে এলো কাঁ'দানে গ্যাস ছোড়ার আও'য়াজ। কিছু বোঝার আগেই মাথায় পড়ল লা'ঠি। হাত দিয়ে র'ক্তটা চেপে ধরলেন মাথাটা। সংবাদমাধ্যমকে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার সময় বললেন, 'অবা'ক হয়ে গিয়েছিলাম। না পাথর ছো'ড়া হয়েছে, না অন্য কিছু। তাও পুলিশের এই অবস্থান।'

এরপর সামসুদ্দিন, এক প্রবীণ ব্যক্তি। একটি ভিডিও পাওয়া গিয়েছিল যেখানে দেখা গিয়েছে, এক বৃদ্ধকে হ্যাঁ'চড়াতে হ্যাঁ'চড়াতে পুলিশ ভ্যানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দুজন পুলিশ। অন্য আরেক জন লাঠি হাতে হু'ম'কি দিচ্ছেন। জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধের নামই সামসুদ্দিন। তাঁর বাঁ-পা অকে'জো। তার শরীর আংশিকভাবে প'ক্ষা'ঘা'তগ্র'স্ত। 

ভাই সিরাজউদ্দিনের মুখে জানা গেল, পুলিশ জো'র করে তাঁদের বাড়িতে ঢো'কে। দরজার হাতল ভে'ঙে দেয়। তারপর টা'ন'তে টা'নতে নিয়ে যায় বৃ'দ্ধ প্র'তিব'ন্ধী সামসুদ্দিনকে। ভাইয়ের মতে, মসজিদের পাশেই তাদের বাড়ি। তাই পুলিশ হা'ম'লা করেছে বোধহয়। সামসুদ্দিনের স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে পালি'য়ে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীর বাড়ি। এখনও কেউ জানেন না পুলিশ কোথায় নিয়ে গিয়েছে সামসুদ্দিনকে?‌

এর ১০০ মিটার দূরে মোহাম্মদ হাসিনের বাড়ি। এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে জানতে পারা গেল সেইদিনের কথা। স্ত্রী পায়ে পড়লেন পুলিশের, ভি'ক্ষে চাইলেন। তাও তার সামনে দিয়ে তার স্বামীকে টা'নতে টা'নতে নিয়ে গেল পুলিশ। কোথায়? তা কেই বা জানে! কেন? তাই বা কে জানে!

জারিনা খাতুন, বয়স ৬০। কথা বলতে বলতে গলা ভে'ঙে আসছিল তার। মা আর মেয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে চলে গেলেন। পুলিশ ঝ'ড়ের মতো এসে সবকিছু ত'ছন'ছ করে দিয়েছে। সেখানে আর থাকা যায় নাকি! বেসিন ভে'ঙে দিয়েছে। রান্নাঘরের বাসনপত্র সব ওলো'ট-পালো'ট।

সিলিং ফ্যান দু'মড়ে মু'চরে দিয়েও শান্ত হয়নি। টিভিটাকেও ভে'ঙে রেখে গিয়েছে। বাড়িতে ৫০,০০০ টাকা ছিল, তাও নিয়ে গিয়েছে। শেষে খাতুনের ছেলেকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায় পুলিশ। মা বললেন, 'পাথর ছো'ড়া তো দূরের কথা, ছেলে আমার সেইদিন নামাজ পড়তেও বেরোয়নি।

আরও একটি পরিবারের কথা। এক তরুণী, তার বৃদ্ধা মা, দুই ভাই। তাদের মধ্যে একজন ৫ বছরের। বড় ভাইটি অ'সু'স্থ ছিল। তাকে ধ'রে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। সঙ্গে গ্যা'স সি'লি'ন্ডারের পাইপ কেটে বার্নারের নব ভে'ঙে রেখে গিয়েছে। বলেছে, তারা যদি বেশি চি'ত্‍কার করেন, তাহলে মা মেয়ের দুজনের ই'জ্জ'তে হাত দেবে। 

এর অর্থ তো সবাই আমরা জানি। মেয়েটা চি'ত্‍কার বলে জিজ্ঞাস করছিল, মেয়েদের ঘরে এভাবে ঢু'কে পড়েন কী করে? ভিডিওটি দেখলে এসব কিছুই চোখে পড়বে আপনার। তখন মনে পড়বে যোগীর রাজ্যে ঘটে যাওয়া একের পর এক ধ'র্ষ'ণের কথা। পুলিশ হোক বা সাধারণ মানুষ। তারা যে পুরুষ।

প্রতিটি পরিবার তাদের বাড়ির ছেলেদের খোঁ'জে রয়েছে এখনও। পুলিশের কাছে গেলে তারা ফিরিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। সেই সংবাদমাধ্যম যখন থানায় গিয়ে কথা বলে, শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে কেউ কোনও উত্তর দেননি। সিনিয়র এসআই রামচন্দ্র সিং বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালানোর অ'ভিযো'গকে সম্পূর্ণ অ'স্বী'কার করেছেন। 

নি'রু'দ্দেশ হওয়া ব্যক্তিদের কথা জিজ্ঞেস করাতে বলেছেন, পরিবারদের মি'সিং ডায়েরি করতে হবে। পুলিশের খাতায় সবার নাম সাংবাদিক দেখতে পেয়েছেন কিন্তু মোহাম্মদ হাসিনের নাম পাওয়া যায়নি। তাকে আ'টকে রাখা হয়েছে নাকি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেটা পরিষ্কা'র নয়।

এবারে আসি, মৃ'তদের পরিবারের কাছে। শুক্রবার বিকাল চারটে নাগাদ পুলিশের সঙ্গে বি'ক্ষো'ভকারীদের সং'ঘ'র্ষ হয়। পুলিশের কথায় সেইদিন বি'ক্ষো'ভকারীরা পুলিশের গাড়িতে আ'গু'ন লাগিয়েছিল।

আনাস হুসেন, ২১। স্ত্রীয়ের কথামতো সাত মাসের বাচ্চার জন্য দুধ আনতে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন। জ্যেঠু বাড়ির ছাদ থেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কোথায় যাচ্ছেন আনাস?‌ উত্তর দিয়ে রাস্তা দিয়ে পেরোতেই আনাস রাস্তায় পড়ে গেলেন।

জ্যেঠু সেটা দেখেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সেখানেই শেষ নিঃ'শ্বাস ত্যা'গ করলেন আনাস। পুলিশের আনতাবড়ি গো'লাগু'লিতে আনাসের বাঁ চোখ দিয়ে গু'লি বেরিয়ে গিয়েছিল।

ওম রাজ সাইনি, এক কৃষক। ঐ অঞ্চল দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন, পুলিশের গু'লি তলপেটে গিয়ে বিঁ'ধেছিল। মেরঠের হাসপাতালে এখনও তার চিকিত্‍সা চলছে।

সুলেমান, বয়স ২০। সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। সারা রাত জে'গে পড়াশোনা করতেন। বাড়ির বাইরে তেমন বেরোতেন না। শুক্রবার বিকেলে মসজিদ যাচ্ছিলেন নামাজ পড়তে। বু'লেট তার ত'লপে'টে গিয়ে লাগে।

সবার মৃ'তদেহ নিয়ে যায় পুলিশ বিজনৌর থানায়। ময়'নাতদ'ন্তের সময় যেন পরিবারের কেউ না থাকেন, সেই নিষে'ধা'জ্ঞায় দেওয়া ছিল। পরদিন সকালে সত্‍কারের জন্য পরিবারের কাউকে দেহ নিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছিল না নেহতরে। 

পরিবারের কেউ রাজি না হওয়াতে তাদের বলা হয়েছিল যেন দেহগুলি স'ত্‍কারের জন্য কাছাকাছি কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। তাও নেহতর থেকে ২০ কিমি দূরে।

মহম্মদ সুলেমানের বাবা কাঁদতে কাঁ'দতে বললেন, 'মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী, কারওরই সন্তান নেই বলে আমাদের সন্তানদের বাঁ'চতে দেবেন না? আমাদের সন্তানদেরই কেন মে'রে ফেলছেন তারা?'

'সেই ১৯৮২-এর দাঙ্গার পর এই শহরে আবার ২০১৯ সালে র'ক্তগ'ঙ্গা বইল। এমনকি, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদের সময়ও একটা আঁ'চ পড়েনি এই শহরে। এখানে সবসময়েই শান্তি থাকত'। প্রবীণ বাসিন্দা মোহাম্মদ সামির আ'ক্ষে'প।

মৃ'ত রসিদ আহমেদের ১৭ বছর বয়সি ছেলে মহম্মদ জায়েদ খান বললেন, 'একটি প্র'তিবা'দ মিটিং পর্যন্ত হয়নি এখানে। তাতেই এই র'ক্তগ'ঙ্গা বইয়ে দিল প্রশাসন। যদি আমরা সত্যি সত্যি প্র'তিবা'দ করতাম, তখন কী হত?'‌ সূত্র : আজকাল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে