সোমবার, ০৯ মার্চ, ২০২০, ১০:২৭:২৫

হঠাৎ টালমাটাল সৌদি আরব, নেপথ্যে অভ্যুত্থান চেষ্টা!

হঠাৎ টালমাটাল সৌদি আরব, নেপথ্যে অভ্যুত্থান চেষ্টা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের জীবিত একমাত্র ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদকে আ'টক করা হয়েছে। বেশকিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, রাজপরিবারের ক্ষ'মতা কু'ক্ষিগত করার লক্ষ্যে এবং রাজসিংহাসনে যাওয়ার জন্য নিজের পথের কাঁ'টা দূর করতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) তাকে আ'টক করেন।

মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, নিরা'পত্তা অভি'যান চালিয়ে গত শুক্রবার সৌদি বাদশাহর ভাতিজা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে আ'টক করা হয়েছে। রাজপরিবারের এ দুই যুবরাজকে ৮৪ বছর বয়সী বাদশাহ সালমানের উত্তরসূরি হতে যাওয়া দেশটির ডি ফ্যা'ক্টো নেতা এমবিএসের সম্ভাব্য প্রতিদ্ব'ন্দ্বী হিসেবে ভাবা হয়।

সৌদি বাদশাহ এবং তার ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্ষ'মতাচ্যু'ত করতে প্রিন্স আহমেদ ও মোহাম্মদ বিন নায়েফ অ'ভ্যুত্থা'নের পরিক'ল্পনা করছিলেন বলে অ'ভিযো'গ উঠেছে। এই অভ্যু'ত্থান পরিক'ল্পনায় সমর্থনের অভি'যোগে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ এক ডজনের বেশি কর্মকর্তাকেও আ'টক করা হয়। তবে এ আ'টকের বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।

সৌদি আরবের ক্ষ'মতাসীন আল সৌদ পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। বর্তমান বাদশাহ সালমানের জীবিত একমাত্র ভাই। আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আব্দুল আজিজ আল-সৌদের সাত ছেলেকে নিয়ে গঠিত শ'ক্তিশালী ব্ল'ক 'সুদাইরি সাতের' সর্বশেষ জীবিত দুই সদস্য প্রিন্স আহমেদ ও বাদশাহ সালমান। রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষ'মতা থেকে দূরে রাখতে এ দুই ভাই নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ভাগা'ভাগি করে নিয়ে ব্লক তৈরি করেছিলেন। 

আরও পড়ুন : সৌদির আরেক প্রভাবশালী যুবরাজ আ'টক

সিংহাসনে যাওয়া নি'শ্চিত করতে রাজপরিবারের কয়েক ডজন প্রিন্সকে কৌশলে ক্ষ'মতা থেকে দূরে রাখেন তারা। এর মধ্যে সাবেক বাদশাহ ফাহাদও ছিলেন; যিনি ১৯৮২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের বাদশাহ ছিলেন। এছাড়া প্রিন্স সুলতান দেশটির প্রতির'ক্ষামন্ত্রী হিসেবে অর্ধ-শতাব্দি ধরে দায়িত্ব পালন করে ২০০৫ সালে বাদশাহ আব্দুল্লাহর সময় ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত হন। বর্তমান ক্ষ'মতাসীন বাদশাহ সালমান ক্ষ'মতায় আসার পর আবারও সুলতানকে ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত করেন।

১৯৪০ সালের গোড়ার দিকে জন্মগ্রহণ করেন প্রিন্স আহমেদ। দেশটির রাজধানী রিয়াদেই পড়াশোনা করেন তিনি। পরে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়ে ১৯৬৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি অব রেডল্যান্ডস থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি নেন তিনি। প্রিন্স আহমেদ ফেরার পর কয়েক দশক ধরে দেশটির স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের জুনে সৌদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় আচ'মকাই পদত্যা'গ করেন এই সৌদি প্রিন্স।

এরপর দেশটির নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আরেক হাই প্রোফাইল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রিন্স আহমেদ পবিত্র দুই নগরী মক্কা ও মদিনার প্রশাসনের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। সুদাইরি সাত ব্লকের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে প্রিন্স আহমেদকে দেশটির ভবিষ্যৎ শাসক হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু সিংহাসনে যাওয়ার জন্য দু'বার সুযোগ তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

আরও পড়ুন : নিজের পিতাকে সিংহাসনচ্যুত করে সৌদির বাদশাহ হচ্ছেন যুবরাজ এমবিএস

দেশটির পরবর্তী উত্তরসূরির অনুমোদনকারী কমিশন 'বেয়া'র প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে এখনও দায়িত্বে আছেন প্রিন্স আহমেদ। ২০১৭ সালে দেশটির পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার তালিকায় থাকা প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরো'ধিতা করেছিলেন যে তিন প্রিন্স; আহমেদ তাদের একজন। বেশকিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, কয়েকজন জ্যেষ্ঠ প্রিন্সকে পাশ কাটিয়ে পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার রাস্তা তৈরি করেন বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

২০১৭ সালে দেশটিতে এমবিএস বিরো'ধী রাজপরিবারের সদস্য, শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের বি'রু'দ্ধে দুর্নী'তিবিরো'ধী অভি'যানের নামে ব্যা'পক ধ'রপা'কড় শুরু হয়। সৌদি যুবরাজের নির্দে'শে আ'টকদের রিয়াদের বিলাসবহুল রিৎজ কার্লটন হোটেলে বছরের পর বছর ব'ন্দি রাখা হয়। ধ'রপা'কড় শুরু হলে ওই বছরের নভেম্বরে প্রিন্স আহমেদ সৌদি থেকে পালিয়ে যান। পরে দেশে ফিরলে আ'টক করা হবে না বলে এমবিএস আশ্বস্ত করলে ২০১৮ সালের অক্টোবরে যুক্তরাজ্য থেকে রিয়াদে ফিরে আসেন তিনি।

লন্ডনে অবস্থানকালে প্রিন্স আহমেদ ইয়েমেনে সৌদি যুবরাজ এমবিএসের সাম'রিক অভি'যানের প্রকাশ্য বিরো'ধিতা করেন। ইয়েমেনে হুথি বিদ্রো'হীদের দ'মন করে সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল-হাদিকে ক্ষ'মতায় ফেরানোর লক্ষ্যে আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশের সঙ্গে জোট গঠন করে সাম'রিক অভি'যান শুরু করেন সৌদি আরব। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অনলাইনে দুই মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করেন প্রিন্স আহমেদ। 

এতে ইয়েমেনে সৌদি আরবের যু'দ্ধে জড়ানোর বিরো'ধিতা করে লন্ডনে বিক্ষো'ভ করতে দেখা যায় এই প্রিন্সকে। এ সময় বিক্ষো'ভকারীদের প্রতি সৌদির ক্ষ'মতাসীন পরিবারের সঙ্গে সবাইকে এক করে না দেখার আহ্বান জানান তিনি। ইয়েমেন যু'দ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ''এ ঘটনার সঙ্গে কি পুরো আল-সৌদি পরিবার জড়িত? এর সঙ্গে কিছু ব্যক্তি জড়িত। এটার সঙ্গে অন্যদের জড়াবেন না।'' 

এক বিক্ষো'ভকারী সৌদি এ প্রিন্সকে প্রশ্ন করেন, এই যু'দ্ধের জন্য কে জড়িত? জবাবে তিনি বলেন, ক্ষম'তাসীন বাদশাহ, ক্রাউন প্রিন্স এবং অন্যরা। শিগ'গিরই ইয়েমেন এবং অন্যান্য যু'দ্ধ ব'ন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রিন্স আহমেদ। এই ভিডিও প্রকাশের কিছুক্ষণ পর প্রিন্স আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বিবৃতি দেন। এতে তিনি বলেন, তার মন্তব্য প্রসঙ্গের বাইরে নিয়ে বি'কৃ'ত করা হয়েছে। তিনি পরিষ্কার করে বলেন, বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্স সৌদির যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈধ কর্তৃপক্ষ।

দেশে ফেরার পর রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে সব ধরনের সেবা, ভাতা পেলেও একেবারে কো'ণঠা'সা করে রাখা হয় তাকে। গালফ অ্যাফেয়ার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং সাবেক সৌদি রাজব'ন্দি আলী আল-আহমেদ বলেন, ''প্রিন্স আহমেদের বাদশাহ হওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি তার কোনো উচ্চাশা না থাকায় দেশে ফিরে আসেন।'' ধ'রপা'কড় অভি'যানকে কর্তৃপক্ষের পূর্ব-স'ত'র্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উল্লেখ করে গালফ অ্যাফেয়ার্স ইনস্টিটিউটের এই পরিচালক বলেন, অভি'যানের সঙ্গে অভ্যু'ত্থান পরিক'ল্পনার কোনো সম্পর্ক নেই।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে