নিউজ ডেস্ক : করোনা পরি'স্থিতি মো'কাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন দেশের ৬৩ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা গণমাধ্যমে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। বলা হয়, করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক মহামা'রিতে রূপ নিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠিতে করোনা সং'ক্র'মণের যে চারটি স্তরের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশ এর তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে, অর্থাৎ দেশের ভেতরেই এই রোগ কমিউনিটি সং'ক্র'মণের পর্যায়ে ঢুকে পড়েছে বলে আশ'ঙ্কা করা হচ্ছে। চতুর্থ স্তরটি হলো, ব্যাপক সং'ক্র'মণ ও ব্যা'পক মৃ'ত্যু।
খোলা চিঠিতে বলা হয়, ''চীন, ইরান, ইতালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরি'স্থিতি থেকে আমরা পরিষ্কার ধারণা করতে পারি যে, কীভাবে অ'তি দ্রু'ত জ্যামিতিক হারে এই মহামা'রি দাবা'নলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অত্যন্ত পরি'তাপের বিষয় যে, দুই মাস সময় পেলেও সরকার সম'স্যার দিকে কোনও মনোযোগ দেয়নি। উপদ্রুত দেশগুলো থেকে দেশে প্রত্যা'বর্তনকারী প্রবাসী ভাই-বোনদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দে'শনা অনুসরণে কোয়ারেন্টিন করার সরকারি ব্য'র্থতা প্রমাণ করে যে সমন্ব'য়হী'নতা ও প্রস্তুতির অভাব দেশকে কত বড় বি'পদে ফেলতে পারে।
মহাবি'পদ মো'কাবিলায় প্রস্তুতি নেই, সমন্বয় নেই, আ'ক্রা'ন্ত রোগী শনা'ক্তকরণের পর্যাপ্ত উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা দেশে নেই; নেই চিকিৎসকদের র'ক্ষার ব্যবস্থা, নেই যথেষ্ট মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ভেন্টিলেটর! পরীক্ষার ব্যবস্থা ছাড়া সরকার আ'ক্রা'ন্ত সংখ্যার যে তথ্য দিচ্ছে তা তাই বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। দেশের হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় বিরা'জমান দু'র্ব'লতা ও প্রস্তুতিহী'নতা অনুধাবন করে দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীরভাবে উ'দ্বি'গ্ন।''
এতে আরও বলা হয়, ''উদ্বে'গের আরও কারণ হচ্ছে জাতির ম'হাবি'পদের মুহূর্তে দুর্যো'গ মো'কাবিলার কোনো সমন্বিত উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো বাস্তবতা অ'স্বী'কার করে, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে সরকারের মিথ্যা সাফল্যের বন্দনায় মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা এবং দায়ি'ত্বজ্ঞা'নহীন মন্তব্য আমাদের গভীরভাবে চি'ন্তিত, ক্ষু'ব্ধ ও হ'তা'শ করে। বিভিন্ন ছাত্র যুব সংগঠনসহ স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি ও সংগঠনের দায়িত্বশীল কাজই এখন পর্যন্ত আমাদের ভরসা। কিন্তু এসব উদ্যোগ সমন্বয়েরও কোনও আগ্রহ সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।''
চিঠিতে বলা হয়, ''আমরা চাই, সরকার আর কালক্ষে'পণ না করে শ্বেতপত্রের মাধ্যমে করোনা ম'হামা'রি রোধের পরিক'ল্পনা ও কার্যকর প্রণালী জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। শ্বেতপত্রে থাকবে ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কতজন স্বাস্থ্যকর্মী আছেন এবং তাদের সুর'ক্ষার পর্যাপ্ত সর'ঞ্জাম কবে পর্যন্ত নি'শ্চিত করা যাবে, প্রতিটি হাসপাতালে সর্বোচ্চ কতটি বেড প্রস্তুত করা যাবে, প্রতিটি হাসপাতালে কতটি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত আছে, করোনা পরীক্ষার কতগুলো কিট আছে, প্রতিদিনের ব্যবহারের মানসম্মত গ্লা'ভস, মাস্ক ইত্যাদির মজুত কতদিনের মধ্যে নি'শ্চিত করা যাবে, এসব তথ্য প্রকাশ করতে হবে।''
অবিলম্বে দেশের সব জায়গায় বিনামূল্যে টেস্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ ও তার ব্যবস্থাপনা নি'শ্চিত করতে হবে। মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার জোগান নি'শ্চিত করতে হবে। কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে দ্রু'ত খালাস ও কর মওকুফের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সব প্রবেশপথ সত'র্ক নজ'রদা'রির আওতায় নিতে হবে।
অবিলম্বে করোনা সং'ক্র'মণের সময় আক্রা'ন্ত দেশগুলো থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদের অব'স্থানের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য বা ইতোমধ্যে আ'ক্রা'ন্ত অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করতে হবে। গুরুত্ব অনুযায়ী অঞ্চলভিত্তিক জ'রু'রি ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের ভেতর কক্সবাজার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পর্যটন গন্তব্যগুলো ব'ন্ধ করে দিতে হবে। কোয়ারেন্টিনের জন্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে বড় হোটেল-মোটেল-রিসোর্টসহ উপযোগী ভবনগুলো অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্যে নি'র্দিষ্ট করতে হবে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, খালি ভবনে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা সম্ভব। সিএমএইচ ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সম'ন্বিত পরিক'ল্পনায় যুক্ত করতে হবে। ডাক্তার-নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর নিরা'পদ পোশাক ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে।
দেশের পোশাক কারখানা ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরা'পত্তার জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই (পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) সরবরাহ করতে হবে। গণপরিবহন ও সং'ক্র'মণের হট'স্পট নিয়মিত জীবা'ণুমু'ক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলখানার ঝুঁ'কিপূর্ণ জনচা'প দূর করে প্রয়োজনীয় নিরা'পত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, জনচাপ কমাতে বিনা বিচারে আ'টক, মেয়াদ উত্তী'র্ণদের মুক্তি দিতে হবে। ছি'ন্নমূ'ল, ভাসমান মানুষদের জন্যে নি'রাপ'দ স্থানে আশ্রয় শিবির খুলে তাদেরকে স'রিয়ে নিতে হবে।
গাদাগাদিভাবে বাস করা বস্তিবাসীদের নিরা'পত্তায় প্রতিটি বস্তিতে পরি'চ্ছন্নতার উপকরণ সরবরাহ এবং করোনা মনিটরিং সেল স্থাপন করতে হবে। রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রেও একই রকম নিরা'পত্তা ব্যবস্থা নি'শ্চিত করতে হবে। ইমিউন সিস্টেম শ'ক্তিশালী করবার জন্যে প্রয়োজনীয় পু'ষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা সং'ক্রা'ন্ত জ'রু'রি কাজ ছাড়া পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের আ'পদকালীন সময়ে সবেতন ছুটি দিতে হবে।
ছুটিকালীন শ্রমিকদের মজুরি যাতে ঠিকমতো পরিশো'ধ হয়, সরকারকে তা নি'শ্চি'ত করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুতদারি ব'ন্ধ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। নিম্ন আয়ের এবং রোজগার হা'রানো মানুষদের জন্যে রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এই সুযোগে ঋ'ণখেলা'পি, চো'রাই টাকার মালিকদের কোনো বাড়তি সুবিধা দেওয়া যাবে না।
বিশেষ'জ্ঞ, স্বাস্থ্যকর্মী, ধর্মীয় নেতাদের সাহায্যে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় ক্লাব, সংগঠন ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত সুর'ক্ষা সর'ঞ্জাম দিয়ে তাদের প্রচার ও রো'গ প্রতিরো'ধে কাজের সুযোগ দিতে হবে। এর পাশাপাশি ডে'ঙ্গু ও চি'কনগু'নিয়া মো'কাবিলায় সরকারের কী পরিক'ল্পনা তা প্রকাশ করতে হবে। বর্ষা আসার আগেই আমাদের ডেঙ্গু মৃ'ত্যু রো'ধ করবার প্রস্তুতিও শেষ করতে হবে, যেটি একই কমিটি থেকে পরিচালিত হতে পারে।''
নাগরিকদের পক্ষে এসব দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, রুশাদ ফরিদী, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, গীতি আরা নাসরীন, মানবাধিকারকর্মী শাহীন আনাম, ফাহমিদুল হক, রোবায়েত ফেরদৌস, আইনুল ইসলাম, জোবাইদা নাসরীন, তানজীমউদ্দিন খান, মোশাহিদা সুলতানা, কাজলী শেহরীন ইসলাম, রিদয়ানুল হক, কাজী মারুফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, আইনুন নাহার, সায়েমা খাতুন, সাঈদ ফেরদৌস, নাসরীন খন্দকার, মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, মানস চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌম্য সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌভিক রেজা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাদাফ নূর ও মাইদুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক লুৎফুন হোসেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ইফতেখারুজ্জামান,সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি হাফিজ উদ্দীন খান, সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা, শিক্ষক ও লেখক আলী রীয়াজ, আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম, খুশী কবির, রেজাউর রহমান লেনিন, হামিদা হোসেন, পরিবেশ অধিকারকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিক্ষক ও লেখক বীণা ডি কস্টা, আলোকচিত্রী ও শ্রমিক অধিকারকর্মী তাসলিমা আখতার, জনস্বার্থ আন্দোলন কর্মী মিজানুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, নৃত্যশিল্পী আনিসুল ইসিলাম হিরু, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী বীথি ঘোষ, শিল্পী ও সংগঠক অমল আকাশ, সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মরিয়ম, সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান, কবি ও সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী, গবেষক মাহা মির্জা, লেখক ও গবেষক রেহনুমা আহমেদ, গবেষক ও অ্যাকটিভিস্ট নাজনীন শিফা, নৃবিজ্ঞানী ও শিক্ষক ড. দীনা এম সিদ্দিকী, অধিকারকর্মী ও গবেষক মুক্তশ্রী চাকমা, শিক্ষক ও লেখক আজফার হোসেন, নাট্যকর্মী ও শিক্ষক নায়লা আজাদ, শিক্ষক অমিতা চক্রবর্তী, ক্ষুদে ব্যবসায়ী আরমান হোসেন, কৃষিবিদ ও গবেষক লুৎফুর রহমান, নৃবিজ্ঞানী ও শিক্ষক নুসরাত চৌধুরী, গবেষক রোজিনা বেগম, প্রকৌশলী ও লেখক কল্লোল মোস্তফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজের শিক্ষক শিল্পী বড়ুয়া, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেওতি সবুর, ইউল্যাবের শিক্ষক অবন্তী হারুন এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নোভা আহমেদ।