শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০, ১২:১০:২৭

যে কারণে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যু'দ্ধ নিয়ে ইরানের উদ্বে'গ বাড়ছে!

যে কারণে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যু'দ্ধ নিয়ে ইরানের উদ্বে'গ বাড়ছে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যু'দ্ধে এই দুই দেশ ছাড়া তৃতীয় যে দেশটিকে সবচেয়ে উ'দ্বি'গ্ন করেছে এই যু'দ্ধ তা হলো ইরান। প্রায় দুই সপ্তাহ পরও প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে লড়াই প্রশ'মনের কোনো ল'ক্ষ'ণ দেখা না দেওয়ায়, উ'দ্বি'গ্ন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি স'ত'র্ক করেছেন, আজারবাইজান-আর্মেনিয়া ল'ড়া'ই একটি আঞ্চলিক যু'দ্ধের রূপ নিতে পারে।

প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, ''আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যু'দ্ধ যেন কোনোভাবেই আঞ্চলিক সং'ঘা'তে রূপ না নেয় সেদিকে আমাদের অবশ্যই ন'জ'র দিতে হবে।'' ইরানের ভেতর থেকে গত ক'দিন ধ'রে বলা হচ্ছে, সীমান্তে তাদের কয়েকটি গ্রামে রকেট এবং কা'মানের গো'লা এসে পড়ছে। ইরানের সীমান্ত-র'ক্ষী বা'হি'নীর প্রধান কাসেম রাজেই বলেছেন সং'ঘা'ত শুরুর পর কিছু গোলা তাদের অভ্য'ন্তরে এসে পড়েছে, এবং সেজন্য উত্তর সীমান্তে সৈন্যদের বিশেষভাবে সজাগ করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট রুহানিও গতকাল বলেছেন, ইরানের ভূমিতে অন্য কোনো দেশের গোলা বা ক্ষে'পণা'স্ত্র এসে পড়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ''আমাদের শহরের এবং গ্রামের নিরা'পত্তা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।'' বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই প্রতিবেশীর সং'ঘা'ত যাতে আয়ত্তের বাইরে না চলে যায় তা নিয়ে ইরান উ'দ্বি'গ্ন।

দুটি দেশের সাথে তাদের রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং জাতিগত যে সম্পর্ক, তাতে ইরান ক'ঠি'ন একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছে। যদিও নাগোর্নো-কারাবাখের ওপর আজারবাইজানের সার্বভৌমত্ব ইরান গোড়া থেকে সমর্থন করে আসছে, কিন্তু অতীতের মত এবারও ইরান বারবার বলার চেষ্টা করছে এই বিরো'ধে তারা কোনো পক্ষ নিচ্ছে না।

মীমাংসার মাধ্যমে সং'ঘা'ত মিটিয়ে ফেলতে দুই দেশের সরকার প্রধানের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন স্বয়ং ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি। এমনকী মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে তেহরান। অনেক পর্যবে'ক্ষক বলছেন, ল'ক্ষ্যচ্যু'ত কিছু কা'মানের গোলা ইরানের প্রধান উদ্বে'গ নয়, বরঞ্চ দো'রগো'ড়ায় এই সং'ঘা'তে এমন এমন দেশ জড়িয়ে পড়ছে যাদের উদ্দেশ্য নিয়ে ইরানের গভীর স'ন্দে'হ রয়েছে।

তেহরান সরকারের মধ্যে উ'দ্বে'গ বাড়ছে, যু'দ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইরানকেও নি'শা'না করার চেষ্টা হতে পারে। ইসরায়েলের সাথে হালে আজারবাইজানের ঘ'নি'ষ্ঠতা এবং তাদের ইসরায়েলী ড্রোন এবং অন্যান্য অ'স্ত্র কেনার বিষয়টি নিয়ে ইরান উ'দ্বি'গ্ন। মুসলিম আজারবাইজানকে ইসরায়েলী এই অ'স্ত্র সাহায্য এতটাই প্রকাশ্য যে প্র'তিবা'দে আর্মেনিয়া ইসরায়েল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনেছে।

তেহরান সরকারের ঘ'নি'ষ্ঠ ইরানের রাজনীতিক এবং ইরান পার্লামেন্টের জাতীয় নিরা'পত্তা কমিটির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ জাভেদ জামালিকে উ'দ্ধৃ'ত আল জাজিরা লিখেছে ''যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এই বিরো'ধ জিইয়ে রাখতে চাইবে।'' বোঝাই যায়, আজারবাইজান শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া স্বত্বেও চি'রশ'ত্রু ইসরায়েলের সাথে তাদের ঘনি'ষ্ঠতা নিয়ে ইরান ভেতরে ভেতরে উ'দ্বি'গ্ন এবং না'খো'শ।

এমন অ'ভিযো'গও উঠেছে, ইরান তলে তলে আর্মেনিয়াকে সাহায্য করছে। সম্প্রতি অনলাইনে বেশ কিছু ভিডিও শে'য়ার হয়েছে যেখানে দেখা গেছে ইরানের একটি সীমান্ত দিয়ে অ'স্ত্র নিয়ে আর্মেনিয়াতে ট্রাক ঢু'কছে। তবে ইরান সরকার সাথে সাথে একে ''ভিত্তিহীন অ'পপ্র'চার'' বলে উড়িয়ে দিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে দেখানো হয়েছে আর্মেনিয়ার সাথে নেরাদুজ সীমান্তে যেসব রুশ নির্মিত ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে তা সং'ঘা'ত শুরুর আগে আর্মেনিয়া রাশিয়া থেকে কিনেছিল, যেগুলো ইরানের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আর ওসব ট্রাকে অ'স্ত্র নয়, বরঞ্চ গাড়ির যন্ত্রপাতি রয়েছে।

ইরানের জাতিগোষ্ঠীর নাজুক সমীকরণ : এছাড়া আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সং'ঘা'তে তাদের অভ্যন্তরীণ স্থি'তিশী'লতা হু'ম'কিতে পড়তে পারে বলে ইরানের ভেতর আ'শ'ঙ্কা রয়েছে। এই আ'শ'ঙ্কার মূল কারণ ঐতিহাসিক সূত্রে ইরানের ভেতর প্রচুর সংখ্যায় জাতিগত আজেরি এবং আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর বসবাস। আধুনিক আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া (প্রাচীন নাম আরান) ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ ছিল, যা পরে তারা যু'দ্ধে রাশিয়ার কাছে হারায়। 

ফলে, এই দুই জাতিগোষ্ঠীর বহু মানুষ ইরানের নাগরিক। আজেরিরা ইরানের বৃহত্তম সংখ্যাল'ঘু জনগোষ্ঠী। প্রায় দুই কোটি আজেরির বসবাস ইরানে। বিশেষ করে আজারবাইজান সীমান্তবর্তী আরদাবিল এবং পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে আজেরিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। ইরানের নাগরিক হলেও তারা সীমান্তের ওপারে আজারবাইজানের আজেরিদের সাথে আত্মিক ঘ'নি'ষ্ঠতা বো'ধ করে।

সাম্প্রতিক কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে আজারবাইজানের সমর্থনে তেহরান এবং তাবরিজসহ বেশ কটি শহরে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। আজেরি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এমন কয়েকটি জায়গায় মসজিদের ইমামরা গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর আজারবাইজানের সমর্থনে যৌথ বিবৃতি জারি করেছেন।

অন্যদিকে, প্রায় এক লাখের মত আর্মেনীয় ইরানের নাগরিক যারা দেশের ব্যবসা এবং সমাজ-অর্থনীতির অন্যান্য কাঠামোতে সুপ্রতিষ্ঠিত। এসব ইরানি-আর্মেনীয়দের সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের, বিশেষ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রভা'বশা'লী আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ফলে ইরান সরকারের কাছে তাদের গুরুত্ব অনেক।

ব্রিটেনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ইরান বিশেষজ্ঞ মারজিয়ে কোহি-ইসফাহানি 'দি কনভারসেশন' নামে গবেষণা-ভিত্তিক একটি অনলাইন পোর্টালে এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, এই দুই জাতিগোষ্ঠীর স্প'র্শকা'তরতার কথা ভেবেই ইরান মধ্য'স্থতা করার কথা বলছে।

''ইরানকে দেখাতে হবে যে এই সং'ঘা'তে তারা নি'রপে'ক্ষ। অভ্য'ন্তরী'ণ স্থি'তিশী'লতার জন্য এটা তাদের জন্য জরুরি। প্রকাশ্যে কোনো একটি পক্ষকে সমর্থন করলে ইরানের ভেতর জাতিগত বিভে'দ তৈরি হয়ে তা সং'ঘা'তেও রূপ নিতে পারে।'' মারজিয়ে কোহি-ইসফাহানির মতে, আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সং'ঘা'তে নি'রপে'ক্ষ অবস্থান এবং সেইসাথে সং'ঘা'ত ব'ন্ধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় সমর্থন জুগিয়ে যাওয়াই এখন ইরানের কাছে সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে