আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাত্র দু’টি পরমাণু বোমার আঘাতেই ধ্বংস হয়েছিল জাপানের অন্যতম প্রধান দু'টি শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকি। সেই আঘাতের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে কয়েক দশক সময় লেগেছে জাপানিদের। কিন্তু একটি দ্বীপরাষ্ট্রে যদি ৬৭ বার হাইডোজেন বোমার আঘাত হানে তা হলে সেখানে কি অবস্থা হবে? হ্যা, যা ভাবছেন ঘটনা তাই ঘটেছিল। এর ফলে বিশ্বের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গিয়েছে সেই দ্বীপরাষ্ট্রটি।
অসংখ্য ছোট-বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশ মার্শাল আইল্যান্ডসের একটি গোটা দ্বীপ মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে মার্কিন হাইড্রোজেন বোমার আঘাতে। এটি জাপানের দক্ষিণ পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরে। বিশ্বজুড়ে পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধে জাতসংঘের দ্বারস্থ হয়েছে মার্শাল আইল্যান্ডসের সরকার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের দখলে ছিল নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অবস্থিত এই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ। সেখানে জাপানের বিশাল সেনাঘাঁটি ছিল। জাপানি বাহিনী আমেরিকার পার্ল হারবার বন্দর বিধ্বস্ত করার পর জাপানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করে ওয়াশিংটন। ১৯৪৪ সালে জাপানের হাত থেকে মার্কিন বাহিনী মার্শাল আইল্যান্ডস ছিনিয়ে নেয়। তার পর মার্কিন উপনিবেশে পরিণত হয় ওই দ্বীপপুঞ্জ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল মার্শাল আইল্যান্ডসের। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর যে আরও ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষায় ছিল, তা বোধ হয় দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি।
বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পর থেকে যখন রাশিয়া আর আমেরিকার মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধের শুরু, তখন থেকেই মার্শাল আইল্যান্ডস তার শিকারে পরিণত হয়। পরমাণু শক্তির আস্ফালন দেখাতে আমেরিকা একের পর এক শক্তিশালী পরমাণু বোমা তৈরি করা শুরু করে সে সময়।
তৈরি হয় হাইড্রোজেন বোমা, যা জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে ব্যবহৃত বোমার চেয়ে সাত হাজার গুণেরও বেশি শক্তিশালী। কিন্তু বোমা তৈরি করলেই তো হল না। বোমা ফাটিয়ে বিশ্বকে দেখানো দরকার, সেটি কতটা মারাত্মক। হাইড্রোজেন বোমা ফাটানোর জন্য আমেরিকা বেছে নেয় মার্শাল আইল্যান্ডসকেই।
১৯৪৬ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে ৬৭ বার পরমাণু ও হাইড্রোজেন বোমার বিধ্বংসী মার সহ্য করতে হয় প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ছড়িয়ে থাকা দ্বীপরাষ্ট্রটিকে। ১৯৫২ সালে আমেরিকা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে পড় উন্মুক্ত পরমাণু বিস্ফোরণটি ঘটায়। আমেরিকার সেই পরীক্ষামূলক হাইড্রোজেন বোমা হামলায় মার্শাল আইল্যান্ডসের একটি গোটা দ্বীপ এলুগেলাব মানচিত্র থেকে সম্পূর্ণ মুছে যায়।
১৯৫৬ সালে আমেরিকাই জানিয়ে দেয়, মার্শাল আইল্যান্ডস পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। ১৯৫৮ সালের পর আর কোনও পরমাণু বিস্ফোরণ সেখানে ঘটানো হয়নি। কিন্তু তার আগের ১২ বছরে ৬৭টি পরমাণু বোমা হামলার শিকার হওয়া মার্শাল আইল্যান্ডসের বাতাসে, জলে এবং মাটিতে এমন ভাবে মিশে গিয়েছিল তেজষ্ক্রিয় পদার্থ যে তার প্রভাব থেকে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি দ্বীপরাষ্ট্র। পরে মার্শাল আইল্যান্ডস স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব এবং তার জেরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা বার বার বিধ্বস্ত করছে মার্শাল আইল্যান্ডসকে।
জাতিসংঘে মার্শাল আইল্যান্ডসের সরকার এখন বার বার আবেদন জানাচ্ছে, পৃথিবীজুড়ে শুরু হওয়া পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা রোধ করার জন্য। আমেরিকার আর্থিক সহায়তায় টিকে থাকতে হচ্ছে বলে আমেরিকার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেনি দ্বীপরাষ্ট্র। কিন্তু মার্কিন মিত্র ব্রিটেনের বিরুদ্ধে অভিযাগ জানানো হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে দেশটি।
০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস