আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মহিলাদের পছন্দ ঠিক কি কি? এমন প্রশ্ন করা হয়ে হয়তোবা সোজাসাপ্টা তালিকা মিলবে, সেই তালিকাটা যে বেশ লম্বা হবে, তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না৷ শাড়ি, গয়না, প্রসাধনীর পুরোনো অভ্যেস থেকে বেড়িয়ে এসে মেয়েদের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে অনেক কিছুই৷ তবে সেই তালিকায় যদি রাখা হয় পিস্তল কিংবা রিভলভার! তা হলে আমাদের সমাজের অনেকেই হয়তোবা চমকে যেতে পারেন? আসলে এমন কথা শোনার পর কেউ কি না কমকিয়ে পারে? কারণ একজন নারীর কাছে তার সখের বস্তুর আর যাই হোক একটা রিভালভার হতে পারে না!
তবে এ রকম এক নারীও আছেন, যিনি শুধু বন্দুক চালাতেই পারদর্শী নন৷ বন্দুক বিক্রিও করে থাকেন৷ তার নাম শিখা মণ্ডল৷ বাড়ি ভারতের হুগলিতে। বেশ কয়েকবার রাজ্য শ্যুটিংয়ে জয়লাভ করেছেন শিখাই। ভারতের তৃতীয় এবং এ রাজ্যের একমাত্র লাইসেন্সধারী মহিলা বন্দুক বিক্রেতাও তিনি৷ তার বন্দুকের দোকান হুগলির বৈদ্যবাটিতে৷ গত বছর থেকে সেখানে রমরমিয়ে বন্দুকের ব্যবসা চালাচ্ছেন শিখা৷
তার চেহারায় নেই কোন বিশেষ চমক। একেবারে সাধারণ পোশাক চলাফেরা করেন তিনি। তবে চোখ রয়েছে অসম্ভব দৃঢ়তা৷ একটা সময় যে হাতে অবলীলায় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের সেবা করেছেন, কিন্তু আজ সেই ট্রেন্ড নার্সের জীবনটা এখন পুরোপুরি আলাদা৷ সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম দায়িত্ব দুই ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠানো৷ তারপর স্বামীকে অফিস পাঠিয়ে কাঁটায় কাঁটায় দশটায় হাজির হয়ে যান বৈদ্যবাটি বাদামতলা লাগোয়া তার বন্দুকের দোকানে৷
এত কিছু থাকতে হঠাৎ বন্দুকের ব্যবসা কেন? প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসেন মিতভাষী শিখা৷ বলেন, 'আসলে বন্দুকের প্রতি ভালোবাসাটা আমার অনেক দিনের৷ আমার স্বামী ন্যাশনাল শ্যুটিং চ্যাম্পিয়ন৷ শ্রীরামপুরে যে বিখ্যাত রাইফেল ক্লাবটি আছে, আমি সেখানেই বন্দুক চালানো শিখেছি৷ তাই ব্যবসা করার কথা যখন ভাবলাম, তখন লাইসেন্সড বন্দুক বিক্রি করাটাই শ্রেয় বলে মনে হল৷ আর আমাদের এক দাদা, কলকাতার বিখ্যাত বন্দুক বিক্রেতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাসও খুব উত্সাহ দিয়েছিলেন এ ব্যাপারে৷
'নিজের অতীত, রাইফেল ক্লাবের লাইফ মেম্বারশিপ দিয়ে ২০১৩ -র অক্টোবরে দোকানের জন্য লাইসেন্সের আবেদন করে ফেলেন হুগলির জেলাশাসকের কাছে৷ শিখা জানান, দোকানের মূল লাইসেন্স দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়৷ জেলাশাসক মন্ত্রনালয়ের কাছে আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেন৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে অনেক খোজ খবর নেয়ার পর অবশেষে ২০১৪ সালে বন্দুক বিক্রির লাইসেন্স পান শিখা৷ সে বছরই ২১ ডিসেম্বর চালু হয় দোকান৷ রেকর্ড বলছে, এখনো পর্যন্ত ১৩টি রাইফেল, রিভলভার বিক্রি করেছেন শিখা৷
যে বাড়িতে বাবা বন্দুক চালনায় পারদর্শী, মায়ের বন্দুকের ব্যবসা, ছেলেমেয়েদের উত্সাহটা যে কোন দিকে যাবে, তা আন্দাজ করা খুব একটা কঠিন নয়৷ দশম শ্রেণিতে পড়া মেয়ে আরাত্রিকা গত বছর শ্যুটিংয়ে স্টেট চ্যাম্পিয়ান হয়েছে৷ শ্রীরামপুর রাইফেল ক্লাবে নিয়মিত চলছে তার প্রশিক্ষন৷ আর পুত্র অরিত্র বাড়িতেই হাত পাকাচ্ছে এয়ারগানে৷ শিখার কথায়, 'শুধু খেলা হিসেবেই নয়৷ আমি মনে করি , নিজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেও মেয়েদের বন্দুক চালানো শেখা উচিত৷'
নিজে মহিলা হয়ে বন্দুক বিক্রি করছেন? বন্দুকের প্রতি মহিলাদের উৎসাহ বাড়াতে কিছু করছেন কি? তিনি বলেন, 'আমার দোকানের যারা কাস্টমার, তাদের অনুরোধ করি বাড়ির মেয়ে-বউদের জন্যও বন্দুক কিনতে৷ মহিলাদের মনে বন্দুক নিয়ে কিছু সংশয় থাকলে আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে সেটা যত সম্ভব কাটানোর চেষ্টা করি৷ আশা করছি, আমাকে দেখে বন্দুকের ব্যাপারে মেয়েদের কুণ্ঠা কিছুটা হলেও কাটবে৷' ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি তাদের নতুন হাল্কা রিভলভার 'নিডর' বাজারে ছাড়ল মঙ্গলবারই৷ মহিলারা সেই রিভলভার এবং শিখাকে দেখে 'ডর' কাটিয়ে বন্দুককে নিজের বন্ধু করেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়৷-টাইমস অফ ইন্ডিয়া
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই