আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কূটনীতিতে ভরসা দুই বাঙালি কন্যা। সম্প্রতি ভারত সফরে আসা বিশ্বের প্রভাবশালী দুই প্রেসিডেন্টকে মাতিয়ে রেখেছিলেন তারা। লুচি-রসগোল্লার সেই রসায়ন বেশ সাফল্য এনে দিয়েছে মোদিকে!
ভারত সফরে আসা বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির কথোপকথনের সময়ে এই বঙ্গলালনাদের উপস্থিতি ‘বাধ্যতামূলক’! এমনটি মনে করিয়ে দেয় গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসেন ভারত সফরে। আর এবার আসেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলাঁদ।
একজন ভালবাসেন জামদানি শাড়ি আর রসে-টইটম্বুর খাঁটি ছানার রসগোল্লা। ফুরসৎ পেলেই মেতে ওঠেন ফরাসি সাহিত্যে। অন্যজন লুচি সহযোগে আলুর ছেঁচকিতে তাঁর বাঙালিয়ানা খুঁজে পেলেও রুশ ভাষাটা বলেন এবং লেখেন জন্মসূত্রে যে কোনও রুশের মতোই! একজন নীলাক্ষী সাহা সিংহ, অন্যজন শিপ্রা ঘোষ।
আপাতত এঁদের কাঁধেই ভর করে ছুটছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দোভাষী কূটনীতি! ভ্লাদিমির পুতিন এবং ফ্রাঁসোয়া অলাঁদদের মতো বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথনের সময়ে এই বঙ্গললনাদের উপস্থিতি ‘বাধ্যতামূলক’।
রুশ বা ফরাসি ভাষা হিন্দিতে তাৎক্ষণিক তর্জমা করে প্রধানমন্ত্রীকে শুনিয়ে দেন এঁরা। মোদি নিজে সব রাষ্ট্রনেতার সঙ্গেই হিন্দিতে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সুতরাং বিদেশি রাষ্ট্রনেতারা ভারতে এলে বা মোদি বিদেশ সফরে গেলে তাঁর সঙ্গে থাকেন দক্ষ দোভাষীরা।
তাঁদের প্রায় সকলেই উচ্চপদস্থ আইএফএস আধিকারিক। যেমন, নীলাক্ষী বিদেশমন্ত্রকের পশ্চিম আফ্রিকা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা। শিপ্রা ওই মন্ত্রকের ‘সেন্ট্রাল ইওরোপ’ বিভাগের উপসচিব।
ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা, ফরাসি-সহ মোট ১৫টি ভাষায় দক্ষ নীলাক্ষী কার্যত প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য দোভাষী বলেই শোনা যায়। একটি সংবাদ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৭ বার বিদেশ সফর করেছেন মোদি। যার মধ্যে অন্তত ১৪টি সফরে তাঁর দোভাষী ছিলেন নীলাক্ষী। মোদির রাশিয়া সফরের সময় দোভাষী হিসাবে সঙ্গে ছিলেন শিপ্রা।
এর আগে তিনি আরও তিনজন প্রধানমন্ত্রী— ইন্দ্রকুমার গুজরাল, অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং মনমোহন সিংহের দোভাষী হিসাবে কাজ করেছেন।
এবেলা জানিয়েছে, ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি শুধু হাসেন। পেশাগত বাধ্যবাধকতায় সংযতবাক। শিপ্রার বাবা ছিলেন বিহারের প্রবাসী বাঙালি। মা মালদহের মেয়ে। বড় হয়ে ওঠার বছরগুলি কেটেছে ভারতের বিভিন্ন শহরে।
বাংলা শিখেছেন নিজের চেষ্টায়। যদিও এই ভাষায় লিখতে বা পড়তে তিনি সেরকম স্বচ্ছন্দ নন। তবে শিপ্রার বন্ধুমহল জানাচ্ছে, জন্মসূত্রে পাওয়া বাঙালি ঐতিহ্য তিনি একান্তভাবেই খুঁজে পান বাঙালি হেঁসেলে। বাঙালি খাবার তাঁর সবিশেষ পছন্দ।
দোভাষীর কাজে সংশ্লিষ্ট বিদেশি ভাষা ছাড়াও জানতে হয় কূটনীতির খুঁটিনাটি। যাতে তর্জমার দরুন কোনও কূটনৈতিক বিড়ম্বনা তৈরি না-হয়। মোদির ভুটান সফরে দোভাষী হিসাবে লোকসভা সচিবালয়ের এক কর্মীকে নিযুক্ত করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তিনি মোদির শুদ্ধ হিন্দির অনুবাদ করতে পদে পদে হোঁচট খেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। তারপরই স্থির হয়, প্রধানমন্ত্রীর দোভাষী হবেন ‘ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে’র কয়েকজন ‘এ গ্রেড’ আধিকারিক।
ভারতের রাষ্ট্রভাষার প্রচারের উদ্দেশ্যে বিদেশমন্ত্রকে খোলা হয়েছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হিন্দি দফতরও! যার প্রধান ১৯৯২ সালের আইএফএস নীনা মলহোত্র। সেই দফতরই স্থির করেছে, প্রধানমন্ত্রীর জন্য সবচেয়ে দক্ষ দোভাষী নীলাক্ষী এবং শিপ্রা!
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস