আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্যতিক্রমী মানুষদের মধ্যে ডাক্তার শেখর সেনগুপ্তের নামটি অবশ্যই উল্লেখ করা যায়৷ তিনি কথা দিয়ে কথা রেখেছেন৷ শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ এই চিকিত্সক প্রতিদিনই এখন ব্যস্ত প্রতিশ্রুতি পালনের দায়বদ্ধতায়৷ ডিসেম্বরের শেষদিকে ভারতের কলকাতার চড়কতলা মাঠে আয়োজিত সাংস্কৃতিক মেলায় নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বেবি-শো ও শিশুদের স্বাস্থ্যশিবির৷ সেখানেই আমন্ত্রিত হয়েছিলেন শেখরবাবু৷ শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় শেখরবাবু লক্ষ করেন, বাচ্চাদের বড় অংশই আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণিভুক্ত৷ তখনই তিনি জানান, যে শিশুদের তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন, তাদের বছরভর তিনি তার চেম্বারে বিনা ফি-তেই দেখবেন৷ প্রয়োজন হলেই ওই শিশুদের বাবা-মা অথবা অভিভাবকেরা যেন বাচ্চাদের নিয়ে তার চেম্বারে চলে আসেন৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
এর পর থেকেই 'ডাক্তারবাবু'র চেম্বারে প্রতিদিনই আসতে থাকে অনেক অনেক শিশু৷ নিত্যনৈমিত্তিক রোগী দেখার বাইরে তার ব্যস্ততা বেড়েছে বহু গুণ৷ 'দখিনা বাতাস' নামে সংস্থা আয়োজিত সেই সাংস্কৃতিক মেলার স্বাস্থ্যশিবিরে যে সব শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাদের অনেকেরই হাজির হচ্ছেন তার চেম্বারে৷ ডাক্তারবাবু শুধু রোগীদের দেখেই ক্ষান্ত নন৷ যতটা পারছেন ওষুধপত্রও দিচ্ছেন৷ তার কথায়, 'জীবনের খাতায় তো অলিখিত কিছু নিয়ম থাকে৷ সেটা মেনেই আমি আর্থিক ভাবে দুর্বলতর শ্রেণির ওই শিশুদের জন্য চেম্বারের দরজা খুলে রেখেছি৷ আসলে আমাকে নিজের জীবনে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল৷ সেটা আমি এখনো ভুলতে পারিনি৷'
মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র শেখরবাবু বলেন, 'দেখুন, শুধু রোগী দেখাতেই ডাক্তারের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না৷ রোগীকে সুস্থ করে তোলাটাও চিকিত্সকের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে৷ সমস্যা হল, ভালো করে রোগীকে দেখলাম, ভালো ওষুধ প্রেসক্রাইব করলাম-চমত্কার কথা৷ কিন্তু, যদি রোগীর সাধ্য না থাকে ওষুধ কেনার, পথ্যের ব্যবস্থা করার-সে রোগী ভালো হবে কি করে? ফলে, যতটা পারা যায় ওষুধপত্র দেয়ার চেষ্টা চালাই৷' কিন্তু, কড়কড়ে ফি-এর টাকা যে পকেটে আসছে না? ডাক্তারবাবুর কথায়, 'বাঁচতে গেলে টাকা লাগেই৷ কিছু রোজগার তো করছিই৷ খানিকটা না হয় পকেটে এল না৷ এত ডেবিট-ক্রেডিট হিসাব কষলে আর জীন চলবে কি করে!'
দখিনা বাতাসের দুই কর্মী সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্নিগ্ধা দত্ত খুবই খুশি৷ কারণ, তাদের সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজনের কারণেই এলাকার দুর্বলতর শ্রেণির শিশুদের অন্তত একটা ক্ষুদ্র অংশের চিকিত্সার সুযোগ মিলছে৷ সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায়ের মতে, 'এটি বোধহয় নিতান্তই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ আজকাল সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে এই ধরনের ঘটনা আগের তুলনায় অনেক বেশি নজরে আসছে৷ হাতে কোনো পরিসংখ্যান নেই৷ তাও যেটা দেখার, তা হল সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়ার প্রবণতা কি তুলনামূলক ভাবে বাড়ছে? তা যদি হয় তা হলে দায়টা মানবিকতাজনিত৷ বা যে সমাজব্যবস্থায় আমি রয়েছি, তাকে কিছু প্রতিদান দেয়ার দায়বদ্ধতাও কারণ হিসাবে গণ্য হতে পারে৷'
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই