শুক্রবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৫:৫৭:৪০

ধর্মের জন্য মানুষকে নিশানার রাজনীতি বর্জন করতে হবে : ওবামা

ধর্মের জন্য মানুষকে নিশানার রাজনীতি বর্জন করতে হবে : ওবামা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আমেরিকা একটা পরিবার, আর আপনারা সেই পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ বুধবার ক্যান্টন্সভিলে বাল্টিমোর ইসলামিক সোসাইটির মসজিদে দাঁড়িয়ে আমেরিকার মুসলিমদের এই বার্তাই দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে সাম্প্রতিক কালে মুসলিম বিদ্বেষের যে চড়া সুর দেখা গিয়েছে তা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও এটা স্পষ্ট, এই ধরনের বক্তব্য থেকে তৈরি হওয়া সন্দেহ ও ভীতির পরিবেশকে নস্যাত্‍ করতেই নিজের প্রেসিডেন্ট থাকার মেয়াদে প্রথম বার নিজের দেশের ভিতরের কোনো মসজিদে বক্তব্য রাখলেন ওবামা৷

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমদের আমেরিকায় ঢুকতে না দেয়ার দাবির উল্লেখ না করেও ওবামার বক্তব্য, 'সাম্প্রতিক কালে মার্কিন মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক ভাষ্য আমরা শুনছি তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, এই ধরনের ধ্যানধারণার এ দেশে কোনো স্থান নেই৷ যে রাজনীতি সংস্কার ও বৈষম্যতে ইন্ধন দেয় নিজের সুবিধার জন্য, ধর্মের জন্য মানুষকে নিশানা করে, সেই রাজনীতিকে আমাদের বর্জন করতে হবে৷' ভাষণের পর বাল্টিমোর মুসলিম সমাজের কয়েক জন ব্যক্তির সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকও করেন প্রেসিডেন্ট৷

প্যারিস ও ক্যালিফোর্নিয়া হামলার প্রেক্ষিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের মনোভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে আমেরিকায়৷ পিটসবার্গে গত সপ্তাহেই এক মুসলিম ট্যাক্সিচালককে গুলি করার ঘটনা তার অন্যতম৷ এই পরিস্থিতিতে, বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, থমাস জেফারসনের মতো আমেরিকান সমাজ-সংস্কৃতির পুরোধা পুরুষদের মুসলিমদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে ইসলাম যে আমেরিকার জন্মলগ্ন থেকে তার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত তা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন ওবামা৷

উত্তর ডাকোটায় আমেরিকার প্রথম মসজিদ গড়ে ওঠার ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছেন তিনি, জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে পুরোনো মসজিদটি রয়েছে আইওয়া প্রদেশে৷ বাল্টিমোরের যে মসজিদটিতে ওবামা এ দিন গিয়েছেন সেটির নির্বাচনও তাত্‍পর্যপূর্ণ৷ ১৯৬৯ সালে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক জন চিকিত্‍সকের প্রার্থনা করার ছোট্ট একটি জায়গা থেকে এই মসজিদটি কালক্রমে স্থানীয় মুসলিম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে৷ মসজিদ চত্বরে রয়েছে একটি স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং একটি গার্ল স্কাউট সংগঠন৷ এই মসজিদের উত্থানকে 'একটি সত্যিকারের মার্কিন আদর্শের আখ্যান' বলে বর্ণনা করেছেন ওবামা৷

এই সাক্ষাত্‍ ওবামার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত দিক দিয়েও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে অধিকাংশের ধারণা ছিল তিনি মুসলিম, যেহেতু তার নাম মুসলিম নামের মতো৷ বহু বিশেষজ্ঞের মতে, তিনি যে খ্রীস্টান, এই বিষয়টি মার্কিন নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারা তাকে প্রেসিডেন্টের আসনের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে অনেকটাই সাহায্য করেছিল৷ এখনো, তার ৮ বছরের মেয়াদ শেষের সময়েও সমীক্ষা বলছে, ২৯ শতাংশ মার্কিন নাগরিক তাকে মুসলিম বলে মনে করেন৷ সম্ভবত তার ধর্মপরিচয় নিয়ে এই বিতর্ক থেকেই বিদেশ সফরকালে নানা মসজিদে গেলেও এত দিন নিজের দেশে কোনও মসজিদে যাননি ওবামা৷

বিশেষ করে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রিপাবলিকানরা ক্রমাগত তার ধর্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে যাচ্ছেন সভার পর সভায়, তখন তার এই পদক্ষেপ যথেষ্ট সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই দেখছে ওয়াকিবহাল মহল৷ সমালোচনা অবশ্য বজায় থেকেছে এ দিনও, এবং প্রত্যাশিত দল থেকেই৷ বুধবার ওবামার মসজিদ সফর নিয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, 'এ বিষয়ে আমি বিশেষ কিছু ভাবিনি৷ ও সব জায়গায় ওঁর (ওবামা) যেতে ভালো লাগে বোধহয়৷' ক'দিন আগেও ট্রাম্প টিপ্পনি কেটে ইঙ্গিত করেন, ওবামা বড়দিনের সময় অন্য কিছু উদ্যাপন করেন৷
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে