আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 'আমার বাবা খুব বাজে লোক৷ খালি আমার মাকে ধরে মারে ...৷ আমার মা রোজ রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করে৷ আমিও খুব কাঁদি৷ কেউ আমাদের কথা শোনে না৷ এমনকি আমার মামারাও আমাদের কথা শোনে না৷ বাবাকে আমি কিছু বলতে গেলে আমাকেও মারধর করে৷ এটাই আমার পরিবার৷' টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এখবর জানা যায়।
স্কুলের খাতায় এ সবই লিখে এসেছে এগারো বছরের এক ছাত্রী৷ সল্টলেকের একটি অভিজাত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির সার প্রাইজ টেস্টে 'মাই ফ্যামিলি' শীর্ষকে রচনা লিখতে দেয়া হয়েছিল৷ আর পাঁচ জন যখন মা-বাবা এবং অন্যদের সঙ্গে মজা করার কথা লিখছে, ক্লাসরুমের এক কোণায় বসে নীরবে বাবার উপর এক রাশ অভিমান উগরে দিয়ে এসেছে ওই ছাত্রী৷ যা দেখে হতবাক স্কুল কর্তৃপক্ষ৷ এমনকি সুযোগ পেলে এক দিন সে মা-কে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ছাত্রীটি৷ সে লিখেছে, 'যখন আমি বড় হব, মা-কে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাব৷ এমন জায়গায় যাব যেখানে বাবার মতো দুষ্টু লোকেরা থাকবে না৷'
স্কুলের এক শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ক্লাসে সারাক্ষণ চুপচাপই থাকে ওই ছাত্রী৷ বন্ধুদের সঙ্গেও খুব একটা মেলামেশা করে না৷ ওই ছাত্রীর ক্লাস টিচার বলছেন, 'প্রথমে ওই লেখাটা দেখে কি করব বুঝতে পারছিলাম না৷ সঙ্গে সঙ্গে কথা বলি প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে৷ স্কুলে নিযুক্ত মনোবিদের সঙ্গেও কথা বলি৷' এর পর ডেকে পাঠানো হয় ওই বালিকার বাবা-মাকে৷ দফায় দফায় তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়৷ দীর্ঘ কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার পর স্কুলের পক্ষ থেকে ওই ছাত্রীর মা-কে পরামর্শ দেয়া হয়, যত দিন না তার স্বামী সঠিক আচরণ করছেন এবং বাবার প্রতি মেয়ের শ্রদ্ধা তৈরি না হচ্ছে, ততদিন অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করা হোক৷ মারাত্মক মানসিক এবং শারীরিক চাপের মুখে এক রকম অসহায় হয়েই যে ওই ছাত্রী 'প্রতিবাদ' জানাতে এমন পথ বেছে নিয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত মনস্তাত্ত্বিক জয়রঞ্জন রাম৷ তার কথায়, 'মেয়েটির যা বয়স তাকে একেবারে অবুঝ বলা ঠিক হবে না৷ লাগাতার ঘরোয়া হিংসার মুখে ওই ছাত্রীর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়াতেই রচনার খাতায় নিজের মনের সব কথা বলে এসেছে৷'
অনেক মনস্তাত্ত্বিকেরই বক্তব্য, সাদা কাগজের উপর এমন অনেক কথাই বলা যায়, যা অনেক সময় নিজের সব থেকে কাছের মানুষকেও বিশ্বাস করে বলা যায় না৷ এ ক্ষেত্রেও কি তেমনই হল? প্যারেন্টাল কনসালটেন্ট পায়েল ঘোষের কথায়, 'রোজ যে পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে মেয়েটি, সে হয়তো ভেবেছে এ ভাবেই গোটা পৃথিবীকে জানাবে সে৷ এটাই তার প্রতিবাদের উপায়৷ স্কুলের পক্ষে এটা অত্যন্ত ভালো, যে মেয়েটি অন্তত স্কুলে সেই কথা নির্ভয়ে জানানোর সুযোগ আছে বলে মনে করেছে৷'
তবে অন্য একটি আশঙ্কার কথাও শুনিয়ে রাখছেন পায়েল৷ তার বক্তব্য, 'এই বয়সে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা পারিবারিক বিষয়ে অনেক বেশি মুখর হয়৷ এখন দেখতে হবে বাবার প্রতি কোনো জমানো আক্রোশ বা পরিবারের কোনো সিদ্ধান্তে অখুশি হয়ে সে এ-সব বলেনি তো ? অনেক সময় বাচ্চাদের মধ্যে এমন মানসিকতাও দেখা যায়৷' সেন্ট্রাল মডেল স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল নবারুণ দে অবশ্য দায়িত্ব দিচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষকেই৷ তার বক্তব্য, 'সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্কুলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ থাকা উচিত৷ প্রয়োজনে তারা প্রশাসনেরও সাহায্য নিতে পারে৷'
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই