আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাঝে মধ্যেই প্রেমিক-প্রেমিকার পুনর্মিলনের নানা ধরণের খবর শোনা যায়। তবে এবারের খবরটি একটু ভিন্নতর। তাদের শেষ দেখা হয়েছিল ৪৪-এর জুনে। তার পর কেটে গেছে প্রায় ৭২ বছর। দেখার পর আবেগ সামলাতে পারেননি এখন নরউড টমাস (৯৩) আর জয়েস মরিস (৮৮)। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে-টা একসঙ্গেই কাটানোর কথা ভেবেছেন।
বুধবার দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে ফের মুখোমুখি হলেন এই বৃদ্ধ প্রেমিক-প্রেমিকা। জীবনের এই শেষ সময়ে এসে পুনর্মিলন হলো আবার। ব্যাপারটি যেমন দারুণ রোমান্টিক, তেমনি এর পেছনে রয়েছে বিস্ময়কর কিছু ঘটনাও।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে তাদের প্রথম দেখা হয়। বছর একুশের টমাস মার্কিন সেনার প্যারাট্রুপার হিসেবে কাজ করতেন। আর মরিস সদ্য সতেরো। মিত্র শক্তি (ব্রিটেন, ফ্রান্স, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া, চিন)-এর হয়ে লন্ডনের শিবিরে ছিলেন টমাস। দু’জনের আলাপ সেখানেই। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব পরিণতি পায় প্রেমে।
কিছু দিনের মধ্যেই উত্তর-পশ্চিম ইউরোপকে নাৎসি-মুক্ত করতে সমুদ্রপথে হানা দেয় মিত্র শক্তি (৬ জুন, ‘দ্য ডে’)। হার হয় হিটলারের। যুদ্ধ শেষে আমেরিকায় ফিরতে হয় টমাসকে। দেশে ফিরেও প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল টমাসের। চিঠি আদানপ্রদান চলত। মরিসকে আমেরিকায় আসতে অনুরোধ করেন। বিয়ের প্রস্তাবও দেন তিনি।
দূরত্ব বাদ সাধে প্রেমে। একটা সময়ে মরিস ভাবতে শুরু করেন টমাস বোধহয় নতুন সঙ্গিনী পেয়ে গিয়েছেন। সন্দেহ থেকেই ভাঙন শুরু। সময়ের সঙ্গে দু’জনেই নতুন করে জীবন শুরু করেন। বিয়েও হয়। মরিসের বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। টমাসের স্ত্রী মারা গিয়েছেন ২০০১-এ।
সাত দশক পেরিয়ে বছর খানেক আগে টমাস-মরিসের আবার যোগাযোগ হয়। ফেসবুকে টমাসকে খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন মরিস। নিজে খুঁজে না পেয়ে কাজে লাগিয়েছিলেন ছেলেকে। আতিপাতি করে খুঁজে ভার্জিনিয়ার একটি সংবাদপত্রে ‘দ্য ডে’ নিয়ে একটি নিবন্ধ খুঁজে পান তিনি। সেই প্রচ্ছদেই নরউড টমাসের নাম ছিল। তার সূত্র ধরেই টমাসের ফোননম্বর, ঠিকানা জোগাড় করার চেষ্টা চলে।
প্রথমে ফেসবুক। তার পর স্কাইপ। যোগাযোগ বাড়তে থাকে টমাস-মরিসের। দেখা করার পরিকল্পনাও করেন। তবে আর্থিক সঙ্গতির অভাবে তা হয়ে উঠছিল না। দেখা করার জন্য সেই ফেসবুকেই ভরসা রাখেন দু’জন। ওঁদের গল্প ছড়িয়ে পড়ে পোস্টে পোস্টে। টমাস-মরিসের প্রেম কাহিনি নজর কাড়ে সকলের। নিজের ইচ্ছেতেই যে যেমন পারেন অর্থ দিতে থাকেন।
তারই জোরে বুধবার সূদুর ভার্জিনিয়া থেকে অ্যাডিলেডে উড়ে এসেছেন টমাস। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই শহরটায় আপাতত সপ্তাহ দু’য়েক থাকার পরিকল্পনা।
বান্ধবীকে ফিরে পেয়ে টমাসের প্রতিক্রিয়া, ‘জীবনের সব চেয়ে ভাল মুহূর্তটা কাটাচ্ছি।’ আর লজ্জায় তো রা-ও কাটতে চাইছিলেন না মরিস। টমাসের হাত জড়িয়ে, মুচকি হেসে শুধু বলেছেন, ‘ভাবিনি ওঁকে ফিরে পাব।’
ভিসা শেষে টমাসকে তো ফিরতে হবে, তখন? সে সব কথা এখন মাথাতেই আনছেন না ওঁরা। চোদ্দোটা দিন সব টুকু দিয়ে শুধু উপভোগ করতে চান।
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস