আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মূলত কংগ্রেসের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ইন্ডিয়া জোট। সেই জোটে কংগ্রেসের নেতৃত্বে চলা ইউপিএর দলগুলো ছাড়াও শামিল হয়েছিল সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল, ওমর আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্স ও বাম দলগুলো। অন্ধ্রের ওয়াইএসআর কংগ্রেস, ওড়িশার বিজেডি ও তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে ছাড়া প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দলই ইন্ডিয়াতে ছিল। এখন সেই জোটেই বিরোধ তীব্র হচ্ছে।
সম্প্রতি দিল্লি নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট না হওয়ায় এবং সমাজবাদী পার্টি ও আম আদমি পার্টিকে (আপ) তৃণমূল সমর্থন করায় গোলমাল আরো বেড়েছে। আপ ও কংগ্রেসও একে অপরের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করছে।
এই পরিস্থিতিতে বিতর্ককে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ। তিনি শ্রীনগরে বলেছেন, ‘দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো যোগ নেই।
আপ ও কংগ্রেস সেখানে ঠিক করুক, কিভাবে তারা সবচেয়ে ভালোভাবে বিজেপিকে মোকাবেলা করতে পারে।’
এমনকি প্রশ্ন করা হয়, ইন্ডিয়া জোটকে কি লোকসভা নির্বাচনের জন্য গঠন করা হয়েছিল? ওমর তার জবাবে বলেন, ‘আমার মনে হয়, এ রকম কোনো সময়সীমা রাখা হয়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ইন্ডিয়া জোটের কোনো বৈঠক হচ্ছে না। তাই এর নেতৃত্ব কে দেবে, কর্মসূচি কী হবে, তা টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই।
যদি লোকসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে এই জোট বানানো হয়ে থাকে, তাহলে ওরা এটাকে গুটিয়ে ফেলুক।’
লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়েছিল। আপ লড়েছিল চারটি আসনে, তিনটিতে কংগ্রেস। কিন্তু জোট সত্ত্বেও সবগুলো আসনে তারা বিজেপির কাছে হেরে যায়। বিজেপি আবার সাতটির মধ্যে সাতটি আসনে জয় পায়।
তারপর এবার বিধানসভায় আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট হয়নি। তারপর দিল্লির কংগ্রেসপ্রধান অজয় মাকেন কেজরিওয়ালের তীব্র সমালোচনা করেন। কেজরিওয়ালকে ‘ফর্জিওয়াল’ অভিহিত করে মাকেন বলেন, কেজরিওয়াল জাতীয়তাবিরোধী, কারণ তিনি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, ৩৭০ ধারা বিলোপ, নাগরিকত্ব আইন সমর্থন করেছিলেন।
মাকেনের অভিযোগ ছিল, করোনার সময় জনগণের অর্থ খরচ করে কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন সাজিয়েছেন। এরপর আপ জানায়, তারা ইন্ডিয়া জোট থেকে কংগ্রেসকে বহিষ্কার করার জন্য অন্য শরিকদের বলবেন। এরপর সমাজবাদী ও তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তারা আপকে সমর্থন করছে।
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া
এদিকে কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো কংগ্রেসের জন্য কিছু করেননি। তিনি লোকসভা নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া জোটের সদস্য হয়েছেন। কিন্তু কোথাও তিনি ইন্ডিয়া জোটকে ভোট দেওয়ার কথা বলেননি।’
অধীর বলেছেন, ‘তিনি ইন্ডিয়া জোটকে ব্যবহার করেছিলেন ভোট সংগ্রহের জন্য। এটা তার একটা কৌশল ছিল। বিজেপিবিরোধী যে হালচাল তৈরি হয়েছিল তার সুবিধা নিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি যখন কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা করে, তখন মমতাও কংগ্রেসকে দুর্বল করার কাজে নেমে পড়েন।’
অধীর জানিয়েছেন, ‘আমি কেজরিওয়ালকে একটা পরামর্শ দিতে চাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন নিলে হিতে বিপরীত হবে। দিল্লির বাঙালি জানে, পশ্চিমবঙ্গে স্বৈরাচৈারী শাসন চলছে। পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা নিয়ে দিল্লির বাঙালিরা আমাদের কাছে তাদের মতামত জানায়। তাই মমতার সমর্থন নিয়ে দিল্লিতে বাঙালির ভোট পাওয়ার চেষ্টা করলে কেজরিওয়ালের ক্ষতি হবে।’
ইন্ডিয়া থেকে যাবে
অন্যদিকে প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া জোটের দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ আছে, তাদের মতাদর্শগত বিরোধ আছে, তাদের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত আছে। ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছিল বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতা করার জন্য। নিজেদের মধ্যে লড়লেও ইন্ডিয়া জোটের দলগুলো সেই বিরোধ থেকে সরে আসতে পারবে না। কংগ্রেসকেও অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ কংগ্রেস সবচেয়ে বড় দল। তারা কংগ্রেসকে চাপে রাখার চেষ্টা করবে।’
শরদের বক্তব্য, ‘লোকসভাতেও তো কংগ্রেস ও তৃণমূল আলাদা লড়েছিল। অথচ দুই দলই ইন্ডিয়া জোটে ছিল। ফলে দিল্লিতে আলাদা লড়লেও কংগ্রেস ও আপেরও ইন্ডিয়া জোটে থাকতে অসুবিধা নেই। তবে যেহেতু কিছু নেতার জাতীয় স্তরে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে, বিভিন্ন দলের আলাদা রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, তাই এই বিরোধও চলবে। তাতে বিজেপির সুবিধা হবে কি না, সেটা অন্য প্রশ্ন।’- ডয়চে ভেলে