আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় মঙ্গলবার ২৬ জন নিহত হন। এ হামলায় পাকিস্তান পরোক্ষভাবে জড়িত এমন অভিযোগ তুলে দেশটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েছে নয়াদিল্লি।
এর জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত, সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ এবং নিজেদের আকাশ সীমায় ভারতের যে কোনো ধরনের বিমানের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এমন উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে এখন হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে।
জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক শক্তি
ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। অপরদিকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২৪ কোটি। সামরিক দিক দিয়ে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে।
ভারতে সামরিক বাহিনীতে কাজ করার জন্য ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ প্রস্তুত আছেন। অপরদিকে পাকিস্তানে এ সংখ্যা ১ কোটি।
অর্থনৈতিক দিক দিয়েও ভারত সামরিক খাতে অনেক বেশি ব্যয় করে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত সামরিক খাতে ৭৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন রুপি বরাদ্দ দিয়েছিল। যা তাদের মোট বাজেটের ১৩ শতাংশ। অপরদিকে একই সময়ে পাকিস্তানের সামরিক খাতে বাজেট ছিল ৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
সক্রিয় সামরিক জনবল
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সেনাবাহিনীর সক্রিয় জনবলের সংখ্যা ১৪ লাখ ৪০ হাজার। এর মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে তারা। এর পাশাপাশি তাদের ১১ লাখ ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনা রয়েছে। এছাড়া তাদের আধাসামরিক বাহিনীতে রয়েছে ২৫ লাখ সদস্য।
অপরদিকে পাকিস্তানের পেশাদার ও যুদ্ধের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সক্রিয় সেনা রয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার। এছাড়া তাদেরও বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য রয়েছে।
সেনাবাহিনীর সক্ষমতা
ভারতের সেনাদের রয়েছে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি অর্জুন প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক, টি-৯০ ‘ভিম’ ট্যাংক, পিনাকা মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চার, ব্রাহমোস ক্রুস মিসাইল, হাউইটার ও অন্যান্য আধুনিক কামান।
অপরদিকে পাকিস্তানের সেনারা তাদের ক্ষিপ্রতার জন্য পরিচিত, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেনা জড়ো করতে পারে। পাকিস্তানের সেনাদের রয়েছে আল-খালিদ ট্যাংক। এছাড়া তারা চীন ও পশ্চিমাদের অন্যান্য আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে।
বিমানবাহিনীর সক্ষমতা
ভারতের বিমানবাহিনী বিশ্বের অন্যতম বড় এবং কার্যকরী। তাদের বিমানবাহিনীর ২ হাজার ২২৯টি বিমান রয়েছে। এরমধ্যে ৬০০টি যুদ্ধবিমান, ৮৩১টি সাপোর্ট বিমান এবং হেলিকপ্টার রয়েছে ৮৯৯টি।
তাদের বিমানবাহিনীতে আছে রাফায়েল, মিরেজ ২০০০, মিগ-২৯ এবং সুখোই এসইউ-৩০ এমকেএল। এছাড়া নিজস্ব প্রযুক্তিতে তেজাস নামের একটি বিমানও তৈরি করছে ভারত।
অপরদিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিমান রয়েছে ১ হাজার ৪৭০টি। যারমধ্যে ৪৭৯টি যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার রয়েছে ৩৪২টি, পরিবহণ বিমান রয়েছে ৩৯টি। দেশটির বিমানবাহিনীর কাছে প্রশিক্ষণ বিমান আছে ২৮৩টি।
পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর কাছে আছে তাদের নিজস্ব ও চীনা প্রযুক্তির জেএফ-থান্ডার, ফ্রান্সের তৈরি মিরাজ-৫, মিরাজ-৩, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি লকহিড এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, চীনা এফ-৭পিজিসহ অন্যান্য দেশের বিমান ও হেলিকপ্টার।
নৌবাহিনীর সক্ষমতা
ভারতের নৌবাহিনীও বেশ বড়। তাদের রয়েছে ১৩০টির বেশি জাহাজ। যারমধ্যে আছে বিমানবাহী রণতরী, ডেস্ট্রয়ার এবং সামমেরিন। দেশটির নৌবাহিনীতে রয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার সদস্য। তাদের বিমানবাহী জাহাজ আছে দুটি, সাবমেরিন ১৮টি (যার একটি পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ)।
অপরদিকে পাকিস্তানের নৌবাহিনী সাজানো হয়েছে প্রতিরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে। তাদের জাহাজ রয়েছে ৭৫টির বেশি। যারমধ্যে ১৩টি সাবমেরিনও আছে। পাক নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার সদস্য। তবে পাকিস্তানের কোনো বিমানবাহী রণতরী নেই।