আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ব যখন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে গভীর উদ্বেগে, তখন এক বিস্ময়কর প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছে তেহরান। এই প্রস্তাব শুধু কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যকেও নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দিতে পারে। ইরান এখন সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে মিলে একটি যৌথ পারমাণবিক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কনসোর্ডিয়াম গঠনের পরিকল্পনা করছে।
তেহরানের মতে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তা হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবেলার কৌশল নয়, বরং প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশগুলোকেও এই স্পর্শকাতর প্রক্রিয়ায় অংশীদার করার একটি কৌশলী প্রয়াস। ইরান বলছে, এই কনসোর্ডিয়ামের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের দায়িত্ব ভাগাভাগি হবে, ফলে ভবিষ্যতে যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, তা হলে শুধু ইরান নয়, সংশ্লিষ্ট অংশীদার দেশগুলোকেও জবাব দিতে হবে।
এই প্রস্তাব সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে জানা গেছে, ওমানের রাজধানী মাস্কটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিন ঘণ্টার এক বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। এর পরপরই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি দুবাইয়ে গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
উল্লেখ্য, আমিরাতের নিজস্ব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি না থাকলেও দেশটির বারাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে এবং তা আমিরাতের প্রায় এক চতুর্থাংশ বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করছে। ইরানের প্রস্তাব অনুযায়ী, এই কনসোর্ডিয়ামে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা সীমাবদ্ধ থাকবে ৩.৬৭ শতাংশের মধ্যে, যা ছিল ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির শর্ত।
উল্লেখযোগ্য যে, এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একতরফা সিদ্ধান্তে সরে আসে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরান সম্পূর্ণভাবে তার সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করুক এবং সব পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করুক। তবে ওয়াশিংটন নিজেই এখন রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে রয়েছে। একদিকে ট্রাম্প কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন, অন্যদিকে ইরানের “গম্ভীরতা”র প্রশংসাও করছেন।
এই কনসোর্ডিয়ামের ধারণা একেবারে নতুন নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রিন্সটনের পদার্থবিদ ফ্র্যাঙ্কন হিপেল এবং ইরানের সাবেক পারমাণবিক আলোচক সৈয়দ হোসাইন মুসাভিয়ান একটি প্রবন্ধে এ ধারণা উত্থাপন করেছিলেন। তাদের মতে, সৌদি আরব ও আমিরাত যদি এই প্রকল্পে অর্থায়ন ও অংশীদার হয়, তাহলে তারা শুধু প্রযুক্তি নয় বরং কর্মসূচির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখতে পারবে।
বর্তমানে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০১৫ সালের সীমার অনেক বেশি এবং অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মাত্রার কাছাকাছি। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই মাত্রাকে বেসামরিক উদ্দেশ্যের চেয়ে বেশি বলেই মনে করছেন।
তবে ইরান আবারও জানিয়েছে, তারা কিছু সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে প্রস্তুত, যদি পারস্পরিক সম্মান বজায় থাকে। ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজেদ তাক রাওবাঞ্জি এই বক্তব্য দিয়ে আলোচনার পরিবেশ কিছুটা নরম করেছেন। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আল বুসাইদীও বলেছেন, কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আলোচনায় এসেছে, যা সম্মানজনক সমাধানের আশা জাগায়।