শনিবার, ০৫ মার্চ, ২০১৬, ০৯:২৭:৪৫

মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তক্ষেপ, ক্ষোভে উত্তাল সংসদ

মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তক্ষেপ, ক্ষোভে উত্তাল সংসদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঐতিহ্যবাহী আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তক্ষেপ করছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার। নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উত্থাপন করে তীব্র সমালোচনা করল বিরোধীরা। শুক্রবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় কাজকর্ম শুরু হতেই এ নিয়ে গোলমাল সৃষ্টি হয়। রাজ্যসভায় সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস এমপিরা এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সংখ্যালঘু মর্যাদা শেষ করে দিতে চাচ্ছে যেটা কোনো দিনই হতে দেয়া হবে না। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের মতামত চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। আজ এ নিয়ে বিরোধীদের গোলমালের জেরে দুপুর ১২ টা নাগাদ সংসদের কাজ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখতে হয়।

সংসদে সমাজবাদী পার্টির সদস্য জাভেদ আলী খান আলগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়য়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় ৫ টি ক্যাম্পাস খোলা প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, তিনটি কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আরো দুটি খোলা হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়য়ের চ্যান্সেলরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি প্রকাশ্যে এসেছে যে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী এসব কেন্দ্রকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সাচার কমিটির রিপোর্টে সংখ্যালঘুদের পিছিয়ে পড়া এবং তাদের পরিস্থিতি পরিস্থিতি প্রকাশ্যে আসার পরে তৎকালীন ইউপিএ সরকার এ সম্পর্কিত একটি নীতি তৈরি করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বাইরে ৫ টি কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এরইমধ্যে কেরলের মাল্লাপুরম, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ এবং বিহারের কিশানগঞ্জে ক্যাম্পাস খোলা হয়েছে। আরো দুটি খোলা হবে। এখন বিজেপি সরকার এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছে।’

জাভেদ আলী খান বলেন, সরকার একদিকে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ (সবার সঙ্গে সকলের উন্নয়ন)-এর কথা বলছে, অন্যদিকে্ সমাজের একটি বড় অংশকে শিক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে। তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে সংখ্যালঘু মর্যাদা প্রসঙ্গে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করার দাবি করেন।

সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাখভি সাফাই দিয়ে বলেন, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্য সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানকে সংখ্যালঘু মর্যাদা রক্ষা করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত মামলা আদালতে রয়েছে, তাই সকলকে আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া উচিত।

মন্ত্রীর সাফাইয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে জেডিইউ নেতা শারদ যাদব সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বলেন, যে প্রশ্নের সমাধান আইনের আওতায় সর্বসম্মতিতে হয়ে গেছে, তাকে আপনারা হলফনামা দিয়ে আদালতে নিয়ে গেছেন।

কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং সরকারের বিরুদ্ধে হাউসকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তুলে আদালতে দাখিল করা হলফনামা ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানান।

কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘পূর্বের ইউপিএ সরকারের দেয়া হলফনামা প্রত্যহার করে এনডিএ সরকার আদালতে নতুন করে হলফনামা দাখিল করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, হলফনামা কেন বদলানো হল? সরকার পক্ষপাতমূলক মনোভাব নিয়ে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান নষ্ট করতে চাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সিপিআই(এম) নেতা সীতারাম ইয়েচুরি দাবি করেন নতুন হলফনামায় সরকার কি বলেছে তা জানাতে হবে। কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নাখভি অবশ্য পক্ষপাতমূলক আচরণের কথা অস্বীকার করে তারা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করছেন না বা সমর্থন করছেন না বলে মন্তব্য করেন।

নাখভির মন্তব্যে তীব্র আপত্তি জানিয়ে সমাজবাদী পার্টির সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে ক্যুরিয়েনের আসনের সামনে চলে আসেন। পরে বসপা, কংগ্রেস, সিপিআই(এম)সদস্যরাও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করার দাবিতে স্লোগান দিয়ে ডেপুটি চেয়ারম্যানের আসনের সামনে চলে এসে স্লোগান দেয়া শুরু করেন।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে