আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বের যেকোনো দেশে যেকোনো সময় ভূমিকম্প হতে পারে। এতে অবকাঠামো ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের পাশাপাশি ঘটতে পারে প্রাণহানিও। তবে কিছু দেশ রয়েছে, যেগুলোতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চাদ, নাইজার, বাহামা, আইভরি কোস্ট, বুরকিনা ফাসো, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, লাটভিয়া, আয়ারল্যান্ড ও উরুগুয়ে। এই দেশগুলো প্রধান ভূমিকম্পের ফল্টলাইন থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে ভূমিকম্প হয় না।
চাদ
উত্তর-মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদে ভূমিকম্প ঝুঁকি অত্যন্ত কম। সবচেয়ে কাছের ফল্ট লাইন আফ্রিকা ও আরবীয় প্লেট সীমান্ত, যা দেশটি থেকে প্রায় ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরে। তবে বন্যা, খরা, দাবানলের মতো অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপদের ঝুঁকি রয়েছে।
নাইজার
চাদের প্রতিবেশী দেশ নাইজারও কোনো প্রধান ফল্ট লাইনের কাছে নেই। ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম হলেও দেশটিতে বন্যা, খরা ও উচ্চ তাপমাত্রা জনজীবন প্রভাবিত করতে পারে।
বাহামা
ক্যারিবীয় প্লেটের ফল্ট লাইন থেকে প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাহামা। ভূমিকম্প খুবই বিরল হলেও উপকূলীয় বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বেশি দেশটিতে।
আইভরি কোস্ট
পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশ কম। তবে বন্যা, আগুন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে। ২০২২ সালে ভারী বৃষ্টির কারণে প্রায় দুই হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল আইভরি কোস্টে।
বুরকিনা ফাসো
পশ্চিম আফ্রিকার স্থলবেষ্টিত দেশ বুরকিনা ফাসো। ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম হলেও বন্যা, খরা ও আগুনের ঝুঁকি রয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘ শুষ্ক মৌসুম কৃষি উৎপাদন প্রভাবিত করছে।
ফিনল্যান্ড
উত্তর ইউরোপের সুন্দর একটি দেশ। তাদের সবচেয়ে কাছের ফল্ট লাইনও ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরে। ফলে প্রাকৃতিক ভূমিকম্প হয় না বললেই চলে। তবে খনন বা বিস্ফোরণের কারণে মাঝেমধ্যে মানবসৃষ্ট ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ফিনল্যান্ডে বন্যা-দাবানলের মতো অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যাও বেশ কম।
ডেনমার্ক
উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দেশ। নিকটবর্তী ফল্ট লাইন আফ্রিকান-ইউরেশিয়ান প্লেট সীমান্ত প্রায় ১ হাজার ৯৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় ডেনমার্কে খুব কম ভূমিকম্প হয়, হলেও মাত্রা থাকে কম। তবে ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে। ২০২৩ সালে রেকর্ডসংখ্যক বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটি।
লাটভিয়া
বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত। প্রধান ফল্ট লাইন থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকায় ভূমিকম্প দেখাই যায় না। তবে বসন্তকালে ভারী বৃষ্টিপাত ও বরফ গলনজনিত বন্যা হতে পারে। ২০২৩ সালে ঝড় ও তুষারপাতের কারণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আয়ারল্যান্ড
উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দেশ। ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম। তবে বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কারণে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ২০০৮ সালে ১৫টি কাউন্টি প্রভাবিত হয়েছিল।
উরুগুয়ে
দক্ষিণ আমেরিকার আটলান্টিক উপকূলবর্তী দেশ। প্রধান ফল্ট লাইন থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় ভূমিকম্প বিরল এবং সাধারণত কম তীব্র। তবে উপকূলবর্তী অবস্থানের কারণে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
এই দেশগুলোতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম হলেও বন্যা, খরা বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ কোনো দেশই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শতভাগ নিরাপদ নয়। সূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস