আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এইচ-১বি কাজের ভিসার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা লটারিভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করে নতুন একটি ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। নতুন এই ব্যবস্থায় বেশি দক্ষতা ও উচ্চ বেতনপ্রাপ্ত বিদেশি কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের ধারাবাহিক পদক্ষেপের অংশ, যার লক্ষ্য এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচিকে নতুনভাবে সাজানো।
সমালোচকদের মতে, এই কর্মসূচি ধীরে ধীরে এমন একটি পথে পরিণত হয়েছে, যার মাধ্যমে কম মজুরিতে কাজ করতে ইচ্ছুক বিদেশি কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে আনা হচ্ছে। তবে সমর্থকদের দাবি, এই ভিসা কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের (ইউএসসিআইএস) মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্রাগেসার বলেন, ‘এইচ-১বি ভিসার বিদ্যমান এলোমেলো নির্বাচন পদ্ধতি অনেক মার্কিন নিয়োগকর্তা অপব্যবহার করেছে। তারা মূলত আমেরিকান কর্মীদের তুলনায় কম বেতনে বিদেশি কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করেছে।
চলতি বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ঘোষণায় উচ্চদক্ষ এইচ-১বি কর্মীদের জন্য বছরে ১ লাখ ডলার ভিসা ফি আরোপ করেন। এই সিদ্ধান্ত বর্তমানে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। একই সঙ্গে ধনী ব্যক্তিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ হিসেবে ১০ লাখ ডলারের ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা চালুর ঘোষণাও দেন তিনি।
নতুন নিয়ম ঘোষণা করে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই পরিবর্তন প্রশাসনের নেওয়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এর মধ্যে রয়েছে সেই প্রেসিডেনশিয়াল ঘোষণা, যেখানে ভিসার যোগ্যতা অর্জনের শর্ত হিসেবে প্রতিটি এইচ-১বি ভিসার জন্য নিয়োগকর্তাকে অতিরিক্ত ১ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে।
এত দিন এইচ-১বি ভিসা সম্পূর্ণভাবে লটারির মাধ্যমে দেওয়া হতো। চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি এইচ-১বি ভিসা পেয়েছে অনলাইন বাণিজ্য জায়ান্ট অ্যামাজন, যাদের অনুমোদিত ভিসার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। এরপর রয়েছে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস, মাইক্রোসফট, অ্যাপল ও গুগল। অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় এইচ-১বি কর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ডিএইচএসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় ‘ওয়েটেড সিলেকশন প্রসেস’ চালু করা হবে। এর ফলে বেশি দক্ষতা ও বেশি বেতন পাওয়া বিদেশি কর্মীদের এইচ-১বি ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। নতুন নিয়ম ২০২৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এবং আসন্ন এইচ-১বি ভিসার কোটা নিবন্ধন মৌসুমে প্রযোজ্য হবে।
এইচ-১বি কর্মসূচির সমর্থকরা বলেন, এটি স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাখাতে দক্ষ কর্মী নিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাদের মতে, এই কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং বিশেষায়িত পেশায় জনবল সংকট পূরণে সহায়তা করে। তবে সমালোচকদের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই এই ভিসা উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ পদের পরিবর্তে প্রাথমিক স্তরের চাকরিতে দেওয়া হয়।
তাদের অভিযোগ, যদিও এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল মজুরি কমানো বা মার্কিন কর্মীদের স্থানচ্যুতি ঠেকানো, বাস্তবে কিছু প্রতিষ্ঠান চাকরির দক্ষতার স্তর কম দেখিয়ে কম বেতন দিয়ে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেয়—এমনকি যেসব কর্মীর অভিজ্ঞতা বেশি, তাদের ক্ষেত্রেও। বর্তমানে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার নতুন এইচ-১বি ভিসা ইস্যু করা হয়। এর পাশাপাশি মাস্টার্স বা তার চেয়ে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ হাজার ভিসার সুযোগ রয়েছে। সূত্র : আল অ্যারাবিয়া