সোমবার, ০৯ মে, ২০১৬, ০৮:৪২:১১

দু’বার ফেল করা মোদির ডিগ্রি ফাঁস

 দু’বার ফেল করা মোদির ডিগ্রি ফাঁস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ফাঁস হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিএ পাসের প্রশংসাপত্র।  এটা প্রকাশ্যে এনেছে বিজেপি।  

যেমন অরবিন্দ কেজরীবাল, তেমনি নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি।  প্রথমজন হাল না ছেড়ে গত বেশকিছু দিন ধরেই মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একের পর এক গোলা ছুড়ছেন।  

তারই জবাব দিতে গিয়ে সোমবার মোদি শিবির যে তথ্য-প্রমাণ সামনে আনল, তাতে বোঝা গেল তিনি মোটেও হাল ছাড়ার বান্দা নন।  এ অভ্যেস তার দীর্ঘদিনের।

গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় আগেই জানিয়েছিল, এক্সটারনাল’ ছাত্র হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর স্তরে ৬২.৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।  এ বার মোদির স্নাতক স্তরের ডিগ্রি প্রকাশ্যে আনল বিজেপি।

সেখানে দেখা যাচ্ছে, একবার নয়, দু’বার নয়, তিনবার বিএ পরীক্ষা দিয়েছিলেন মোদি।  হাল না ছাড়ার কারণেই শেষে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি।

যদিও কেজরীবাল শিবির এরপরও দাবি করেছে, বিজেপির এ দিনের পেশ করা মার্কশিট এবং সার্টিফিকেটও ভুয়া।

কেজরীবালের গোলা সামলাতে এ দিন দিল্লিতে বিজেপির তরফে রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্ত সার্টিফিকেট পেশ করা হয়।

সেখানে দেখা যাচ্ছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে ‘এক্সটারনাল’ ছাত্র হিসেবে বিএ পাস করেছিলেন তিনি।  ওই বৈঠকে মোদীর মার্কশিট এবং সার্টিফিকেটের কপি হাতে নিয়ে তার সপক্ষে দাঁড়ান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং মোদি সরকারের অন্যতম মুখ অরুণ জেটলিকে।

মার্কশিট সামনে আসতেই দেখা গেছে, ১৯৭৫ সালে ইংরেজি, হিন্দি, ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম পার্টের পরীক্ষায় একবারে উত্তীর্ণ হন মোদি।  পরের বছর একমাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান ছাড়া বাকি তিনটি বিষয়েই ফেল করেন।  

তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৭ সালে পার্ট থ্রির পরীক্ষা পাস করলেও পার্ট টু-এর পরীক্ষায় ইতিহাসে ফের ফেল করেন।  ইংরেজির থেকেও তিনি হিন্দিতে দুর্বল ছিলেন।  অবশেষে ১৯৭৮ সালে গিয়ে সেই ইতিহাসে পাস করেন।  সব মিলিয়ে তৃতীয় ডিভিশনে পাস করেন তিনি।

অরুণ জেটলির যুক্তি, মোদি যখন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সটারনাল ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন দেশে জরুরি অবস্থা।  যারা সেই সময় সক্রিয় রাজনীতি করতেন, অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই তারা পরীক্ষা দিতেন।

মোদির মতো ছাত্রেরা তখন দলের হোল টাইমার ছিলেন।  তার কথায়, ‘‘স্বাভাবিক কাজকর্ম পুরোদস্তুর করেও নিজের পড়াশোনা বজায় রাখা, গুজরাত থেকে দিল্লিতে এসে পরীক্ষা দেয়া, আম আদমির এমন উদাহরণ আর কী হতে পারে!’’

সেই সময় দিল্লিতে এসে যার বাড়িতে থেকে মোদি পরীক্ষা দিতেন, এমন এক ব্যক্তিকেও বিজেপি দফতরে হাজির করানো হয় সাক্ষী হিসেবে।

নরেন্দ্র মোদি কোন ডিভিশনে পাস করেন, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই চলতে পারে না।  কিন্তু ডিগ্রি সামনে আসার পর অরবিন্দ কেজরীবালের দল ফের আসরে নেমে পড়ে, এক এক বছরের মার্কশিটে এক এক রকম নাম থাকায়।

কোথাও নরেন্দ্র কুমার দামোদরদাস মোদি, কোথাও শুধুই নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি।  ১৯৭৭ সালে দু’টি মার্কশিট নিয়েও প্রশ্ন তুলে কেজরীবালের দলের নেতা আশুতোষ বলেন, এই ডিগ্রিও একই রকমের ভুয়া।

কিন্তু এই ডিগ্রি সামনে আসার পর কেজরীবালের নতুন আক্রমণের কী জবাব রয়েছে বিজেপির কাছে? বিজেপির বক্তব্য, উত্তর ভারতে নামের সঙ্গে ‘কুমার’ যোগ করার রেওয়াজ নতুন নয়।

আর নাম বিভ্রাটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু ভুল হতে পারে। কেজরীবালকে তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার সপক্ষে নথিপত্র এত দেরি করে প্রকাশ্যে আনা হলো কেন?

বিজেপি সূত্রের মতে, এমএ পরীক্ষায় প্রধানমন্ত্রী যেখানে প্রথম ডিভিশনে পাস করেছেন, তারপর বিএ-তে তৃতীয় ডিভিশনে পাস করার বিষয়টি সামনে আনা একটু অস্বস্তিকর ছিল।  

তার উপর যখন বেশ কয়েক বার তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন।  কিন্তু আক্রমণের পারদ চড়ার এ বারে সেটিকে সামনে নিয়ে না আসা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।  

দ্বিতীয়ত, অরবিন্দ কেজরীবাল সম্প্রতি মোদির ডিগ্রির সঙ্গে কপ্টার-দুর্নীতিকে জুড়ে বিজেপির সনিয়া-বিরোধী আক্রমণকে ভোঁতা করে দিচ্ছিলেন। যন্তরমন্তরের সভায় তিনি বলেন, মোদি কখনও সোনিয়াকে গ্রেফতার করবেন না।  আর সোনিয়াও মোদির ভুয়া ডিগ্রি নিয়ে সরব হবেন না।  এটা উভয়ের সমঝোতা।

তাই ডিগ্রি-বিবাদ নিষ্পত্তি করে কপ্টার-দুর্নীতিতেই জোর দিতে চেয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।  তৃতীয়ত, উত্তরাখণ্ডে বিজেপি সুবিধাজনক অবস্থায় নেই।  সে দিক থেকে অভিমুখ ঘোরানোও বিজেপির লক্ষ্য ছিল। সূত্র : আনন্দবাজার
৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে