আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে ভারতজুড়ে যখন সমালোচনার ঝড় বয়েছে তখন সেই দেশে এখনও এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে আজও মানুষের মন ছুঁতে পারেনি ধর্ম, বর্ণ। এমনই একটি জায়গার উদাহরণ হল পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর।
শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যেখানে কিছু মন্দির ও মাজারের সামনে সবসময়ের জন্য মোতায়েন রাখা হয় পুলিশ। সেই মেদিনীপুর শহরেই দীর্ঘ ৩২ বছরের বেশি সময় ধরে মাজারের খাদেম থেকে পরিচালক সব হিন্দুরাই। ভক্ত সমাগম হয় সর্বধর্ম নির্বিশেষে। মেদিনীপুর শহরের মণ্ডল মহল্লার সুফি চাঁদসা বাবার মাজারে গেলে চোখে পড়বে এমনই দৃশ্য।
কথিত আছে, ১৯৪০ সালে জেলার মাড়তলা এলাকার বাসিন্দা সুফি হাফেজ় তুফানি চাঁদ নামে এক ব্যক্তি খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে তিনি মানব কল্যাণকামী মতাদর্শ প্রচার করতেন। এক সময় তার খুব কাছের ভক্ত ছিলেন মেদিনীপুরের বড়বাজার এলাকার নামকরা ব্যবসায়ী চমত সেতুয়া। ১৯৮০ সালের ৯ জুন সুফি হাফেজ় তুফানি চাঁদের মৃত্যু হয়। তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন চমত সেতুয়া।
সেতুয়ার কথায়, মহত্বের কারণে সুফি হাফেজ় তুফানি চাঁদ পরিচিতি পান চাঁদশা বাবা নামে। তার আশীর্বাদের অনেকের একাধিক সমস্যার সমাধান হত। মৃত্যুর পরেও তার সমাধি ক্ষেত্রে মানুষের সমাগম কমেনি। পরে সেই সমাধি এমন একটি মাজারে পরিণত হয়, যেখানে সেই আলাদা করে খাদেম বা সেবাইত রাখার প্রয়োজন হয়। চমত সেতুয়া নিজেই সেই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
বর্তমানে এই মাজারের উরুষ উত্সব থেকে সবটাই মুসলিম পদ্ধতিতে হলেও তা পরিচালনা করেন চমত সেতুয়া ও তার বেশিরভাগ হিন্দু সদস্য সম্বলিত পরিচালন কমিটি। বর্তমানে এই মাজার খুবই জাগ্রত বলেই জনশ্রুতি। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মুসলিম উৎসব ছাড়াও প্রতি বৃহস্পতিবার বিশেষ এবাদতের দিন এই মাজারে হিন্দু, মুসলিম ভক্ত সমাগম হয়।
চমত সেতুয়া জানান, ‘এখানে আগত ভক্তদের নিঃস্বার্থভাবেই সহায়তা করা হয়। প্রথমে এই কাজে অনেকেই বাধা দিলেও এখন সবাই সহায়তা করেন।’
এই মাজার পরিচালন কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘দেশের কাছে নজির তৈরি করেছে এই মাজার। যেখানে মানুষ ধর্মের নামে লড়াই করে সেখানে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে এক ছাতার তলায় এনেছে এই মাজার।’
৯ জুন ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস